বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ৩ টি কারণ চিকিৎসা ও সিরাপ
বাচ্চাদের প্রায় একটার পর আরেকটা অসুখ লেগেই থাকে। এই আর্টিকেলটিতে বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ ও ঔষধ এবং বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার জন্য যে সকল বিষয়গুলো সকল মা-বাবাকে জানা দরকার সে সকল গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে।
আপনার বাচ্চার পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার থেকে সুস্থ করে তুলতে এবং পরবর্তীতে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে এড়িয়ে চলতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়া উচিত।
সূচিপত্র: বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ, পানি শূন্যতা ও চিকিৎসা
নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান ক্লিক করুন।
- লক্ষণ
- কারণ কি?
- পানি শূন্যতার ঘাটতি পূরণ ও চিকিৎসা
- কি খাওয়ানো উচিত?
- কি খাওয়ানো উচিত না?
- সিরাপ ও ঔষধ
- পারিবারিক সচেতনতা
- কখন আপনার শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে কিভাবে বুঝবেন?
- উপসংহার - শেষ কথা
পাতলা পায়খানার জন্য পানি শূন্যতা দেখা দিলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সাধারণত খাবারের মাধ্যমে জীবাণু পেটে প্রবেশ করে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হয়। এই সমস্যা সারিয়ে তোলার জন্য বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ ও চিকিৎসা নিচে দেওয়া হয়েছে।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার লক্ষণ
প্রাপ্ত বয়স্কদের তুলনায় বাচ্চাদের পানি শূন্যতার ভয় বেশি থাকে এই রোগে। সেজন্য বাচ্চার অভিভাবককে সচেতন থাকা জরুরি।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষা দিনে ৩ থেকে ৪ বার নরম অস্বাভাবিক পায়খানা হলে তাকে ডায়রিয়া হিসেবে ধরা হয়। তবে যে সকল বাচ্চা মায়ের বুকের দুধ পান করে তাদের পায়খানা নরম হয়। তবে আপনি খেয়াল করবেন স্বাভাবিকের তুলনায় ঘন ঘন অস্বাভাবিক পায়খানা করলে আপনি বুঝে নিবেন আপনার বাচ্চার ডায়রিয়া হয়েছে।
অনেকেই প্রথম সন্তান লালন-পালন করার সময় অনেক কিছু বুঝতে পারে না। আপনারা আপনাদের সিনিয়র ভাবি, নানি, দাদি, মা ইত্যাদির কাছ থেকে কোন সমস্যা হলে বা সন্দেহ হলে তাদের কাছে জিজ্ঞাস করে সিওর হয়ে যাবেন।
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার কারণ কি?
আপনার বাচ্চার সুস্থতা বজায় রাখার জন্য পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার কারণ গুলো জানা জরুরী। আপনি যদি কারণ গুলো জানেন তাহলে সচেতন থাকতে সুবিধা হবে।
- বাচ্চাদের পেটে জীবাণুর আক্রমণ এবং ইনফেকশন একে (গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস) বলে
- বাচ্চাদের পেটে একটি ভাইরাস আক্রমণ করে এর নাম (নরোভাইরাস) এই ভাইরাসের কারণে বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার হয়।
- এবং বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার হওয়ার কমন কারণ খাবারের মাধ্যমে পেটে জীবাণুপ্রবেশ একে ফুট পয়জোনিং বলে।
সাধারণত এই কারণগুলো থেকে সমস্যা সৃষ্টি হয়। আপনার বাচ্চার খাবারের ফুট পয়জোনিং এর কারণে যেনো সমস্যা সৃষ্টি না হয় সেজন্য সচেতন থাকবেন।
পানি শূন্যতার ঘাটতি পূরণ ও চিকিৎসা
আপনার শিশুর পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে ঘরোয়া ভাবে সারিয়ে তুলতে পারবেন। সেজন্য আপনাকে পানির শূন্যতার দিকে নজর রাখতে হবে। পানি শূন্যতা গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট পানি শূন্যতা যেনো না হয় সেজন্য আপনাকে প্রচুর পরিমাণে তরল পানি এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়াতে হবে। পানি শূন্যতার ঘাটতি পূরণের জন্য যেভাবে বাচ্চাদেরকে পানি পান করাবেন।
