জিংক বি কেন খায় ৭ টি উৎস এবং উপকারিতা ও অপকারিতা

জিংক (Zinc) হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছোট, বড়, বৃদ্ধ, পুরুষ, মহিলা, সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে জিংক। আপনি সম্পূর্ণ এই আর্টিকেলটি পড়লে জিংক বি কেন খায়? উৎস এবং উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আরো তথ্য জানতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

image

সূচিপত্র: জিংক বি কেন খায় ? উৎস এবং উপকারিতা ও অপকারিতা

(নিচের যে অংশ থেকে পড়তেছে ক্লিক করুন)

জিংক মানে কি?

জিংক ইংরেজি শব্দ (Zinc). জিংক একটি খনিজ পদার্থ যা আমাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জিংক থেকে ডিএনএ গঠন, ক্ষত নিরাময়, এবং কোষ বিভাজনের মতো প্রক্রিয়াগুলির জন্য অপরিহার্য। আমাদের শরীরে জিংকের ঘাটতি হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাই এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। জিংক মানে কি? আশা করি উত্তর পেয়েছেন।

জিংক বি কেন খায়?

আপনার হয়তো কেউ কেউ জানেন জিংক একটি ট্রেস মিনারেল এই উপাদানটি আমাদের শরীরের প্রায় সব কোষেই পাওয়া যায়। জিংক আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, প্রোটিন এবং ডিএনএ (DNA) তৈরি, ক্ষত নিরাময় এবং অনেক এনজাইমের কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজন। আশা করি আপনারা জিংক বি কেন খায় উত্তর পেয়েছেন।

নিচে আরো ইনফরমেশন দেওয়া আছে সেগুলো পড়লে আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন জিংক বি কেন খায়?

জিংকের উৎস গুলো কি কি?

আপনি যদি খাবার মেইনটেইন করতে পারেন তাহলে আপনাকে আলাদা করে জিংক ট্যাবলেট জিংক বি সিরাপ কোন কিছুই খাওয়া লাগবে না। এবং সবচাইতে উত্তম হচ্ছে খাবারের মাধ্যমে শরীরের প্রয়োজনীয় জিংক এর চাহিদা পূরণ করা। জিংকের উৎস গুলো কি কি আপনাদেরকে নিচে একটি তালিকা দেওয়া হল।

ক্রমিক নং জিংক এর উৎস উপাদান গুলোর নাম
০১ মাংস গরুর গোস্ত, মুরগির গোস্ত, ভেড়ার গোস্ত, রাজহাঁস এবং পাতিহাঁস এর গোস্ত, কবুতরের গোস্ত
০২ মাছ এবং সামুদ্রিক খাবার ঝিনুক, কাঁকড়া, চিংড়ি, সার্ডিন, ইলিশ, রূপচাঁদা, কোরাল, চেলা, টুনা,ইত্যাদি।
০৩ ডাল মুগ ডাল, মসুর ডাল, ছোলা, মটর, অড়হর, মাষকলাই, খেসারি ইত্যাদি।
০৪ বাদাম এবং বীজ কুমড়োর বীজ, তিলের বীজ, সূর্যমুখী বীজ, কাজু বাদাম,বাদামি বাদাম ইত্যাদি বীজে জিংক পাওয়া যায়।
০৫ ডেয়ারি পণ্য দই, ছানা, মাখন, ঘি, পনির, ইত্যাদি।
০৬ শাকসবজি বাঁধাকপি, মাশরুম, পালং শাক, ব্রকোলি, শিমলা মরিচ, আলু, গাজর, মূলা, ইত্যাদি।
07 ডিম হাঁসের ডিম, মুরগির ডিম, কবুতরের ডিম। ডিমের কুসুমে জিংকের পরিমাণ বেশি থাকে।

জিংক বি কেন খায়? আশা করি বুঝতে পারছেন সেজন্য এই তালিকাটি ফলো করে উপরে উল্লেখিত খাবারগুলো গ্রহণ করলে, আশা করি আপনাকে আলাদা করে জিংক ট্যাবলেট জিংক বি সিরাপ কোন কিছুই খাওয়া লাগবে না। এবং আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার হবে।

জিংক বি সিরাপ এর উপকারিতা

জিংক বি সিরাপ এর সবচাইতে বড় উপকারিতা হচ্ছে আপনি যখন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তখন জিংক বি সিরাপ গ্রহণ করে সমস্যা থেকে পরিত্রাণ বা মুক্ত হওয়া। তবে অবশ্যই অবশ্যই শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে জিংক বি সিরাপ খাওয়াবেন।

এছাড়াও আপনি যদি সচেতনতা অবলম্বন করেন তাহলে খাবারের মাধ্যমে খুব দ্রুত আপনাদের শরীরের জিংক এর অভাব পূরণ করতে পারবেন। (পুষ্টিবিদ আয়শা সিদ্দিকা) বলেছেন উত্তম হচ্ছে খাবারের মাধ্যমে জিংকের চাহিদা পূরণ করা। আশা করি জিংক বি সিরাপ এর উপকারিতা বুঝতে পেরেছেন।

