ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ ১৫ টি খাবার তালিকা

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করার জন্য ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা এবং সঠিক খাবার তালিকা জানা আমাদের একান্ত আবশ্যক।

image

ডায়াবেটিস সম্পর্কিত এই বিষয়গুলো জানলে এবং তা যদি সঠিকভাবে মেনে চলা হয় তাহলে ডায়াবেটিস কে কোন রোগই মনে হবে না এবং তা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

সূচিপত্র:ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা ১৫ জাতীয় নিষিদ্ধ খাবার

(নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান ক্লিক করুন)

ডায়াবেটিস একটি বহুল প্রচলিত রোগ যা পুরোপুরি নিরাময় যোগ্য নয়। তবে আমরা এ রোগ কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। একজন মানুষের শরীরে ডায়াবেটিস আছে কি নেই তা ব্লাড টেস্ট এর মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়। শুরুতে অনেকেই এ রোগকে তেমন একটি গুরুত্ব দেন না। সাধারনত অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন যাপন না করার কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস হলে খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন আনতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা এবং সঠিক খাবার তালিকা মেনে চললে বেশিরভাগ রোগীই ভালো হয়ে যাবে। কারো হয়তো বেশি সময় লাগবে আবার কারো কম সময় লাগবে। যাদের বিভিন্ন রোগ হয়ে গিয়েছে, যাদের ইনফেকশন তৈরি হয়ে গিয়েছে তাদের একটু বেশি সময় লাগবে।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিত?

ডায়াবেটিস হলেই যে নির্দিষ্ট কিছু খাবার একেবারে ছেড়ে দিতে হবে বিষয়টি এমন নয়। আপনি একজন ডায়াবেটিস রোগী হলেও পরিমিত পরিমাণে সবকিছুই খেতে পারবেন। ডায়াবেটিস হওয়ার আগে একজন মানুষ দীর্ঘদিন যে খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত থাকে ডায়াবেটিস হওয়ার পরে হঠাৎ করে পুরো খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা খুবই কঠিন হয়ে যায়।

আমাদের খাদ্যাভ্যাসে একটু একটু করে পরিবর্তন আনতে হবে এবং পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। এক্ষেত্রে নিন্মের বিষয়গুলো খুবই গুরুত্ব বহন করে :

  • প্রতিদিন একই রকম খাবার না খেয়ে খাবারে ভিন্নতা বা বৈচিত্র্য আনা দরকার।
  • সকাল দুপুর এবং রাত এই তিন বেলার খাবার প্রতিদিনই নির্দিষ্ট সময় মত খেতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে কী খাচ্ছেন সেটা যেমন খেয়াল রাখতে হবে তেমনি কোন সময় খাচ্ছেন সেটিও খেয়াল রাখতে হবে। দীর্ঘ সময় খাবারে বিরতি দিলে বা খালি পেটে থাকলেই কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ বেড়ে যায়।
  • কিছু খাবার আছে যা পুরোপুরি বাদ না দিয়ে অল্প পরিমাণে খেতে হবে। এসব খাবার যতটা কমানো যায় কমাতে হবে। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি লবণ, বিভিন্ন ধরনের চর্বি জাতীয় খাবার ইত্যাদি।
  • ডায়াবেটিস রোগী ছাড়াও আমরা অনেকেই আছি যারা সকালের নাস্তা টা ঠিকমতো করতে চাই না। আবার দুপুরে এবং রাতে অনেক ভারী খাবার খাই। এই অভ্যাসটি সকলের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ডায়াবেটিস রোগী সহ আমাদের সকলের খাদ্যাভ্যাস হওয়া উচিত এরকম- সকালে ভারী নাস্তা, দুপুরে মাঝারি ধরনের খাবার এবং রাতে হালকা কিছু খেতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

যেসব খাবার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় এবং শরীরের অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করে। আমাদের মধ্যে যারা ডায়াবেটিস রোগী আছেন তারা অবশ্যই এই নিষিদ্ধ খাবার গুলো এড়িয়ে চলবেন-

  1. চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার
  2. লবণ
  3. শুকনো ফল
  4. চা এবং কফি
  5. চিড়া
  6. দুগ্ধ জাত দ্রব্য
  7. প্রক্রিয়াজাত মাংস
  8. প্যাকেটজাত খাবার
  9. অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান
  10. শর্করাযুক্ত সবজি
  11. অস্বাস্থ্যকর খাদ্য বর্জন
  12. চর্বি জাতীয় খাবার
  13. রসালো কিছু ফল
  14. ফার্মের মুরগি
  15. উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচক যুক্ত খাবার

চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার : ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকার প্রথমেই রয়েছে চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার। এই রোগীদের চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এই খাবার গুলো রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা ডায়বেটিসের বিভিন্ন জটিলতা যেমন: হৃদরোগ, কিডনি রোগ, ক্যান্সার এবং স্নায়ুর ক্ষতির ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

তাছাড়া চিনিযুক্ত খাবারে ফাইবারের পরিমাণ একেবারে কম থাকে ফলে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে। চিনি রক্তে শর্করার পরিমাণকে দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। এতে করে ইনসুলিনরের কার্যক্ষমতা কমে যায়। যার ফলশ্রুতিতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা কষ্টকর হয়ে যায়।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন: কেক, মিষ্টি, বিস্কিট, চকলেট, চিনি, মিষ্টি দই ইত্যাদি খাবার বর্জন করতে হবে। এসব খাবার শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে। যা কিনা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই ক্ষতিকর।এগুলো রোগীর শরীরে ডায়াবেটিসের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

লবণ: লবণ খাদ্যের স্বাদ বর্ধনকারী একটি উপকারী উপকরণ। কিন্তু এর উপকারিতার পাশাপাশি কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি অধিক পরিমাণে বাড়িয়ে দিতে পারে।

এছাড়াও স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি রোগ ছাড়াও আরো অনেক রোগের হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের ঘরে রান্না করা খাবার খেতে হবে। বাইরের খাবার বর্জন করতে হবে। লবণের পরিমাণ এবং ধরণ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে।

শুকনো ফল: আমরা জানি ড্রাই ফ্রুট বা শুকনো ফল খুবই স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। শুকনো ফল ফাইবার সমৃদ্ধ এবং ক্ষুধা মেটাতে সাহায্য করলেও এটা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জিং খাবার। কেননা ড্রাই ফ্রুটে থাকা চিনি খুব দ্রুত শোষিত হয় এবং রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

ডায়াবেটিস রোগীদের শুকনো ফল বিশেষ করে খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। ৫০ গ্রাম শুকনো খেজুরে প্রায় ২৫ গ্রাম চিনি এবং ৪৩ গ্রাম কিশমিশে প্রায় ২৫ গ্রাম চিনি থাকে।

চা এবং কফি: দুধ ও চিনি মিশ্রিত চা এবং কফি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয় ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে কঠিন হয়ে যায়। চা এবং কফিতে যে ক্যাফেইন থাকে তা হৃদ স্পন্দনের গতি ও রক্তচাপকে বাড়িয়ে দেয়। এটি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই বিপদজনক হতে পারে।ডায়াবেটিস রোগীদের চা,কফি পানে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দিনে দুইবারের বেশি পান করা যাবে না।

চিড়া: চিড়ায় সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের পরিমাণ খুবই কম থাকায় কিডনি রোগ সহ পেটের বিভিন্ন সমস্যা থেকে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে। কিন্তু এর কিছু অপকারিতা রয়েছে যে কারণে ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা তে একে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

প্রতিদিন চিড়া খেলে শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। এতে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। চিড়াতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকে ফলে নিয়মিত চিড়া খেলে ডায়াবেটিস বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দুগ্ধ জাত দ্রব্য: দুধ একটি আদর্শ খাবার। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন সহ অন্যান্য পুষ্টিগুণ ভরপুর থাকে। আবার দুগ্ধ জাত খাবারে উচ্চমাত্রায় সেচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

প্রক্রিয়াজাত মাংস: প্রক্রিয়াজাত মাংস বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান দ্বারা তৈরি করা হয়। যা তাজা মাংসে থাকেনা। এসব রাসায়নিক উপাদান মানুষের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাজা মাংস ফ্রেশ থাকে এবং পুষ্টিগুণ বজায় থাকে কিন্তু প্রক্রিয়াজাত মাংস বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করায় এর অনেক পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।

তাছাড়া প্রক্রিয়াজাত মাংসে সোডিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। যা বিভিন্ন ধরনের রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়ার অভ্যাস করলে ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

সাধারণত প্রক্রিয়াজাত মাংসগুলো মুখরোচখ হওয়ায় অনেকে তা খেয়ে থাকে। যেমন: হ্যাম, হট ডগ, ডেলি, সালামি,পেপারনি, সসেস, মাংসের কেক, বেকন ইত্যাদি। কিন্তু সুস্থ সবল থাকতে হলে এ খাদ্যগুলো এড়িয়ে চলাই সবার জন্য মঙ্গল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রক্রিয়াজাত মাংস কে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী খাবার হিসেবে ঘোষণা করেছে।

