বাচ্চাদের সর্দির জন্য ৩ টি নাকের ড্রপ খাবার ও প্রতিকার
ছোট বাচ্চাদের সর্দি মূলত একটি সহজাত প্রবৃত্তি। এটি আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে বাচ্চাদের শরীরের কিছু শারীরিক পরিবর্তন হয়ে থাকে। সাধারণত অসুখগুলো প্রায় সময়ে বাচ্চাদের হয়ে থাকে। এটি একটি বিরক্তিকর সমস্যা। এজন্য আমরা বিরক্তিকর এ অবস্থা থেকে বাচ্চাদের সর্দির জন্য নাকের ড্রপ এর ব্যবহার এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো জানবো।
বাচ্চাদের সর্দির জন্য নাকের ড্রপ এর ব্যবহার এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট গুলো জানতে
নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান ক্লিক করুন👇
সূচিপত্র: বাচ্চাদের সর্দির জন্য নাকের ড্রপ এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট
- সর্দি কি?
- বাচ্চাদের সর্দির কারণ
- সর্দিকালীন সময়ে যেসব পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন
- ঘরোয়া পদ্ধতিতে বাচ্চাদের সর্দির প্রতিকার
- বাচ্চাদের সর্দির জন্য নাকের ড্রপ ও ব্যবহার
- বাচ্চাদের সর্দির জন্য সতর্কতা অবলম্বন
- শেষ কথা - উপসংহার
সর্দি কি? সর্দির আক্রমণ
সর্দি, ঠান্ডা জ্বর বা কাশি এগুলো মূলত এক ধরনের সংক্রামক ভাইরাস জনিত রোগ। সর্দি মানব দেহের শ্বাসতন্ত্রের উপর নালীতে বিশেষত নাকে আক্রমণ করে।
সাধারণত আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে শরীরে ঠান্ডা লাগার কারণে নাক থেকে পানি বের হয় এবং অস্বস্তিকর ও অপ্রীতিকর অবস্থা তৈরি হয়। যার ফলে নাক জমাট বেঁধে থাকে তাকে সর্দি বলে।
বাচ্চাদের সর্দির অন্যতম কারণগুলো কি?
সর্দি সাধারণত প্রায় সময়ই ছোট বাচ্চাদের লেগে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম কিছু কারণেও ছোট বাচ্চাদের সর্দি লাগে। আপনারা হয়তো অনেকে জানেন ছোট বাচ্চাদের সর্দির কারণ আবার অনেকেই জানেনা।
সর্দির অন্যতম কারণগুলো হলো: আবহাওয়ার পরিবর্তন, ভেজা পোশাক পড়ে থাকা, ঠান্ডা জাতীয় খাবার খাওয়া, স্যাঁতসাঁতে জায়গায় ছোট বাচ্চাদের খেলা করতে দেওয়া, শীতকালীন সময়ে ছোট বাচ্চাদের গরম পোশাক না পরিয়ে রাখা, বাচ্চা দুধ পান কালীন সময়ে মায়েদের নিয়ম না মেনে চলা ইত্যাদি কারণে বাচ্চাদের প্রায় সময়ে ঠান্ডা বা সর্দি লেগে থাকে।
বাচ্চাদের সর্দিকালীন সময়ে যেসব পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন
সর্দি কালীন সময়ে ছোট বাচ্চাদের কিছু পুষ্টিকর খাবার খেতে দেওয়া প্রয়োজন। এতে করে তাদের শরীরের পুষ্টিগুণ ঠিক থাকে। যেমন এ সময় তরল জাতীয় খাবার খাওয়া। এতে করে বাচ্চাদের সর্দি জমাট বাঁধে না। তরল অবস্থায় থাকে যার কারনে বুকে কফ জমাট বাঁধতে পারে না । এছাড়াও এ সময় বাচ্চাদের চিকেন সুপ খাওয়ানো খুব উপকারী।
চিকেন সুপ খাওয়ানোর ফলে প্রদাহ কমিয়ে বন্ধ নাক উপশম করে থাকে। কারণ কিছু কিছু গবেষণায় দেখা যায় যে, সর্দি কালীন সময়ে ছোট বাচ্চাদের চিকেন সুপ খাওয়ানোর ফলে শ্বাসনালির প্রদাহ কমিয়ে আনতে পারে। এছাড়াও ছোট বাচ্চাদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো অতি জরুরী।
কারণ মায়ের বুকের দুধ এই অ্যান্টিবডি থাকে যার কারনে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এবং দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।
এছাড়াও চা, লেবু, পানির শরবত ও মধু খাওয়ানোর ফলে শরীরে অনেকটাই স্বস্তি বোধ করে। যেহেতু মধু গরম জাতীয় তাই এটি শরীরের পক্ষে অনেক উপকারী। এবং কাঁটা স্থানে মধু লাগিয়ে দিলে তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায় মধুর আরো অনেক গুনাগুন রয়েছে আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে বাচ্চাদের সর্দির প্রতিকার
ছোট বাচ্চাদের নাকের বন্ধ ভাব খুলতে ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করা দরকার। ঘরোয়া পদ্ধতিতে নাকের বন্ধ ভাব খুলতে আমরা শিশুদের সারা শরীরে সরিষার তেল দিয়ে মালিশ করে নিব।
এমনকি যখন নাকে বন্ধ ভাবটা অনেক পরিমাণে বেড়ে যাবে তখন আপনারা বাচ্চাদের নাকে এক অথবা দুই ফোঁটা সরিষার তেল দিয়ে দিলে অনেকটা আরাম ও স্বস্তি পাওয়া যায়।
