পিঠে ব্যথা কিসের লক্ষণ ৪ টি সঠিক কারণ ও সেরা সমাধান

পিঠে ব্যথা কিসের লক্ষণ? পিঠের ব্যথা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে, এদের মধ্যে কোনটি হয়তো তেমন আতঙ্কের ব্যাপার নয়, আবার কোনটি হতে পারে ভয়াবহ কোন রোগের সংকেত। তাই আসুন আজ জেনে নিই পিঠের ব্যথা কিসের লক্ষণ।

image

শরীরের বিভিন্ন স্থানে আমরা নানা রকমের ব্যথা অনুভব করি। এদের বেশিরভাগকেই আমরা সচরাচর তেমন পাত্তা দিই না। আসলে কোন ব্যথাই অকারণে হয় না। প্রতিটি ব্যথার পেছনেই থাকে কোন না কোন কারণ।

সূচিপত্র: পিঠে ব্যথা কিসের লক্ষণ?

পিঠে ব্যথার প্রকারভেদ

পিঠের ব্যথা বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন কারণে ভিন্ন ভিন্ন রকমের ব্যথা দেখা দিতে পারে। তাই পিঠে ব্যথা কিসের লক্ষণ তা বুঝতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে পিঠে ব্যথার প্রকারভেদ। চলুন সেগুলো জেনে নেয়া যাক।

১। তীব্র ব্যথা (Acute): এই ধরণের ব্যথা তীব্র হয়ে থাকে। হঠাৎ উদয় হয়ে বেশ কিছুদিন এমনকি কিছু সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে।

২। আংশিক তীব্র ব্যথা (Subacute): প্রথমটির মতো এটিও আকস্মিক দেখা দিতে পারে কিংবা সময় নিয়ে হতে পারে। তবে এটি প্রথমটির মতো তীব্র নয়। এই ধরণের ব্যথা ৪-১২ সপ্তাহ থাকতে পারে।

৩। ক্রনিক (Chronic): আকস্মিক দেখা দিতে পারে বা ধীরে ধীরে তৈরি হতে পারে। এই ধরণের ব্যথা ১২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়। ক্রনিক ব্যথা প্রতিদিন অনুভূত হয়।

৪। ট্রমাটিক (Traumatic): শরীরে কোন ট্রমা থেকে, যেমন কোন দুর্ঘটনায় আঘাত পেলে, এই ধরণের ব্যথা দেখা দিতে পারে। কী ধরণের ট্রমার মধ্য দিয়ে আপনি গিয়েছেন তার উপরে এই ব্যথার ধরণ নির্ভর করবে।

৫। ক্ষয়জনিত (Degenerative): স্বাভাবিক বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের ক্ষয় হওয়ার ফলে এই ধরণের ব্যথা হতে পারে। এজন্যই আমরা বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরে নানা রকম ব্যথা অনুভব করি।

৬। ইনফেকশনজনিত (Infectious): কোন ইনফেকশনের কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে।

৭। প্রদাহজনিত (Inflammatory): বিভিন্ন প্রদাহজনিত কারণেও পিঠে ব্যথা হতে পারে।

৮। বিপাকীয় (Metabolic): অস্টিওপরোসিস, অস্টিওক্লোরোসিস ইত্যাদি কারণেও পিঠে ব্যথা হতে পারে।

৯। অবস্থানজনিত (Postural): আমরা অনেক সময় এমনভাবে শুয়ে বা বসে থাকি যা পিঠে ব্যথার কারণ হয়। যেমন দীর্ঘসময় ঝুঁকে কম্পিউটার ব্যবহার করা, অস্বাস্থ্যকর পজিশনে অনেকক্ষণ শুয়ে থাকা ইত্যাদি।

উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও আরও নানা কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে। যেমন: ফুসফুসের কোন রোগ, মেরুদণ্ডের সমস্যা ইত্যাদি। পিঠে ব্যথার প্রকারভেদ সম্পর্কে ধারণা রেখে তাই আমাদের সচেতন হতে হবে।

পিঠে ব্যথা কিসের লক্ষণ?

অনেক সময় তা হতে পারে শারীরবৃত্তীয় কোন সমস্যার লক্ষণ। পিঠের ব্যথাও এর ব্যতিক্রম নয়। এটি বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে। তাই পিঠে ব্যথা কিসের লক্ষণ হতে পারে তা আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন। এতে অনেক ধরণের সমস্যা আমরা প্রতিহত করতে পারি। আসুন তাহলে জেনে নিই পিঠে ব্যথা কিসের লক্ষণ?

