লিভার নষ্টের ১০ টি লক্ষণ ও কারণ এবং চিকিৎসা

লিভার নষ্টের লক্ষণ গুলো আমাদের অবশ্যই জানা দরকার। লিভার কি, লিভারের কাজ কি, লিভার নষ্টের লক্ষণ, কারণ ও এর চিকিৎসা সম্পর্কে জানলে আমরা সহজেই আমাদের লিভারকে ভালো রাখতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

image

সহকারি অধ্যাপক ডা: এম. সাঈদুল হক সহ বেশ কয়েকজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী লিভার সম্পর্কিত তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

এতে করে আপনি খুব সহজেই লিভার নষ্টের লক্ষণ গুলো জানতে পারবেন ও সে অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করে লিভার কে সুস্থ রাখতে পারবেন।

সূচিপত্র: লিভার নষ্টের ১০ টি লক্ষণ ও কারণ এবং চিকিৎসা

(নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান ক্লিক করুন)

মানুষের শরীরের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বড় অঙ্গ হল লিভার। পাঁজরের নিচে এবং পেটের ডান পাশে যার অবস্থান। এটি দেহের গৃহীত খাবারকে প্রসেস করে বিভিন্ন অংশে তা প্রেরণ করে দেহের গঠন, বৃদ্ধি এবং চালিকা শক্তি নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলোর পাশাপাশি দেহের অভ্যন্তরে লিভার আরও অনেক কাজ সম্পাদন করে বিধায় লিভারকে সুস্থ রাখা জরুরি।

যে বিষয়গুলো লিভারের উপর প্রতিকূল বা খারাপ প্রভাব ফেলে সেগুলোই লিভারের রোগ। লিভার নষ্টের লক্ষণ ও কারণ সম্পর্কে যদি পূর্ব থেকে আমরা জানি ও সতর্ক থাকি তাহলে আমরা লিভারের রোগকে প্রতিহত করতে পারবো।

লিভার নষ্টের কারণ

  • লিভারে ফ্যাট জমা হলে
  • ইনজেকশনের একই সুঁচ অনেকে ব্যবহার করা
  • হেপাটাইটিস ভাইরাসের সংক্রমণ
  • মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল জাতীয় পদার্থ গ্রহণ
  • ইমিউন সিস্টেমে কোন সমস্যা হলে
  • বিভিন্ন প্রকার ওষুধের কারণেও লিভারের ক্ষতি হতে পারে

লিভার নষ্টের লক্ষণ

লিভারে কোন সমস্যা আছে কিনা বা লিভার নষ্টের অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে। লিভার নষ্টের লক্ষণ গুলো হলো:

  1. জ্বর
  2. প্রস্রাব হলুদ হওয়া
  3. চোখ, সারা শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করা
  4. দিনে ঘুম ঘুম ভাব ও রাতে জেগে থাকা
  5. বমি বমি ভাব হওয়া, রক্ত বমি হওয়া, মল এর রং কালো হতে পারে
  6. দুর্বল হয়ে যাওয়া,শরীরে কাজ করার শক্তি না পাওয়া, শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করা, অল্প কাজে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া।
  7. বিরক্তি বোধ করা, কারো প্রতি রেগে যাওয়া বা ক্ষেপে যাওয়া, অসংলগ্ন আচরণ করা, অসংলগ্ন কথা বলা।
  8. খাবারে অরুচি দেখা দেয়া, রোগীর কাছে অনেক খাবার থেকে গন্ধ আসে মনে হয় যা তার খারাপ লাগে।
  9. পেটের উপর অংশে ডানদিকে ব্যথা হওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, পেট ফুলে যাওয়া।
  10. শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জ্বালাপোড়া লাগে, পায়ের গিরা অনেক সময় ফুলে যায়, আবার জয়েন্টে ব্যথাও হতে পারে, দেহে পানির স্বল্পতা দেখা দেয়।

লিভার নষ্ট হলে কি হয়?

লিভার নষ্টের লক্ষণ গুলো দেখে সহজে বুঝা যায় যে লিভার খারাপ হয়ে বা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জন্ডিস রোগের লক্ষণ, লিভার সিরোসিসের লক্ষণ, ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ, লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ ইত্যাদি দেখা যায়।

এছাড়াও লিভার নষ্টের লক্ষণ দ্বারা আমরা লিভারের টিউমার, লিভারের পাথর, লিভারের ফোঁড়া ইত্যাদি রোগও হতে পারে বলে ধারণা করতে পারি।

লিভারে কি সমস্যা তা বুঝার উপায়

লিভার নষ্টের লক্ষণ গুলো ছাড়াও দুই উপায়ে লিভারে কি সমস্যা হয়েছে তা বোঝা যায়। যথা :

১. অন্য কোন কিছুর জন্য আমরা যখন ইমেজিং পরীক্ষা করাই যেমন : আল্ট্রাসনোগ্রাম, সিটি স্ক্যান ইত্যাদি তখন লিভার যেহেতু স্ক্যানিংএ আসে তাই লিভারের সমস্যা থাকলে ধরা পড়তে পারে।

২. বিভিন্ন কারণে রক্তের পরীক্ষা করার সময়ও যদি লিভারে সমস্যা থাকে তাহলে তা ধরা পড়তে পারে। হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি ইত্যাদি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়তে পারে।

LFT কি? (Liver Function Test)

