টিবি রোগের লক্ষণ প্রতিকার প্রাথমিক চিকিৎসা ও ৪ ঝুঁকি
টিবি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের সকলের জানার দরকার কারণ বর্তমান বিশ্বের প্রায় এক চতুর্থাংশ জনগোষ্ঠী এই রোগে আক্রান্ত। তবে উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করলে টিবি প্রতিরোধ এবং প্রতিকার সম্ভব।
এই আর্টিকেলটিতে টিবি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে থাকছে বিশদ আলোচনা। আশা করি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ অবধি মনোযোগ সহকারে পড়লে উপকৃত হবেন। এবং সঠিক গাইডলাইন পাবেন, ইনশাআল্লাহ।
সূচিপত্র: টিবি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার প্রাথমিক চিকিৎসা 4 প্রকারের মানুষ রয়েছেন উচ্চঝুঁকিতে
- টিবি কী
- টিবি কীভাবে মানবদেহে ছড়ায়
- টিবি রোগের ভয়াবহতা
- টিবি রোগের লক্ষণ
- টিবি প্রতিরোধের উপায়
- টিবি রোগের প্রতিকার
- উপসংহার
টিবি কী? (টিবি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার)
টিবি (TB) হলো টিউবারকুলোসিস (Tuberculosis) শব্দটির সংক্ষেপ। এটি ব্যাকটেরিয়াঘটিত একটি সংক্রামক ব্যাধি। টিউবারকুলোসিস মূলত মানুষের শ্বাসযন্ত্রে তথা ফুসফুসে আক্রমণ করে থাকে৷
টিবি আক্রান্ত কোন ব্যক্তি যখন হাঁচি, কাশি দেয় বা থুথু ফেলে তখন এই রোগের জীবাণু এক ব্যক্তির শরীর থেকে অপর ব্যক্তির শরীরে সংক্রমিত হয়। চিকিৎসার মাধ্যমে টিবি নিরাময় করা যায়। কিন্তু সঠিক চিকিৎসার অভাব হলে এটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।
টিবি কীভাবে মানবদেহে ছড়ায়?
টিবি এমন এক রোগ যা বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। কোন টিবি আক্রান্ত ব্যক্তি যদি হাঁচি বা কাশি দেন তাহলে এর মাধ্যমে টিউবারকুলোসিস জীবাণু সুস্থ ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া রোগীর থুথু, রক্ত ইত্যাদি থেকেও টিবি ছড়াতে পারে। কিছু কারণ রয়েছে যার ফলে কোন ব্যক্তির টিউবারকুলোসিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। কারণগুলো হলো:
১। ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তির টিবি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই কারও ডায়াবেটিস থাকলে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
২। এইচআইভি, এইডস, বা অন্য কোন কারণে যদি কারও শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা (immune system) দুর্বল থাকে, তাহলে টিবি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
৩। শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব আছে এমন ব্যক্তি সহজেই টিবির শিকার হতে পারেন। তাই শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, বিশ্রাম, ও ব্যায়াম করে শরীরকে ভালো রাখতে হবে।
৪। ধূমপান, মদ্যপান ইত্যাদিতে অভ্যস্ত মানুষরা টিবির ঝুঁকিতে থাকেন। তাই সকল মাদকদ্রব্য থেকে দূরে থাকতে হবে। এতে করে টিবি ছাড়াও আরও নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকবেন।
টিবির ভয়াবহতা (টিবি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার)
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বিশ্বের প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষ টিবিতে আক্রান্ত। ২০২৩ সালে টিউবারকুলোসিস আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১০.৮ মিলিয়ন মানুষ যাদের মধ্যে ১.২৫ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। এই তালিকায় রয়েছে ৬ মিলিয়ন পুরুষ, ৩.৬ মিলিয়ন নারী, এবং ১.৩ মিলিয়ন শিশু। অর্থাৎ, টিবি সব বয়সের মানুষকেই আক্রান্ত করতে পারে।
টিবির ভয়াবহতার সাথে কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতার মিল রয়েছে। এইচআইভি এবং এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান একটি কারণ হলো টিউবারকুলোসিসে আক্রান্ত হওয়া। বিপুল সংখ্যক মানুষকে ঝুঁকিতে ফেলায় এই রোগকে বর্তমান বিশ্বে একটি মহামারী (epidemic) হিসেবে ধরা হয়৷
টিবি রোগের লক্ষণ গুলো কি?