অবশ্যই আপনারা জিংক বি সিরাপ গ্রহণ করবেন জিংক বি সিরাপ এর উপকারিতার জন্য। কিন্তু চেষ্টা করবেন উপরে দেওয়া জিংকের উৎসের তালিকা থেকে জিংক এর চাহিদা পূরণ করার। এছাড়াও আরো জিংক বি ট্যাবলেট খাওয়ার উপকারিতার ১২টা পয়েন্ট দেখে নিতে পারেন।

শিশুদের জিংক সিরাপ এর উপকারিতা

আমরা বড়রা মাছ, মাংস, ডাল, শাকসবজি, ইত্যাদি বিভিন্ন খাবার গ্রহণ করতে পারি কিন্তু শিশুরা এই খাবারগুলো গ্রহণ করতে পারে না। বিভিন্ন সময় তাদের জিংক এর অভাব হয় এবং অভিভাবকের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তখন শিশুদের জিংক সিরাপ খাইয়ে জিংক এর অভাব পূরণ করা হয় নিচে শিশুদের জিংক সিরাপ এর উপকারিতা দেওয়া হলো;

  • শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  • ডায়রিয়া ভালো করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
  • শিশুর বিকাশ এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে
  • শিশুর ক্ষুধা এবং খাবার চাহিদা বৃদ্ধি করে
  • খেলাধুলার সময় বিভিন্ন ক্ষত হয় তা নিরাময় করে জিংক
  • শিশুর মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশে সহায়ক করে
  • শিশুর ডিএনএ এবং প্রোটিন তৈরি করতে সাহায্য করে
  • ত্বকের ডায়পার র‍্যাশ নিরাময় করে ইত্যাদি।

আপনারা যারা জানতেন না জিংক কেন খায়? নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। এবং আপনারা এখন বেশ কিছু শিশুদের জিংক সিরাপ এর উপকারিতা সম্পর্কে অবগত আছেন। কিন্তু আপনাদেরকে চেষ্টা করতে হবে শিশু হালকা তোলা খাবার খেতে শুরু করলে খাবারের মাধ্যমে জিংকের চাহিদা পূরণ করা এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে শিশুকে জিংক সিরাপ খাওয়াবেন।

জিংক এর অপকারিতা গুলো কি কি?

জিংক বি কেন খায়? নিশ্চয়ই এর উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমন অপকারিতাও রয়েছে। উদাহরণ, কোলেস্টেরালের সমস্যা কোলেস্টেরল (HDL) কমে যেতে পারে, যা হৃদযন্ত্রের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায় এছাড়া আরো বেশ কিছু সমস্যা হতে পারে। যেমন,

  • অতিরিক্ত জিংক বি গ্রহণের ফলে বিষক্রিয়া
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
  • ড্রাগ ইন্টার‌্যাকশন
  • পেটের সমস্যার হওয়া
  • স্বাদ এবং ঘ্রাণের অনুভূতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ইত্যাদি।

ড্রাগ ইন্টার‌্যাকশন, মানে অন্যান্য ওষুধের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া উদাহরণ, বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক এবং ডায়রিয়া প্রতিরোধ করার জন্য আমরা যে ওষুধগুলো গ্রহণ করি সেগুলোর কার্যকারিতা কমে যেতে পারে যদি জিংক বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা হয়।

কখনোই প্রয়োজন ছাড়া জিংক ট্যাবলেট বা সিরাপ কোন কিছুই গ্রহণ করবেন না। এবং জিংক গ্রহণ করলেও দীর্ঘসময় গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে জিংক গ্রহণ করুন। আশা করি ড্রাগ ইন্টার‌্যাকশন বাদে বাকি অন্যান্য বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছেন।

জিংকের অভাব কিভাবে বুঝবেন

আপনার শরীরে জিংকের অভাব হলে আপনি নিজে তা অনুভব করতে পারবেন নিচে কিছু নির্দেশনা দিয়ে দিচ্ছি এগুলো আপনার মাঝে অনুভব করলে বুঝে নিবেন আপনার শরীরে জিংকের অভাব হয়েছে।

  1. বিষন্নতা
  2. ক্ষুধা মন্দা
  3. মুখে অরুচি
  4. দুর্বল প্রজনন ক্ষমতা
  5. শরীর ঝিমঝিম করবে
  6. ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়া
  7. চেহারার সৌন্দর্য কমে যাওয়া
  8. দিন দিন ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি।

শিশুদের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষুধা মন্দা ও মুখে অরুচি লক্ষ্য করা যায় এবং ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়া, দিন দিন ওজন কমে যাওয়া, চেহারার সৌন্দর্য কমে যাওয়া এগুলো আপনার শিশুর মাঝে দেখতে পেলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিন।

পুরুষের এবং মহিলা কার জিংক বেশি প্রয়োজন?

