বারাকাহ অর্থ কি এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো
বারাকা শব্দের অর্থ বরকত। আমাদের জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে কোন জিনিস যখন পেয়ে থাকি তখন সেটাতে বারাকা নেমে আসে, যেমন: এক পেয়ালা দুধ ৭০-৮০ জন সাহাবী তৃপ্তি সহকারে পান করেছে, আমাদেরঅল্প ধন সম্পদে, অল্প সময়ে অনেক কিছু করতে পারি কেনো? বারাকার জন্য, চলুন জেনে নিই কি করলে আমাদের জীবনে বারাকা নেমে আসবে।
বারাকা পেতে আমাদেরকে মাত্র ১২ কি কাজ করলেই আমাদের জীবনে বারাকা নেমে আসবে ইনশাআল্লাহ। আমরা যেন বুঝতে পারি সেই জন্য সেদিকে খেয়াল রেখে বিষয়গুলো সংক্ষেপে আলোচনা করি।
পেজ সূচিপত্র: বারাকাহ অর্থ কি?
- তাকুয়া আল্লাহর ভয়
- কুরআনের সাথে সম্পর্ক
- সুন্নাহ অনুসরন করে বারাকা
- ইস্তেখার করা
- কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা
- সততা, এবং দান
- একসাথে খাবার খাওয়া
- আত্মীয়তার সম্পর্ক
- সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা
- বিয়ে করা
- সালাম দেওয়া
- বরকতের জন্য দোয়া করা
- শেষ কথা
১ নং, তাকুয়া ২ নং, কুরআনের সাথে সম্পর্ক ৩ নং,সুন্নাহ অনুসরন করে ৪ নং, ইস্তেখার করা ৫ নং, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ৬ নং, সততা, এবংদান ৭ নং, একসাথে খাবার খাওয়া ৮ নং, আত্মীয়তার সম্পর্ক ৯ নং, সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা ১০ নং, বিয়ে করা ১১ নং,সালাম দেওয়া ১২ নং, বরকতের জন্য দোয়া করা।
তাকুয়া বা আল্লাহর ভয়
তাকুয়া মানে আল্লাহ তাআলার ভয়, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সর্বক্ষণ দেখছেন আমরা কখন কি করছি কখন খাচ্ছি কখন ঘুমোচ্ছি কখন মানুষকে গালিগালাজ করছি কখন মানুষকে ভালো কথা বলছি ইত্যাদি।
ধরুন আপনি একটি অফিসে ঢুকলে সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে আপনি কি সেখানে কোনো অনৈতিক কাজ করবেন, অবশ্যই না। কেননা আপনি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায়। ঠিক তেমনি আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দেখছেন। ঠিক যেমন অফিসে আমরা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় । তাকওয়া বারাকা লাভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আল্লাহর আজাব খুবই ভয়ঙ্কর আমরা সহ্য করতে পারব না, তাই বলি প্রিয় ভাই ও বোনেরা আমরা সকলেই আল্লাহর আযাবের ভয়ে কোন খারাপ কাজ করতে পারি না। তার পরেও যদি হয়ে যায় আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু আমরা কখনো হতাশ হবো না আল্লাহর উপর ভরসা রাখ সব সময় সর্বক্ষণ । আল্লাহ তাআলা আমাদের উপর বারাকা দিবেন ইনশাল্লাহ।
কুরআনের সাথে সম্পর্ক
আমরা অনেকেই জানি কোরআন সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব স্বয়ং আল্লাহতায়ালার বাণী, কোরআনের সাথে যেই লাগে তার মান বেড়ে যায়, হযরত জিবরাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরআন নিয়ে এসেছেন তাই তিনি হয়েছেন সম্মানিত একজন ফেরেশতা। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর কোরআন নাজিল হয়েছে তাই তিনি হয়েছেন শ্রেষ্ঠ নবী।
কোরআনের সাথে কাপড় লাগলে কাপড়ের মান বেড়ে যায় কাঠের রেহেল লাগলে রেহেলর মান বেড়ে যায়। এরকম অনেক উদাহরণ আপনারা জানেন, তাই আমরা বেশি বেশি কোরআনের সাথে সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
কুরআনের সাথে সম্পর্ক এটি কত যে মধুর সম্পর্ক এবং কোরআনের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারা কত বড় নিয়ামত বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তাই আমাদেরকে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে এবং বোঝার চেষ্টা করতে হবে, তাহলে আমাদের জীবনে বারাকা নেমে আসবে।
সুন্নাহ অনুসরন করে বারাকা
রাসুলের আদর্শ তার দেখানো পথ আমাদের কাছে হিরা মনি মুক্তার চেয়েও অনেক বেশি দামি এত টাই দামি যে পৃথিবীর কোন কিছু দিয়ে ভাব প্রকাশ করতে পারবো না তার চরিত্রকে আল্লাহ তাআলা আজিম উপাধি দিয়েছে যার কোন শেষ নেই।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য অনেক বড় নিয়ামত আমাদের অনুপ্রেরণা আশার আলো সেই আলোর পথে আমাদের জন্য বারাকা রয়েছে।
ইস্তেখার করে মুস্তাজাবুদ দাওয়া হওয়া যায়
আমরা বেশি বেশি ইস্তেখার করব। ইস্তেখার করলে মুস্তাজাবুদ দাওয়া হওয়া যায় ,আল্লাহর পছন্দের বান্দা হওয়া যায়, এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় ইস্তেখার মাধ্যমে বারাকা নেমে আসে।