টিবি কী তা জানলাম, টিবি কীভাবে মানবদেহে ছড়ায় তা জানলাম, টিবি রোগের ভয়াবহতা পড়ে হয়তো একটু ঘাবড়েও গেলাম; তাই এবার আসুন জেনে নেয়া যাক টিবি রোগের লক্ষণ।
প্রথমেই জেনে রাখা দরকার যে সব টিবি আক্রান্ত মানুষের মধ্যেই লক্ষণ প্রকাশ পায় না। অনেকের শরীরে টিবির জীবাণু প্রবেশ করার পরও তারা দিব্যি সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের মতোই চলাফেরা করেন। আসলে খুব কম মানুষের মধ্যেই এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়, বিশেষত শিশুরা ঝুঁকিতে থাকে।
মূলত এ কারণেই টিবি সহজে ছড়িয়ে পড়ে। যেহেতু অনেক মাস টিবির লক্ষণ অপ্রকাশিত থাকে বা প্রকাশ পেলেও তা হয় খুবই স্বল্পমাত্রায়, তাই আক্রান্ত ব্যক্তি না বুঝেই অন্যের দেহে তা ছড়িয়ে দিতে পারেন। তবে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো কারও মধ্যে দেখা গেলে ধরে নেওয়া যায় যে উক্ত ব্যক্তি টিবিতে আক্রান্ত হয়েছেন:
- কাশি: টিউবারকুলোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তির অতিরিক্ত কাশি হতে পারে। অনেক সময় কাশির সাথে রক্তও আসতে পারে।
- বুকে ব্যথা: টিবির আরেকটি লক্ষণ হলো বুকে ব্যথা হওয়া।
- দুর্বলতা: টিবি আক্রান্ত ব্যক্তি দুর্বল অনুভব করতে পারেন। শরীরে শক্তির অভাব দেখা দিতে পারে।
- অবসাদ: অবসাদ বা ক্লান্তিভাব টিবি রোগের আরেকটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ।
- জ্বর: টিবি আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর আসতে পারে।
- ঘাম: টিবি আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর রাতের বেলায় অস্বাভাবিকভাবে ঘামতে পারে।
উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলেই বিলম্ব না করে অতিসত্বর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবেন৷ টিবি একটি ভয়াবহ ব্যাধি। তবে সঠিক সময়ে ভালো চিকিৎসা পেলে রোগী সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন।
টিবি প্রতিরোধের উপায় কি?
কোন একটি রোগ হওয়ার পর তা প্রতিকারের চাইতে ভালো রোগটা যাতে একেবারেই না হয় সেই ব্যবস্থা করা। টিবি সুচিকিৎসায় প্রতিকারযোগ্য। তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে আমরা টিউবারকিউলোসিস থেকে একেবারেই বেঁচে থাকতে পারি। টিবি প্রতিরোধ করতে আমরা এই কাজগুলো করতে পারি:
১। অতিরিক্ত কাশি, জ্বর, বা ওজন কমতে দেখা গেলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এগুলো টিবির প্রাথমিক লক্ষণ। টিবি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া শুরু হলেই যদি রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা করা যায়, তাহলে তা খারাপ আকার ধারণ করবে না।
২। যাদের টিবি হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে, যেমন এইচআইভি আক্রান্ত কিংবা টিবি রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের উচিত টিবি টেস্ট করা। তাহলে রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
৩। TPT বা (Tuberculosis Preventative Treatment) করলে টিবি জীবাণু যদি শরীরে প্রবেশ করেও থাকে তবু তা ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারবে না। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে TPT কোর্স সম্পূর্ণ করতে হবে।
৪। টিবি রোগী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করলে রোগের সংক্রমণ প্রতিহত করা যায়। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করা, মুখে মাস্ক পরা, কারও সংস্পর্শে আসার আগে হাত জীবাণুমুক্ত করা ইত্যাদি সতর্কতা অবলম্বন করলে টিবি সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
উপরোক্ত সতর্কতা অবলম্বন করে টিউবারকুলোসিস সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়।
টিবি রোগ প্রতিকারে আমাদের করণীয়
সঠিক চিকিৎসা পেলে টিবি রোগের প্রতিকার সম্ভব। আপনার উচিত টিবির লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ামাত্র দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হাওয়া।
টিবি রোগের প্রতিকার বিশেষ অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। ডাক্তার রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন। অবস্থা বেশি খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
আরো পড়ুন: কিডনি ড্যামেজের ৬ টি লক্ষণ কারণ প্রতিকার ও প্রতিরোধ
টিবির ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ৪-৬ মাস প্রতিদিন গ্রহণ করতে হবে। কোর্স শেষ হওয়ার আগে কোনভাবেই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা যাবে না। অনেকে কিছুদিন ওষুধ খেয়ে মনে করেন টিবি সেরে গেছে। ফলে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। আপনারা এই মারাত্মক ভুলটি করবেন না।
জীবাণুর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি হতে পারে। যার ফলে একসময় এমন হবে যে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে আর এসব রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব হবে না। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কখনোই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা যাবে না।
উপসংহার - শেষ কথা
বর্তমান বিশ্বে টিবি বা টিউবারকুলোসিস এক আতঙ্কের নাম, তবে এ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জনপূর্বক সঠিক সতর্কতা অবলম্বন করলে আমরা সুস্থ থাকতে পারি। টিবির ভয়াবহতার কথা শুনে ঘাবড়ে গেলে চলবে না, বরং সচেতন হতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা পেলে টিবি নিরাময়যোগ্য। তাই টিবি রোগর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের সকলের বিশদ জ্ঞান থাকা দরকার। আর সেজন্যই আজকের এই লেখা।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) অনুমোদিত তথ্য দিয়ে আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে যাতে পাঠক-পাঠিকারা টিবি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিভ্রান্ত না হয়ে সঠিক তথ্য জানেন এবং এই রোগ থেকে আত্মরক্ষা করতে পারেন। আশা করি লেখাটি সেই উদ্দেশ্য অর্জন করতে সমর্থ হবে। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আজকের মতো তাহলে এখানেই ইতি টানছি। (1214)
ধন্যবাদ-Thanks
আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url