ডেঙ্গু রোগ নিরাময় ও প্রতিকার ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস

সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু এক আতঙ্কের নাম সেজন্য ডেঙ্গু রোগ নিরাময় ও প্রতিকার সম্পর্কে জানান জরুরী, মশাবাহিত এই রোগটি প্রতিবছর শত শত মানুষকে আক্রান্ত করে, অনেকের মৃত্যুও ঘটায়। তাই ডেঙ্গু কী, ডেঙ্গু রোগের কারণ ও লক্ষণ, ডেঙ্গু রোগ নিরাময় ও প্রতিকার নিয়ে এই আর্টিকেল।

image

আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আশা করি ডেঙ্গু সম্পর্কে সঠিক গাইডলাইন পাবেন।

সূচিপত্র: ডেঙ্গু রোগ নিরাময় ও প্রতিকার ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস

ডেঙ্গু কী? (মশাবাহিত ব্যাধি বা রোগ)

ডেঙ্গু হলো একটি মশাবাহিত ব্যাধি। মশা থেকে রোগটি মানুষের শরীরে ছড়ায়। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে এই রোগটির প্রাদুর্ভাব বেশি। বাংলাদেশ একটি গ্রীষ্মপ্রধান দেশ যেখানে ঝোপঝাড়, বদ্ধ জলাশয়, এবং নোংরা পরিবেশে মশা ব্যাপক মাত্রায় বংশবিস্তার করে।

ফলে এখানে প্রতিবছরই ডেঙ্গুর আধিক্য দেখা দেয়। তাই ডেঙ্গু রোগের কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে জানা থাকলে এই ভয়াবহ রোগ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।

ডেঙ্গু কীভাবে মানবদেহে প্রবেশ করে?

ডেঙ্গু রোগের কারণ সম্পর্কে জানা হলো এই রোগ থেকে আত্মরক্ষার পূর্বশর্ত। পূর্বেই বলেছি এটি একটি মশাবাহিত রোগ। মূলত এডিস মশা হতে এটি ছড়িয়ে থাকে।

এরা স্ত্রী মশা যারা বংশবিস্তারের জন্য মানুষের রক্ত পান করে থাকে। আর এই প্রক্রিয়াতেই মানবদেহে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। মূলত দুই ধরণের এডিস মশা মানবদেহে ডেঙ্গু প্রবেশ করায়। একটি হলো Aides aegypti এবং অপরটি Aides albopictus। এরা চার ধরণের ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ায়:

  • DENV-1
  • DENV-2
  • DENV-3
  • DENV-4

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ (সতর্কতাই অবলম্বন)

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ তাৎক্ষণিকভাবে বোঝা কঠিন। অনেক ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের মধ্যেই প্রাথমিকভাবে কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এ কারণেই রোগটি এতো ভয়াবহ। কারণ লক্ষণ বোঝা না যাওয়ার ফলে অনেকসময় আক্রান্ত ব্যক্তি কোন সতর্কতাই অবলম্বন করেন না। তবে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ একবার প্রকাশ পেলে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা যায়:

১। উচ্চতাপমাত্রা, ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে শুরুর দিকেই উচ্চ তাপমাত্রা দেখা দেয়। শরীরে অস্বাভাবিক মাত্রার জ্বর আসে যার ফলে তাপমাত্রা ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রী পর্যন্ত যেতে পারে।

২। মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, মাংসপেশী ব্যথা: ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা হয়। যেমন কপালে বা মাথায়, চোখের পেছনে, এছাড়া মাংসপেশীতে। এরকম নানা ব্যথার দরুণ এই রোগকে ব্রেকবোন ফিভারও (break-bone fever) বলা হয়ে থাকে।

৩। বমি বমি ভাব, বমি অথবা বমি বমি ভাবও ডেঙ্গু রোগের একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ।

৪। ত্বকে লালচে ভাব বা র‍্যাশ, রোগীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে লালচে দাগ দেখা দিতে পারে।

৫। ক্লান্তিভাব বা দুর্বলতা, ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি দুর্বলতায় ভুগতে পারেন। শরীরে ক্লান্তিভাব দেখা দিতে পারে।

৬। রক্তপাত, ডেঙ্গুর ফলে রক্তে অণুচক্রিকা (platelets) কমে যায়। অণুচক্রিকা যেহেতু রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে, তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তপাত শুরু হলে সহজে থামতে চায় না।

৭। হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ, এছাড়া অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপও ডেঙ্গু রোগের একটি লক্ষণ।

ডেঙ্গু রোগের কারণ গুলো কি?

ডেঙ্গু রোগের কারণ সম্পর্কে শুরুতে কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে যে মূলত মশা থেকে এই রোগটি ছড়িয়ে থাকে। তবে বিস্তারিত জানা থাকলে এই ব্যাধি থেকে আত্মরক্ষা করা সহজ হয়। নিম্নে ডেঙ্গু রোগের কারণ তুলে ধরা হলো:

১। বাড়ির আশেপাশে ঝোপঝাড় এবং নোংরা পরিবেশ থাকলে ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। কারণ এরকম পরিবেশে মশারা বংশবিস্তার করে থাকে।

২। নর্দমা, ডোবা, ফুলের টব ইত্যাদিতে পানি জমে থাকলে সেখানে ডেঙ্গুবাহী মশা ডিম পাড়ে। ফলে ডেঙ্গু ছড়াতে পারে।

৩। মশার কামড় সম্পর্কে অসচেতন থাকলে সহজেই শরীরে ডেঙ্গু প্রবেশ করতে পারে।

৪। ঘরে মশারি না টাঙ্গিয়ে ঘুমালে মশার কামড়ে ডেঙ্গু হতে পারে।

৫৷ ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। রোগীর লালা, রক্ত ইত্যাদি হতে নীরোগ ব্যক্তির শরীরে এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