দেখবেন কখনো কখনো এমন হয় আপনি আশা করেননি যে এটা আপনি পাবেন কিংবা এটা হবে তখন বুঝে নিবেন অবশ্যই বারাকা নাযিল হয়েছে না হলে এটা সম্ভব নয়।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা
বেশি বেশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন আল্লাহর প্রশংসা করবেন নিজেকে ছোট নগণ্য মনে করবেন আল্লাহ তাআলার কাছে ধৈর্যশীল হবেন অবশ্যই আপনার জীবনে বারাকা নেমে আসবে ইনশাআল্লাহ।
সততা, এবং দান
{সততা}যেকোনো কাজ, কিংবা ব্যবসা, লেখাপড়া, সততার সাথে চলবেন আল্লাহর পছন্দনীয় বান্দা হতে পারবেন রাসুলের আদর্শ অনুসরণ করবে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিটি জায়গায় বারাকা নেমে আসবে আপনার প্রত্যাশা চাইতেও বেশি কিছু পাবেন।
{দান} আমাদের সম্পদবৃদ্ধি করে দেয় এবং যারা গোপনে দান করে তাদের দান আল্লাহ তাআলা কাছে খুবই প্রিয় কাল কেয়ামতের ময়দানে যারা গোপনে দান করেছে তাদের দান এত পরিমান বৃদ্ধি করবেন যে সে বিশ্বাস করতে পারবে না যে এটা আমার দান।
আল্লাহ তাআলা দান সম্পর্কে আরো বলেছে {সূরা বাকারা ৩৪ নম্বর রুকু ২৫৪ নম্বর আয়াত}
একসাথে খাবার খাওয়া
খাবার খাওয়ার সময় এক সাথে খাবার খাওয়া, যে খাবারে একসাথে অনেকগুলো হাত পড়ে সেই খাবার আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দনীয় খাবার খাওয়ার সময় আরেকটি আমরা ভুল করে থাকি অনেকেই মাঝখান থেকে খাওয়া শুরু করে খাবার খাওয়ার সময় একধার থেকে খাবার খাব কেননা খাবারের মাঝখানে বারাকা নাযিল হয়।
বারাকা লাভের জন্য খাবার সময় পরিবার কিংবা বন্ধু বান্ধবী একসাথে খাবার খাব এবং এক ধার থেকে খাওয়া শুরু করব শুরুতে বিসমিল্লাহ এবং খাওয়ার শেষে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করব আলহামদুলিল্লাহ। খাবার খাওয়ার সময় কিছু নিয়ম-কানুন মেনে আমরা বারাকা লাভ করতে পারব।
আত্মীয়তার সম্পর্ক
আমরা আমাদের আত্মীয়দের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখবো, তাদের খোঁজ খবর নিব তারা কেমন আছে না আছে। আমরা যারা দেশের বাইরে আছি তারা মোবাইলে খোজ খবর নেব এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে।
সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা
এশার নামাজ পড়ে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে যাবো খুবই তাড়াতাড়ি কেন আমরা সকাল সকাল উঠতে পারি। সন্ধ্যারাতে ঘুমিয়ে গেলে শরীরের জন্য অনেক উপকার রয়েছে। (ঘুমানোর দোয়া বাংলা অর্থসহ নং ২৩ আয়াত)
সকালের যেকোনো কাজে অনেক বরকত রয়েছে আমাদের রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম সকালে ঘুমাতেন না, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কাজ করলে কাজ বারাকা পাওয়া যাই।
বিয়ে করার মাধ্যমে বারাকা
আমাদের জন্য বিয়েতে ৫০ পার্সেন্ট মার্ক রয়েছে। একবার কি ভেবে শুধু বিয়েতেই ৫০পার্সেন্ট মার্ক ।বিয়ে আমাদের জন্য বরকত বই নিয়ে আসে আমাদের চরিত্র কে হেফাজত করে আমাদেরকে একটিভ করে তুলে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে বিয়ের মাধ্যমে আমাদের জীবনে বারাকা নেমে আসে।
বিয়ে আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যার মধ্য দিয়ে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আগমন ঘটে বিয়েতে বারাকা অত্যন্ত প্রয়োজন বিয়ের পর অনেকেই জীবনের সফলতা অর্জন করেছে কিন্তু আমরা বিয়ের আগেই সফলতার পিছে ছুটতে ছুটতে সময় শেষ করে দিন
সালাম দেওয়া
মানুষের সাথে দেখা হলে সালাম দিন সালাম একটি পবিত্র বাক্য আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহু সালাম অর্থঃ আপনার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। আমাদের আল্লাহর রহমত ছাড়া কিছু আশা করতে পারি না। সালামের মাধ্যমে আমরা বারাকাল্লাহ করতে পারি।
আরো পড়ুন: ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি ও ভয়াবহতা
বরকতের জন্য দোয়া করা
বরকতের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করতে হবে হে আল্লাহ তুমি আমার জীবনে বারকা নাজিল করেন। আপনি ছাড়া তো আমার আর কেউ নেই আমি ছাড়া আপনার অনেক বান্দা রয়েছে আমি আপনার অধম গোলাম বান্দা আমার জীবনে আমার ধন-সম্পদে আমার বিয়েতে আমার পরিবারের উপর আপনি বারাকা নাযিল করুন।
শেষ কথা
আমরা সবাই সফল হতে চাই আর সফল হতে হলে সঠিক পথ অবলম্বন করতে হবে। না হলে গন্তব্যহীন পথিক এর মতে আমাদের অবস্থা হবে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো না। তাই আমার রিকুয়েস্ট আপনাদের প্রতি আসুন আমরা কুরআন এবং সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন গড়ার চেষ্টা করি ইনশাল্লাহ আমরা পারব।
ধন্যবাদ-Thanks
আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url