image

পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের শরীরে জিংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কিন্তু পুরুষ এবং মহিলার দৈনিক চাহিদা ভিন্ন হতে পারে। উদাহরণ আমরা পাঁচজন ছেলে এবং পাঁচজন মেয়ে কখনোই আমরা ছেলেরা একরকম না এবং মেয়েরাও একরকম না। আমাদের ১০ জনের মাঝে ১০ রকমের চাহিদা রয়েছে কারো ১৪ মিলিগ্রাম কারো ৮ মিলিগ্রাম আবার কারো ১০ মিলিগ্রাম ইত্যাদি।

১. প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের দৈনিক প্রয়োজন প্রায় ১১ মিলিগ্রাম জিংক। কারণ পুরুষের শুক্রাণুর গুণমান এবং টেস্টোস্টেরন হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং পেশি গঠনে জিংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২. অন্তঃসত্ত্বা এবং মা সন্তানকে বুকের দুধ দেয় সে সকল মায়েদের জিংকের চাহিদা বেশি।

৩. প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের দৈনিক প্রয়োজন প্রায় ৮ মিলিগ্রাম জিংক। এবং অন্তঃসত্ত্বা কিংবা মা সন্তানকে বুকের দুধ দেয় সে সকল মায়েদের জিংকের চাহিদা প্রায় ১১ থেকে ১২ মিলিগ্রাম জিংক প্রয়োজন।

জিংক বি সিরাপ খাওয়ার নিয়ম বা গ্রহণের মাত্রা

জিংক বি সিরাপ খাওয়ার উপকারিতা অনেক কিন্তু আমাদের সকলের উচ্চতা, ওজন এবং বয়স ভিন্ন ভিন্ন সেজন্য ডাক্তারের পরামর্শে জিংক বি সিরাপ খাওয়া উচিত। ডাক্তার আপনাকে সরাসরি দেখে বুঝে পরামর্শ দিবে। আমি আপনাকে বলবো কিন্তু আপনার উচ্চতা, বয়স, ওজন, এবং আপনার সমস্যা জেনে ক্যালকুলেশন করে বলতে হবে।

সেজন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিয়ে জিংক বি সিরাপ গ্রহণ করুন। এছাড়াও আপনি যখন বাজার থেকে জিংক বি সিরাপ ক্রয় করবেন তখন সেই প্যাকেটের ভেতর একটি নির্দেশনা থাকবে। জিংক বি সিরাপ প্যাকেটের ভেতরের নির্দেশনাটি দেখে নেওয়া আপনার জন্য উত্তম হবে।

১. প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ১০ মিলি বা ২ চা-চামচ দিনে ২ থেকে ৩ বার গ্রহণ করতে পারেন তবে উত্তম সমস্যা চিহ্ন করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জিংক বি সিরাপ গ্রহণ করা। ২. বাচ্চাদের জন্য প্রতিদিন ১০ মিলি বা ২ চা-চামচ ১ থেকে ৩ বার গ্রহণ করতে পারেন তবে উত্তম সমস্যা চিহ্ন করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জিংক বি সিরাপ গ্রহণ করা। ৩. শিশুদের জন্য প্রতিদিন ৫ মিলি বা ১ চা-চামচ দিনে ১ থেকে ২ বার তবে উত্তম সমস্যা চিহ্ন করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জিংক বি সিরাপ গ্রহণ করা।

জিংক বি ট্যাবলেট সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্তর

জিংক বি ট্যাবলেট কেন খায়?

শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য

জিংক ভেট এর কাজ কি?

প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পোস্টটি চাহিদা পূরণ

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স কখন খেতে হবে?

সকাল, দুপুর, রাত্রি, যে কোন সময় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স প্রাপ্তবয়স্করা ১ থেকে ২ বার খেতে পারবে। ডাক্তারের পরামর্শে খাওয়া উত্তম

প্রতিদিন জিংক ট্যাবলেট খাওয়া যাবে কি?

কিছুদিন নিয়মিত খাওয়া যাবে তবে ধারাবাহিক মাসের পর মাস খাওয়া যাবে না।

জিঙ্কের অভাবে কি কি হতে পারে?

এই আর্টিকেলের তিন নং চ্যাপ্টার (শরীরে জিংক বি এর ঘাটতির লক্ষণ) পড়ুন

এজিংক ভেট এর কাজ কি?

হাড়ের গঠন এবং ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে

রাতে জিংক ট্যাবলেট খাওয়া যাবে কি?

হ্যাঁ

পুরুষদের জন্য জিংক ট্যাবলেট খাওয়া যাবে কি?

হ্যাঁ

উপসংহার - শেষ কথা

এখন আপনি নিজেই খুব সুন্দর করে বলতে পারবেন জিংক বি কেন খায়? এছাড়াও জিংক এর উৎস এবং উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো তুলে ধরা হয়েছে এবং আপনি শুধু খাবারের মাধ্যমেই জিংক এর চাহিদা মেটাতে পারবেন, সে জন্য একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে সব মিলিয়ে (আলহামদুলিল্লাহ)

ধন্যবাদ-Thanks

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
Comment মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url