শরীরের পানি ও লবণের ঘাটতি মেটাতে পাতলা পায়খানার পর যে সকল শিশুর বয়স দুই বছরের কম তাদেরকে ৫০ মি.লি থেকে ১০০ মি.লি পানি খাওয়াবেন এবং যে সকল বাচ্চার বয়স দুই বছর থেকে দশ বছর তাদের ক্ষেত্রে ১০০ মি.লি থেকে ২০০ মি.লি পানি খাওয়াবেন এছাড়া যে সকল বাচ্চাদের বয়স দশ বছর এর বেশি তাদেরকে ২০০ মি.লি পানির যত বেশি পান করতে পারবে খাওয়াবেন।
আশা করি পানি শূন্যতার ঘাটতি পূরণের জন্য পানি পান করার হিসাব বুঝতে পেরেছেন। পানি শূন্যতা সমাধানের পর এবার পাতলা পায়খানার সিরাপ এবং ঔষধ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ালে আপনার বাচ্চা সুস্থ হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ। তার আগে জেনে নেওয়া যাক কি খাওয়ানো উচিত এবং কি খাওয়ানো উচিত না এবং পানি শূন্যতার লক্ষণ।
- মুখ এবং ঠোঁট শুকিয়ে যায়
- প্রসবের রং গাঢ় হলুদ এবং প্রসাদ থেকে দুর্গন্ধ পাওয়া যায়
- মাথা ঘুরে এবং ঝিমঝিম করে
- চোখ দেখতে শুকনো শুকনো লাগে
- পিপাসা লাগে এবং ক্লান্ত অনুভূতি হয়
এই লক্ষণ গুলো দেখতে পেলে বুঝবেন আপনার বাচ্চার পারমিশূন্যতার ঘাটতি রয়েছে।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে কি? খাওয়ানো উচিত।
সাধারণত আমরা যখন কোন সমস্যার সম্মুখীন হই তখন ভেবে পাইনা কি করব। অনুগ্রহ করে আপনারা মাথা ঠান্ডা রেখে আপনার বাচ্চার যত্ন নিন, ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবে। যে খাবারগুলো খাওয়াবেন।
- আপনার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াবেন এবং প্রয়োজনে বোতলের দুধ খাওয়াবেন।
- যদি বমি করে তাহলে অল্প অল্প করে খাওয়াবেন।
- আপনার বাচ্চা যদি শক্ত খাবার খেতে পারে তাহলে চিড়ার পানি, ডাবের পানি, এবং ভাত রান্না করার সময় ভাত থেকে যে মাড় পাওয়া যায় সেই মাড় এর সাথে হালকা একটু লবণ দিয়ে খাওয়াবেন।
- একেবারে পেট পুরে খাওয়াবেন না, তিন ঘন্টা বা চার ঘন্টা পর পর অল্প অল্প করে খাওয়াবেন। স্বাস্থ্যসম্মত সকল খাবার খাওয়াতে পারবেন।
আশা করি আপনারা বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে কি? খাওয়ানো উচিত তা বুঝতে পেরেছেন। এবার বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে কি? খাওয়ানো উচিত না সেগুলো জেনে নিন।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে কি? খাওয়ানো উচিত না।
অধিকাংশ গ্রাম অঞ্চলে বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে সাদা ভাত আর কলা রান্না খেতে দেওয়া হয়। আসলে এই খাবারগুলো খেলে সমস্যা সমাধান হবে এরকমটা না। আপনি আপনার বাচ্চাকে স্বাস্থ্যসম্মত সকল খাবার খাওয়াতে পারবেন তবে বাজার থেকে ক্রয় করা খাবার যেমন তেলে ভাজা খাবার, জুস কোমল পানীয়, ইত্যাদি বিভিন্ন খাবার পাওয়া যায় সে সকল খাবার গুলো এড়িয়ে চলবেন।
আরো পড়ুন: দ্রুত কাশি কমানোর উপায় ও ১৪ টি ঘরোয়া প্রতিকার
আশা করা যায় উপরে উল্লেখিত খাবার গুলো ও পানি পান করালে এবং বাইরে থেকে ক্রয় করা খাবার গুলো এড়িয়ে চললে নিয়ম অনুযায়ী শিশুর যত্ন নিলে পাতলা পায়খানার সিরাপ ও ঔষধ খাওয়ালে খুব অল্প সময়ে আপনার শিশু সুস্থ হয়ে উঠবে।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ ও ঔষধ
সমস্যা হলে পানি এবং খাবার এর পাশাপাশি সিরাপ ও ঔষধ এর প্রয়োজন। আপনারা বাচ্চার পাতলা পায়খানা সিরাপ হিসেবে এই সিরাপ গুলো খাওয়াতে পারেন।
- Amodis Syrup
- Zox Syrup
- Filmet Syrup
- Nitanid Syrup
- Zinc Syrup