৬। সঠিক বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা এবং সতর্কতা অবলম্বন না করে নানা কুসংস্কারে বিশ্বাস করে চললে শুধু ডেঙ্গুই না, আরও নানা রোগবালাই হতে পারে।

উপরোক্ত পয়েন্টগুলোই মূলত ডেঙ্গু রোগের কারণ। অর্থাৎ সংক্ষেপে বললে বলা যায়, মূলত এডিস মশার কামড় এবং ডেঙ্গু রোগী হতেই ডেঙ্গু ছড়িয়ে থাকে। তাই মশার কামড় থেকে বেঁচে থাকতে হবে, আর কারও শরীরে ডেঙ্গু ধরা পড়লে তাকে আলাদা ঘরে রেখে পরিচর্যা করতে হবে। এবং অতি অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার এবং পুষ্টিকর খাবার

ডেঙ্গু রোগীকে বেশি বেশি ফলমূল এবং ফ্লুইড খেতে বলা হয়। কারণ এই রোগে শরীরে ক্ষয় দেখা দেয়, অণুচকণিকার অভাব হয়। তাই বেশি বেশি স্যালাইন, ফলমূল, এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ডেঙ্গু হলে আগে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

ডাক্তার রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ওষুধ দিতে পারেন। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত নিজে নিজে কোন ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। ডেঙ্গু অতি দ্রুত অতি খারাপ অবস্থা ধারণ করতে পারে। তাই ডেঙ্গু সন্দেহ হওয়ামাত্র রোগীকে অবিলম্বে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

ডেঙ্গু রোগ নিরাময় ও প্রতিকার (সতর্কতা)

কথায় আছে, “প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধ উত্তম” ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রেও কথাটি খাটে। রোগ হওয়ার পর এর চিকিৎসা করার চাইতে ভালো রোগটা যদি একেবারেই না হয়। তাই বিভিন্ন সতর্কতা অবলম্বন করে আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে পারি। যেমন:

১। মশার কামড় থেকে বেঁচে থাকা: ডেঙ্গু যেহেতু মশার কামড় থেকেই ছড়ায়, তাই লক্ষ্য রাখতে হবে মশা যেন আমাদের না কামড়াতে পারে। এক্ষেত্রে ঘরে মশার কয়েল, মশারি ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। লক্ষ্য রাখতে হবে শরীরে মশা বসছে কি না। অনেক সময় ডেঙ্গুবাহী মশার কামড় আমরা বুঝতে পারি না। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

২। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: ঝোপঝাড়, নর্দমা, জমে থাকা পানি ইত্যাদি স্থানে মশারা ডিম পাড়ে। তাই বাসস্থানের আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঝোপঝাড় কেটে সাফ রাখতে হবে, নর্দমা পরিষ্কার রাখতে হবে, কোন পুকুর বা ডোবা থাকলে সেগুলোও পরিষ্কার করতে হবে।

এছাড়া বাড়ির আশেপাশে কোথাও পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পরিত্যক্ত টব, বোতল ইত্যাদিতে পানি জমে থাকতে হবে৷ এদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

আরো পড়ুন: হাত ঝিনঝিন করার ঔষধ করণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ১০ টি পয়েন্ট

৩। বিজ্ঞানসম্মতভাবে চলা: কুসংস্কারে বিশ্বাসী না হয়ে ডেঙ্গু সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জ্ঞানলাভ করতে হবে৷ ডেঙ্গু হয়েছে এমন আশঙ্কা করলে অবিলম্বে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে আলাদা ঘরে বা হাসপাতালে রাখতে হবে।

এছাড়া প্রতিবার খাওয়ার আগে, বাইরে থেকে আসার পরে, মানুষের সাথে মেলামেশার পরে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত মাজার মতো অভ্যাসও করা ভালো। এতে শুধু ডেঙ্গুই না, আরও নানারকম অসুখবিসুখ থেকে বাঁচা যায়।

৪। পরিবেশের যত্ন নেওয়া: পরিবেশে নানারকম উদ্ভিদ এবং প্রাণী থাকে যারা আমাদের বিভিন্ন রোগবালাই থেকে বাঁচায়৷ যেমন বেজি সাপ খেয়ে সাপের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে, কাক ময়লা-আবর্জনা খেয়ে প্রকৃতিকে পরিচ্ছন্ন রাখে ইত্যাদি। তেমনই কিছু বাদুড় মশা খেয়ে পরিবেশে মশার উৎপাত নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে আমাদেরই মঙ্গল।

কাজেই পরিবেশের যত্ন নিতে হবে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাছপালা কাটা, পশুপাখিদের ইচ্ছামতো হত্যা করা, তাদের বাসস্থান ধ্বংস করা, পরিবেশে বিষাক্ত উপাদান ছড়ানো ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে। নতুবা ডেঙ্গু এবং এর চাইতেও ভয়াবহ নানা রোগ থেকে আমাদের বাঁচার সম্ভাবনা কমে যাবে।

উপসংহার - শেষ কথা

ডেঙ্গু একটি মারাত্মক মশা-বাহিত রোগ তবে ডেঙ্গু রোগের কারণ ও লক্ষণ জেনে পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন করে চললে এই রোগ থেকে আমরা বেঁচে থাকতে পারি। যেকোন রোগ থেকে রক্ষা পেতে সঠিক জ্ঞানের বিকল্প নেই।

তাই এই আর্টিকেলটিতে আমি চেষ্টা করেছি আপনাদের ডেঙ্গু রোগের কারণ ও লক্ষণ এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করতে। আশা করি আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকলে আপনারা এই ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। শুভ কামনা সবার জন্য। (1214)

ধন্যবাদ-Thanks

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
Comment মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url