LFT কে হেপাটিক ফাংশন প্যানেল, লিভার প্যানেল পরীক্ষা, লিভার প্রোফাইল পরীক্ষা নামেও অভিহিত করা হয়। একটি মানুষের লিভার স্বাভাবিকভাবে কতটুকু ফাংশন করছে তা মাধ্যমে জানা যায়। এই টেস্টে রক্তের টোটাল বিলিরুবিন মাপা হয়। যদি লিভারের কোন সমস্যা থাকে, হেপাটাইটিস এর সমস্যা থাকে তবে বিলিরুবিনের লেভেল স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে।

এছাড়া বিভিন্ন ধরনের এনজাইম মাপা হয় এই টেস্টের দ্বারা। তার মধ্যে SGOT, SGPT, ALF এই এনজাইম গুলো প্রধানত লিভারের কোষ থেকে বেশি তৈরি হয়ে থাকে। লিভারের কোন ক্ষতি বা সমস্যা হলে এই এনজাইম গুলোর লেভেল রক্তে বেড়ে যায়।

LFT দ্বারা সেরাম প্রোটিন দেখা হয়, অ্যালবুমিন দেখা হয়।

লিভার ভালো রাখার উপায়

নাক কান ফোড়ানোর সময়, ট্যাটু আঁকার সময় ব্যবহৃত সুচ সিরিঞ্জ সুতা ইত্যাদি জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করতে হবে।

  • সেলুনে ব্যবহৃত কাঁচি খুর ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে
  • হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সনাক্তকরণ পরীক্ষা সকলের করতে হবে ও টিকা নিতে হবে
  • হাসপাতালে ব্যবহৃত সার্জিক্যাল ডেন্টাল এন্ডোস্কোপির যন্ত্রপাতি অবশ্যই জীবাণুমুক্ত হতে হবে।
  • নিরাপদ রক্ত গ্রহণ করতে হবে
  • অ্যালকোহল বর্জন করতে হবে
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে
  • রাগ হতাশা এগুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে।

লিভার ভালো রাখার ব্যায়াম

লিভার ভালো রাখার বেশ কয়েকটি ব্যায়াম রয়েছে যেগুলো করলে আপনি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে পারবেন যেমন,👇🏻 এছাড়াও ব্যায়াম আমাদের সুস্থ থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাঁতার কাটা

  1. সাইকেল চালানো
  2. প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট হাটা। লিভার সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন দ্রুত হাঁটার অভ্যাস করতে হবে।
  3. শরীরচর্চার জন্য জিমে গেলে ভালো তবে জিমে না গেলেও বিভিন্ন ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম আছে যা আপনি বাড়িতে বসে করতে পারবেন।
  4. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অধিক ওজনের জন্য ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হয়ে থাকে, আপনারা এ বিষয়টার দিকে নজর রাখবেন।
  5. সারাদিন বাসায় বসে না থেকে বিভিন্ন কাজ করতে হবে যাতে কিছুটা শারীরিক পরিশ্রম হয়।

লিভার রোগীর খাদ্য তালিকা

* ফাস্টফুড, জাঙ্ক ফুড, রেস্টুরেন্টের খাবারের পরিমাণ একেবারে সীমিত করে। ঘরের তৈরি খাবার খাওয়া।

* রাস্তার খোলা খাবার, শরবত বা পানি না খাওয়ার চেষ্টা করবেন। ঢেকে রাখা স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং বিশুদ্ধ পানি পান করা।

* সুষম খাবার খাওয়া, অতিমাত্রার শর্করা জাতীয় খাবার পরিহার করা।

* রিফাইন্ড খাবার এড়িয়ে চলা।

* মাছ মাংস চিজ ঘি ইত্যাদি যা প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ও তৈরি সেগুলো খেতে হবে।

* ডার্ক চকলেট, অ্যাভকাডো, বিভিন্ন বাদাম, জলপাই এর তেল ইত্যাদি খেতে হবে

* ভাঁজাপোড়া খাবার কম খেতে হবে

* বিভিন্ন ধরনের ফলমূল যেমন: তরমুজ, আপেল, পেঁপে, কমলা ইত্যাদি খেতে হবে

* বিভিন্ন রঙেয়ের তাঁজা শাকসবজি ও আঁশ জাতীয় খাবার খেতে হবে

* ব্রকলি, গ্রিন টি, কফি ইত্যাদি খেতে হবে।

লিভারের সাথে ত্বকের সম্পর্ক কি?

লিভারের সাথে ত্বকের সম্পর্ক অনেকটা আয়নার মতো। আয়নার দিকে তাকালে যেমন আমরা আমাদের ছবি দেখতে পাই তেমনি ত্বকের দিকে তাকালে আমরা আমাদের লিভার সুস্থ আছে কিনা সেটা অনেক সময় বুঝতে পারি।

লিভারের সমস্যা হলে ত্বক হলুদ হতে পারে ত্বকে ফুসকুড়ি উঠতে পারে ত্বকে চুলকানি হতে পারে হাতের তালু লাল হয়ে যেতে পারে, ত্বকের নিচে মাকড়সার মত চিকন রক্তনালী গুলো দেখা যেতে পারে।

উপসংহার - শেষ কথা

লিভার নষ্টের লক্ষণ এবং লিভারের প্রাসঙ্গিক তথ্যগুলো আমরা যদি জানি এবং লিভার সুস্থ রাখার উপায় গুলো ঠিকভাবে মেনে চলি তাহলে সহজেই আমরা আমাদের লিভারকে ভালো রাখতে পারবো। (1219)

ধন্যবাদ-Thanks

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
Comment মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url