এই সিরাপ গুলো বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ হিসেবে খুব ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়। তবে অবশ্যই আপনারা সিরাপ গুলো নির্দেশনা মেনে আপনার বাচ্চাকে খাওয়াবেন।
সাধারণত ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তবে আপনারা পানি শূন্যতার জন্য স্যালাইন খাওয়াতে ভুলবেন না। উপরে উল্লেখিত নিয়ম অনুযায়ী স্যালাইন খাওয়াবেন যদি ঘরে স্যালাইন না থাকে তাহলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে স্যালাইন তৈরি করে নিন।
যে ওষুধগুলো আপনার শিশুকে খাওয়াবেন না।
- যে সকল বাচ্চার বয়স ১২ বছর এর কম তাদেরকে পাতলা পায়খানার কোন ওষুধ খাওয়াবেন না
- যে সকল ওষুধের গায়ে ASPIRIN (অ্যাসপিরিন) লেখা আছে সে সকল ওষুধ ১৬ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের দিবেন না। (ওষুধে নামের নিচে খেয়াল করুন ASPIRIN লিখা আছে কি)
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন অ্যান্টিবায়োটিক বা বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ দিবেন না।
আশা করি এই তথ্যগুলো আপনাদেরকে সচেতন থাকার জন্য এবং ক্ষতিকর সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য শিশুকে সুস্থ রাখার জন্য কাজে আসবে। এবং আপনারা এই তথ্যগুলো পেয়ে বাস্তবায়ন করলে উপকৃত হবেন।
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার জন্য পারিবারিক সচেতনতা
বাচ্চার পাতলা পায়খানা সারাতে বিশ্রামের প্রয়োজন সেজন্য স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে বাচ্চাকে বাড়িতে রাখুন। মাঠে কিংবা বাড়ির বাইরে খেলাধুলা করতে দিবেন না। সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করার অভ্যাস তৈরি করুন। এবং বিছানা ও জামাকাপড় পায়খানার স্পর্শে আসতে পারে তা লক্ষ্য রাখুন এবং পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করুন।
বাচ্চার সুস্থ হওয়ার পর দুই দিন পর্যন্ত বাড়িতে রাখুন এবং বাচ্চার ব্যবহারিত জিনিসপত্র জীবাণুন নাশক স্প্রে এর মাধ্যমে পরিষ্কার করুন। বাচ্চার ব্যবহৃত জিনিসপত্র অন্যরা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন কমপক্ষে দুই সপ্তাহ। আপনারা যদি সচেতন থাকেন তাহলে রোগ প্রতিরোধ করতে অনেকটাই সহজ হবে।
কখন আপনার শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে কিভাবে বুঝবেন?
আপনার বাচ্চার যদি নিচের লক্ষণ গুলোর মধ্যে কোন একটি দেখতে পান তাহলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।
- পায়খানার সাথে রক্ত বেরিয়ে আসা
- প্রচন্ড পেটে ব্যথা অনুভব করা
- সারাদিনে যদি একবারও প্রসব না হয়
- পানি শূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে (উপরে লক্ষণ গুলো দেওয়া হয়েছে)
- অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে (১০১+ ডিগ্রী জ্বর)
- বাচ্চার শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
আরো পড়ুন: ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ঔষধ ও ৯.৯৯% কার্যকারী রেমেডি
যদি এই কারণগুলো আপনার শিশুর মাঝে দেখতে পান তাহলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।
উপসংহার - শেষ কথা
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ ও ঔষধ, পানি শূন্যতা সহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো তুলে ধরা হয়েছে এবং সমাধান দেওয়া হয়েছে। আপনি যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন তাহলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে বাচ্চার চিকিৎসা নিতে পারবেন এবং বাচ্চার অবস্থা খারাপ হলে ডাক্তারের কাছে নিতে দেরি করবেন না।
ধন্যবাদ-Thanks
আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url