প্যাকেটজাত খাবার: বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত খাবার যেমন: চিপস, প্রক্রিয়াজাত পনির, মিহি পাস্তা, ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, মসলা ইত্যাদি বর্জন করতে হবে।

অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান: ধূমপান, তামাক, জর্দা, অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালকোহল পান বর্জন করতে হবে। এগুলো শুধু ডায়াবেটিস নয় সকল রোগীর ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

শর্করাযুক্ত সবজি: ডায়াবেটিস রোগীদের শর্করা যুক্ত বিভিন্ন সবজি যেমন: আলু, মিষ্টি আলু, গাছ আলু সহ বিভিন্ন প্রকার আলু, মুলা ইত্যাদি খাওয়া বাদ দিতে হবে।

অস্বাস্থ্যকর খাদ্য বর্জন: বিভিন্ন আচরণ অনুষ্ঠানে গেলে খাবার অস্বাস্থ্যকর হলে তা বর্জন করতে হবে।

চর্বি জাতীয় খাবার: তেলেভাজা ও চর্বি জাতীয় খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, শরীরের ওজন বাড়িয়ে দেয় যা ডায়বেটিস সহ হৃদরোগ,ফ্যাটি লিভার এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

চর্বিযুক্ত খাবার যদি খুব কম পরিমাণেও খাওয়া হয় তবুও শরীরে অনেক ক্যালরি যোগ হয়।এ ক্যালরি ওজন বৃদ্ধি এবং ইনসুলিন রোধের কারণ হতে পারে। ঘি, মাখন, মাংসের সাথে লেগে থাকা চর্বি খুবই ক্ষতিকর।

রসালো কিছু ফল: কিছু রসালো ফল আছে যা খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের আরো জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাদের এসব ফলকে এড়িয়ে চলতে হবে। ফলগুলো হল:

  • আম
  • আনারস
  • কলা
  • তরমুজ
  • আঙ্গুর
  • সবেদা

আম: আম পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। এটি একটি রসালো সুস্বাদু ফল। কিন্তু আম রক্তের শর্করাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।

আনারস: স্বাদ, ঘ্রাণ এবং পুষ্টিতে ভরপুর একটি ফল হচ্ছে আনারস। ডায়াবেটিস রোগীরা অতিরিক্ত আনারস খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা কে বাড়াতে পারে। তাই এটি বেশি খাওয়া যাবে না।

কলা: কলা অনেক রোগীদের জন্য উপকারী হলেও ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা তে একে রাখা যায়।এতে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ বেশি। যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

তরমুজ: তরমুজে ফাইবার ও ক্যালোরি কম থাকে কিন্তু কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এটা না খাওয়াই ভালো।

আঙ্গুর: আঙ্গুরে বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকে। এতে শর্করার পরিমাণও অনেক থাকে।

সবেদা: প্রাকৃতিক মিষ্টিতে ভরপুর একটি রসালো ফল হচ্ছে সবেদা।এতে শর্করা বেশি পরিমাণে থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম সবেদাতে ৭ গ্রাম শর্করা থাকতে পারে।

ফার্মের মুরগি: ফার্মের মুরগি যেগুলোকে ট্যানারির বর্জ্য থেকে উৎপাদিত খাবার খাওয়ানো হয়, সয়া খাওয়ানো হয়।

উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচক যুক্ত খাবার: উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচক বা গ্লাইসেমিক ইনডেক্স(জি আই) যুক্ত খাবার যেমন: সাদা চালের ভাত, সাধারণ আটার রুটি, ময়দার রুটি, পাউরুটি, সাধারণ আটা-ময়দা দ্বারা তৈরি বিভিন্ন খাবার, গাজর ইত্যাদি বর্জন করতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার খাওয়া কিভাবে কমানো যায়?