এবং সরিষার তেল গরম করার সময় লবঙ্গ, রসুন কুচি,মেথি দিলে বেশি উপকারে আসে। গরম তেল ঠান্ডা করে নাকের আশেপাশে, গাল, কান, কপাল, পিঠ এগুলোতে ভালোভাবে মালিশ করতে হবে। মালিশ করলে অনেকটাই আরাম পাওয়া যায়।
এছাড়াও সর্দি থাকাকালীন হালকা কুসুম গরম পানিতে বাচ্চাকে গোসল করাতে হবে। এতে নাকের বন্ধ ভাব খুল খুলবে এবং শ্বাস নিতে সহজ হবে।
আর প্রথম অবস্থায় এরকম ঘরোয়া পদ্ধতি নেওয়া খুবই জরুরী। কারণ ছোট বাচ্চাদের ধৈর্য ক্ষমতায় একটু কম থাকে যা তাদের খাওয়া শ্বাস নেয়ার পক্ষে অনেক কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় । আর এই জন্য আমাদের উপরের ঘরোয়া পদ্ধতি মেনে চলা উচিত।
বাচ্চাদের সর্দির জন্য নাকের ড্রপ এবং ব্যবহার
ছোট বাচ্চাদের যখন বেশি পরিমাণে নাক বন্ধ হয়ে যায় তখন ড্রপ ব্যবহার করতে হবে। ছোট বাচ্চাদের নাকে ড্রপ আলাদা থাকে। শিশুদের নাকে দেওয়ার জন্য যে ড্রপটি ব্যবহার করা হবে সে ড্রপের পরিমাণটা জেনে নিতে হবে।
নাকের ড্রপ ব্যবহারের সাথে সাথে বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগার সিরাপ দেওয়া হয়ে থাকে। এমনকি এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ খাওয়ালে অনেকটাই ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে। কয়েকটি বাচ্চাদের সর্দির জন্য নাকের ড্রপের ব্যবহার নিচে দেওয়া হল :
- নাজাল ড্রপ
- অক্সিমেটাজোলিন নাজাল ড্রপ
- নাজাল স্প্রে
নাজাল ড্রপ: এটি মূলত আইসোটনিক দ্রবন। ইহা নাকের ভেতরের শক্ত মিউকাস পরিষ্কার করে থাকে। এটি বিভিন্ন ধরনের ঠান্ডা জনিত এলার্জিক রাইনাইটিস, সাইনাস ইনফেকশন ইত্যাদিতে নাজাল ড্রপ পরিষ্কার এর কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
অক্সিমেয়েটাজোলিন নাজাল ড্রপ: এই ড্রপটির শিশুদের ক্ষেত্রে ০.০৫ % ও ০.০২৫ % এই ড্রপটি দিনে শিশুদের নাকে ২ থেকে ৩ ফোটা ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও ড্রপটি তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। এটা দুই সপ্তাহের বেশি চিকিৎসা চালানো ক্ষতিকর।
নাজাল স্প্রে: ছোট বাচ্চাদের সর্দি কাশির জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে এ স্প্রে। দিনে মাত্র দুবার, দুই থেকে তিন ফোটা করে ব্যবহার করতে হয়।
(আপনার শিশুর জন্য ড্রপগুলো ব্যবহারের পূর্বে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন)
বাচ্চাদের সর্দির জন্য নাকের ড্রপ এ ওষুধগুলো ব্যবহারের জন্য ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। তাহলে আপনারা আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন এবং সেই পরামর্শ গুলোর সাথে বাচ্চাদের সর্দির জন্য নাকের ড্রপ ব্যবহারে দ্রুত বাচ্চাদের সর্দি সারাতে পারবেন। এবং আরো অন্য ঔষধের প্রয়োজন হলে পেয়ে যাবেন।
বাচ্চাদের সর্দির জন্য সতর্কতা অবলম্বন
ছোট বাচ্চাদের নাকের ড্রপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নাকে ড্রপ যদি নিয়ম অনুযায়ী না দেওয়া হয় তবে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রে বড় ও ছোট বাচ্চাদের সর্দির জন্য নাকের ড্রপ এর কালার একই রকম হয়ে থাকে সে বিষয়ে আমাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ ছোট ও বড়দের নাকের ড্রপের পরিমাপ আলাদা আলাদা হয়ে থাকে।
তাই আপনারা ভুলবশত নাকের ড্রপ যদি উলটপালট হয়ে যায় তবে বাচ্চাদের নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন পেটের সমস্যা, মাথা ব্যথা, খিচুনি, যন্ত্রনা ভাব, অসস্তি বা নাকে শুষ্কতা এসব সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শেষ কথা - উপসংহার
পরিশেষে, আমরা এটাই বলতে পারি যে বাচ্চাদের নাকে ড্রপ ব্যবহার করতে হবে এবং ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো প্রয়োগ করতে হবে তবে সেটি নিয়ম মেনে। কারণ একটি বাচ্চার যদি অনেক সমস্যা দেখা দেয় সে যদি নিঃশ্বাস নিতে বা শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে কষ্টবোধ করে তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বাচ্চাদের সর্দির জন্য নাকের ড্রপ নিতে হবে এবং নিয়ম অনুযায়ী সেটি ব্যবহার করতে হবে।
ধন্যবাদ-Thanks
আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url