১। মচকানো (Sprain): আমাদের মেরুদণ্ড একটি হাড় নয় বরং ছোট-বড় অনেক হাড়ের সমন্বয়ে গঠিত। এই ছোট-বড় হাড়গুলো বিভিন্ন লিগামেন্টের সাহায্যে একে-অপরের সাথে যুক্ত থাকে। এই সব লিগামেন্ট যদি কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তাহলে তা আমাদের পিঠে ব্যথার কারণ হতে পারে।

২। পেশিতে টান লাগা (Strain): পিঠের মাংশপেশী বা টেনডনে অনেক সময় টান লাগে। ফলে আমরা ব্যথা অনুভব করতে পারি।

৩। মেরুদণ্ডের সংকীর্ণতা (Spinal Stenosis): যদি কোন কারণে স্পাইনাল ক্যানাল (Spinal Canal) সংকুচিত হয়, তাহলে আশেপাশের এলাকায় তার প্রভাব পড়ে। সুষম্নাকাণ্ড (Spinal Cord) এবং স্নায়ুতে (Nerves) চাপ লাগে। এতে পিঠে ব্যথা হয়।

৪। অস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis): অস্টিওআর্থ্রাইটিস পিঠের নিম্নভাগকে প্রভাবিত করে। তাই যদি পিঠের নিম্নভাগে ব্যথা অনুভব করেন, তাহলে তা হতে পারে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের লক্ষণ।

উপরোক্ত লক্ষণগুলি ছাড়াও পিঠে ব্যথা আরও বিভিন্ন লক্ষণ নির্দেশ করতে পারে।

যেমন: কোন প্রদাহজনিত রোগ, কিডনির পাথর, প্রেগনেন্সী, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, এমনকি মানসিক কোন সমস্যারও বহিঃপ্রকাশ হতে পারে এই পিঠের ব্যথা। তাই পিঠের ব্যথাকে অবহেলা করবেন না। হতেও পারে একে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করলে অনেক মারাত্মক রোগব্যাধি থেকে ভবিষ্যতে বেঁচে যেতে পারবেন।

পিঠে ব্যথা হলে করণীয় কি?

পিঠে ব্যথার প্রকারভেদ জানলাম, পিঠে ব্যথা কিসের লক্ষণ তা-ও জানলাম। কিন্তু এই জ্ঞান কীভাবে কাজে লাগাবো সেটা জানা এখনও বাকি। পিঠে ব্যথা কিসের লক্ষণ তা জানার পাশাপাশি এই লক্ষণকে কীভাবে মোকাবেলা করতে হবে সেটাও আমাদের জানা দরকার। তাই আসুন এবার জেনে নেয়া যাক পিঠে ব্যথা হলে করণীয়।

পিঠের ব্যথা থেকে আরাম পেতে নিচের কাজগুলো করতে পারেন:

১। বরফ এবং তাপ: যদি কোন কারণে পিঠে জোরে আঘাত লাগে, তাহলে তৎক্ষনাৎ আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে বরফ প্রয়োগ করতে পারেন। এতে আশা করা যায় ব্যথা ভয়াবহ হবে না। আঘাত কিছুদিন স্থায়ী হলে সেখানে গরম পানির ব্যাগও ধরে রাখতে পারেন। এতে বিশেষ করে হাড় মচকানোতে বা মাংসপেশির টানে আরাম পাওয়া যায়৷

২। ব্যথার ওষুধ: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথার ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন।

৩। ব্যায়াম: আস্তে আস্তে শরীরকে তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানোর জন্য মৃদু ব্যায়াম করতে পারেন। তবে অতিরিক্ত পরিশ্রম না করাই ভালো। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

৪। ঘুম: শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম দিন। এতে আপনার শরীরের ক্ষয়পূরণ হবে। পিঠে ব্যথা যে কারণে হয়েছে সেটাও আপনার শরীর মোকাবেলা করতে পারবে। ঘুমানোর দোয়া বাংলা অর্থসহ

৫। স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন: স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন আমাদের অনেক সমস্যা থেকেই মুক্তি দেয়। তাই চেষ্টা করুন খাওয়াদাওয়া, ঘুম, কাজকর্ম, ব্যায়াম সবকিছু স্বাস্থ্যসম্মতভাবে করতে। নিজের জীবনযাত্রা করে তুলুন সুশৃঙ্খল।

তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে। পিঠে ব্যথা হলে করণীয় প্রথমেই ব্যথাটা কী কারণে হচ্ছে তা শনাক্ত করা। যদি দেখা যায় কোন রোগ বা সমস্যা আছে, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

সতর্কতা

কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে আমরা পিঠে ব্যথা প্রতিরোধ করতে পারি। যেমন:

১। নিয়মিত ব্যায়াম ও শরীরচর্চা: শরীরকে বিভিন্ন ব্যায়াম ও শরীরচর্চার মাধ্যমে সচল রাখলে অনেক রকম সমস্যা থেকেই আমরা মুক্ত থাকতে পারি। মাংসপেশীতে টান লাগা, লিগামেন্টে সমস্যা হওয়া ইত্যাদির জন্য অনেক সময়ই আমাদের শরীরের দুর্বলতা দায়ী থাকে। নিয়মিত শরীরচর্চা করে যদি শরীরকে মজবুত এবং ফ্লেক্সিবল রাখা যায় তাহলে এ ধরণের সমস্যা থেকে আমরা অনেকটাই নিরাপদ থাকতে পারবো।

২। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: শরীরের ওজন বেশি হলে অনেক সময় হাড়ে এবং মাংসপেশীর উপরে চাপ পড়ে। ফলে শরীরের নানা স্থানে, বিশেষত পিঠে, ব্যথা হতে পারে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে পারেন। দ্রুত মোটা হওয়ার উপায় ১০ টি কার্যকরী টিপস

৩। সঠিক দেহভঙ্গি: আমরা অনেক সময় ঝুঁকে বসে দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে কাজ করি। এ ছাড়াও আরও বিভিন্ন দেহভঙ্গিতে (posture) আমরা শুয়ে-বসে থাকি যা আমাদের দেহের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। তাই বসা বা শোয়ার সময় লক্ষ রাখুন আপনি যে ভঙ্গিতে বসছেন বা শুচ্ছেন সেটা স্বাস্থ্যসম্মত কি না।

৪। অতিরিক্ত দাঁড়িয়ে না থাকা: অতি দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা অনেক সময় শরীরের উপরে বিরূপ প্রভাব ফেলে ও পিঠে ব্যথার কারণ হতে পারে। তাই চেষ্টা করুন অপ্রয়োজনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকার।

৫। পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি: ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের জন্য, বিশেষত হাড়ের জন্য, অতি গুরুত্বপূর্ণ। এদের অভাবে আমরা নানারকম সমস্যায় ভুগতে পারি, হাড় দুর্বল হয়ে সহজেই নানা সমস্যায় পড়তে পারি। তাই চেষ্টা করুন পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম গ্রহণের।

৬। মাদক ও নেশাদ্রব্য পরিহার: মাদক ও নেশাদ্রব্য আমাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল ও অসুস্থ করে দেয়। তাই মদ, সিগারেট ইত্যাদি নেশা ও মাদকদ্রব্য পরিহার করে চলার চেষ্টা করুন।

৭। শরীরকে রিল্যাক্স করুন: অনেক সময় কাজের চাপে আমাদের শরীরের মাংশপেশী ও হাড়ের উপরে প্রভাব পড়তে পারে। ফলে সহজেই টান লাগার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। তাই যোগাসন, ম্যাসাজ ইত্যাদির মাধ্যমে শরীরকে রিল্যাক্স করতে পারেন।

উপরোক্ত সতর্কতাগুলো অবলম্বন করে চললে আশা করা যায় আমরা পিঠে ব্যথা প্রতিরোধ করে একটি কর্মক্ষম, সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবো।

উপসংহার - শেষ কথা

পিঠে ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সর্বদাই এটি কোন জটিল রোগের লক্ষণ হবে তা নয়। তবে অনেক সময়ই এটি কোন অভ্যন্তরীণ সমস্যাকে নির্দেশ করে। তাই পিঠে ব্যথা কিসের লক্ষণ হতে পারে তা জানা থাকা ভালো।

আশা করি আপনাকে আজ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিতে পেরেছি। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যাতে তাঁরাও সতর্ক হতে পারেন। অনেক অনেক শুভ কামনা জানিয়ে আজকের মতো তাহলে এখানেই শেষ করছি। (1214)

Thanks.

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
Comment মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url