দুধ ও চিনি ছাড়া চা কফি খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। দিনে সর্বোচ্চ এক কি দুই বার চা কফি খেতে হবে।

দোকানের মুখরোচক বিভিন্ন জাঙ্ক ফুড না খেয়ে স্বাস্থ্যকর উপায়ে বাসায় তৈরি করার চেষ্টা করতে হবে।বিভিন্ন ধরনের নাস্তা, সস, মসলা ইত্যাদি বাড়িতে তৈরি করতে হবে। আর এসব কাজ করার যদি আমাদের আইডিয়া না থাকে তাহলে আমরা ইউটিউব থেকে দেখে তা তৈরি করতে পারি।

শুধু জাঙ্ক ফুড নয় সম্পূর্ণ বাড়িতে রান্না করে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। যার ফলে একটি খাবারে কতটুকু লবণ আপনি খাবেন সেটা নিজেই পরিমাপ করতে পারবেন। কাঁচা লবণ খাওয়া যাবেনা। এর পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের মসলা, গোলমরিচ যুক্ত করে খাবারের স্বাদ বাড়াতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগীর সঠিক খাদ্য তালিকা

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা আমরা জেনেছি এবার জানবো সঠিক খাদ্য তালিকা। ডায়াবেটিস রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমান মত অনেক খাবারই খেতে পারবেন। নিন্মে একজন ডায়াবেটিস রোগী কি কি খাবার খেতে পারবেন তা দেওয়া হল:

শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার: যেমন: বাদামি চালের ভাত, বাসমতি চালের ভাত, লাল আটার রুটি, পাউরুটি, কাচঁ কলা ইত্যাদি। আর এগুলো আঁশ জাতীয় খাবার এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।

চর্বি জাতীয় খাবার: রান্না করার ক্ষেত্রে সয়াবিন তেলের পরিবর্তে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে হবে। আর যদি তা না করা যায় তাহলে মেশিনে ভাঙানো সরিষার তেল ব্যবহার হবে।

আরো পড়ুন: রক্তশূন্যতার লক্ষণ সমূহ দ্রুত শনাক্ত ও প্রতিরোধের করুন

ফলমূল: ডায়াবেটিস রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের রঙ্গিন ফলমূল খেতে পারবেন। কিছু ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। সতর্ক থেকে যদি পরিমাণ মতো নির্দিষ্ট সময়ে এসব ফলমূল খান তাহলে তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ভিটামিন সি জাতীয় বিভিন্ন ফল মুসাম্বি, কমলা, কামরাঙ্গা, বরই, অ্যাভাকডো, পিচ,আলু বোখারা, বাঙ্গি, জাম্বুরা, পাকা পেঁপে, আপেল ইত্যাদি ফল ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই উপকারী।

শাকসবজি: শাকসবজি হচ্ছে আঁশ জাতীয় খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ থাকে। ডায়াবেটিস রোগী কম শর্করাযুক্ত খাদ্য হিসেবে মাশরুম, শসা পালং শাক বাঁধাকপি ফুলকপি, ব্রকলি, লেটুস ইত্যাদি খেতে পারেন। এছাড়াও পটল, চিচিঙ্গা, চাল কুমড়া, লাউ, পেঁপে, সজনে ডাটা, থোর, মোচা, বেগুন, ঢেঁড়স, করলা, ডুমুর, বিনস, আদা, পেঁয়াজ, ক্যাপসিকাম, টমেটো ইত্যাদি খেতে পারেন।

প্রোটিন: মাছ মাংস ডিম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। এগুলো পরিমাণ মত খেতে হবে। সামুদ্রিক মাছ সহ বিভিন্ন ধরনের তৈলাক্ত মাছ খেতে হবে। এসব মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ থাকে যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ডায়াবেটিস রোগী তার সকালের নাস্তায় বাদাম রাখতে পারেন, লাল মাংসের পরিবর্তে ডাল খেতে পারেন। কম তেল মসলায় রান্না করা খাবার খেতে হবে।ডিম যে কোন ভাবেই রান্না করে খাওয়া যেতে পারে।

দুধ ও দুগ্ধ জাত খাবার: আমরা পূর্বেই জেনেছি দুধ একটি আদর্শ খাবার। এতে অনেক ধরনের পুষ্টিগুণ আছে। ডায়াবেটিস রোগী ইচ্ছা করলে সতর্কতা অবলম্বন করে অনেক দুগ্ধ জাতীয় খাবার খেতে পারেন। পরিমাণ মতো দুধ, গাজর ও শশার সাথে মিলিয়ে পনির, টক দই ইত্যাদি খেতে পারেন।

উপসংহার - শেষ কথা

পরিশেষে বলা যায়, দিন দিন ডায়াবেটিসের রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা পুরোপুরি নিরাময় যোগ্য নয়। কেবল কিছু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে এবং শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন যাপনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

ডায়াবেটিস রোগীকে ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা এবং সঠিক খাবার তালিকা অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে, জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনতে হবে। তবেই তার ডায়াবেটিস সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণে থাকবে। (1219)

ধন্যবাদ-Thanks

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
Comment মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url