আকিকার নিয়ম ও দোয়া পশুর বয়স গুরুত্ব ইত্যাদি

ছেলে হলে কয়টা? মেয়ে হলে কয়টা? আকিকা দেওয়া লাগে এরপর সাদকা করা লাগে, আমরা অনেকেই আকিকার নিয়ম, আকিকার দোয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো জানি না। তো আসুন আমরা এই কন্টেনটিতে আকিকার নিয়ম, আকিকার দোয়া সহ আকিকার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সহ বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।

image

সূচিপত্র: আকিকার নিয়ম দোয়া বিস্তারিত আলোচনা

(নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান ক্লিক করুন)

আকিকার নিয়ম ও বালা মুসিবত দূর

নবজাতক শিশুর নাম রাখার পর কর্তব্য হল ছেলে হলে দুটি আর মেয়ে সন্তান হলে একটি কুরবানীতে যবেহযোগ্য পশু দ্বারা আকিকা করা। আকিকার দ্বারা সন্তানের উপর থেকে বালা মুসিবত দূর হয়ে যায়, একটি সুন্নাতের উপর আমল করা হয়। এছাড়াও আরো বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে।

আকিকার গুরুত্ব এবং আমল

ইমাম গণের ঐকৌমতে 'আকিকা'একটি মুস্তাহাব আমল। তাই নবজাতক সন্তানের পিতার পক্ষে আল্লাহর শোকর আদায় পূর্বক কৃতজ্ঞতার নিদর্শন স্বরূপ আকিকা করা মুস্তাহাব।

আকিকা করার উত্তম / সঠিক সময়?

সম্ভব হলে নবজাতকের জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করা উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা)-ও স্বয়ং সপ্তম দিনে আকিকা করতেন। সপ্তম দিনের সম্ভব না হলে চতু্র্দশতম দিনে আকিকা করবে। তাও সম্ভব না হলে একবিংশতম দিনে, তাও সম্ভব না হলে যে কোন দিন সম্ভব হয়, করবে। অবশ্য এক্ষেত্রে জন্মের সপ্তম দিনের প্রতি লক্ষ্য রাখা উত্তম।

আকিকার সময়কাল সম্পর্কে হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

عن ام وابي كرز قال نذرت امرات من علي عبد الرحمن بن ابي بكر ان ولدت امراه عبد الرحمن نحرنا جذورا فقالت عائشه لا بل السنه افضل عن الغلام شاتان مكا فئه تان وعن الجاريتي شادو ولكن ذلك يوم السابع فان لم يكن ففي اربعه عشره فانلم يكون ففي احدى وعش رين

"হযরত কুরয (রা)-র পিতা মাতা থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, হযরত আব্দুল রহমান ইবন আবূ বকর (রা) এর বংশের একজন মহিলা মানত করল যে, আব্দুর রহমান-এর স্ত্রীর কোন সন্তান হলে আমরা একটি উট যবেহ করব। হযরত আয়েশা (রা) (এ কথা শুনে) বললেন, এতো হতে পারে না।

বরং সুন্নত হল ছেলে সন্তানের জন্ম হলে দুটি সমবয়স্ক ছাগল আর মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগল দিয়ে আকিকা করবে। অবশ্য এই আকিকা জন্মের সপ্তম দিনে হলে উত্তম। সপ্তম দিনের সম্ভব না হলে চতুর্দশতম দিনে, তাও সম্ভব না হলে একবিংশতম দিনে আকিকা করবে।"

আয়েশা ও হযরত উম্মে কুরয (রা) থেকে বর্ণিত

নবজাতক সন্তান ছেলে হলে দুটি ছাগল, ভেড়া অথবা গরু-মহিষের দুই অংশ দ্বারা আকিকা করবে। আর সন্তান মেয়ে হলে একটি ছাগল, ভেড়া অথবা গরু-মহিষের একাংশ দ্বারা আকিকা করবে। এ সম্পর্কে হাদিস শরীফে আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত"

عن عائشه رضي الله عنها قالت ان رسول الله صلى الله عليه وسلم امرهم عن الغلام شاتان مكا فستان وعن الجاريتي شاة

"হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে নবজাতক ছেলে সন্তানের জন্য দুইটি সমবয়সী ছাগল আর মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগল দ্বারা আকিকা করার জন্য নির্দেশ করেছেন" (তিরমিযী)।

আরো ইরশাদ করেন-

عن ام كرز رضي الله عنها قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الغلام شاتاني وعن الجاريتي شاة

"হযরত উম্মে কুরয (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন যে, নবজাতক সন্তান ছেলে হলে দুইটি ছাগল আর মেয়ে হলে একটি ছাগল দ্বারা আকিকা করবে"(তিরমিযী)।

আকিকার জন্য পশুর বয়স?

আকিকা অনেকটা কুরবানির ন্যায়। কুরবানীতে যে সমস্ত পশু জবেহ করা যাই এবং কুরবানির পশুর প্রকারভেদে বয়সের যে তারতম্য লক্ষণীয়, আকিকার পশুর ক্ষেত্রেও হুবহু তাই লক্ষণীয়। এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, কুরবানির জন্য যে ছাগল উপযুক্ত, সে ছাগল আকিকার জন্য উপযুক্ত।

বয়স : ছাগল-ভেড়া এক বছর বয়সী; গরু-মহিষ দুই বছর বয়সী এবং উট পূর্ণ পাঁচ বছর বয়সী। অবশ্য এক বছরের কম বয়সী ভেড়াকে যদি এক বছর বয়সী ভেড়ার মত দেখা যায়। তাহলে সে ভেড়া দ্বারাও আকিকা জায়িয হবে। কিন্তু অন্য কোন পশুর ক্ষেত্রে গঠন যত পরিপুষ্টই হোক না কেন, নির্দিষ্ট বয়সের চেয়ে একদিন কম হলেও আকিকা জায়িয হবে না।

আকিকার মাংস বণ্টনের সঠিক নিয়ম

কোরবানির ন্যায় আকিকার পশুর গোস্তোও তিনভাগ করে এক-তৃতীয়াংশ নিজের জন্য, এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকিনদের জন্য সাদাকা করে দিয়ে বাকি এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া সুন্নাত। অবশ্য ঘরের মানুষ বেশি হলে ইচ্ছা হলে সব গোস্ত ঘরে রেখেও দেওয়া যায়। আবার সব বিলিও করে দেওয়া যায়। আকিকার গোস্ত সচ্ছল আত্মীয়-স্বজনকেও দেওয়া যায়।

হাদিস শরীফে এরশাদ করেন-

"হযরত কুরয (রা)-এর পিতা-মাতা থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন যে, সুন্নাত ও উত্তম হল নবজাতক সন্তান ছেলে হলে দুইটি সমবয়সী ছাগল আর মেয়ে হলে একটি ছাগল যবেহ করে আকিকা করবে। আকিকার গোস্ত নিজেরাও খাবে এবং সাদাকাও করবে।

শিশুর মাথা মুড়ানো বা চুল কাটা

নবজাতকের জন্মের সপ্তম দিন আকিকার পশু যবেহ করার পূর্বে তার মাথা মুন্ডন করা মুস্তাহাব। তারপর কর্তিত চুলের ওজনের সমপরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য অথবা তার মূল্য সাদাকা করাও মুস্তাহাব। এই মাথা মন্ডন কাজ আকিকার পূর্বেই সমাধান করতে হয়। হাদীস শরীফে নবজাতকের মাথার চুলকে তার জন্য কষ্টদায়ক বস্তুরূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর তা ফেলে দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

এ সম্পর্কে হাদিস শরীফে এরশাদ করেন:

عن سلمان بن عامر رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من الغلام عقيقه فاهرقوا عنه دما واميطوا عنه ا لأذى

"হযরত সালমান ইবন আমের (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন: প্রত্যেক নবজাতকের পক্ষ থেকে এক-একটি আকিকা জরুরী, তোমরা তাদের পক্ষ থেকে পশু যবেহ করবে। আর তাদের থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করবে"(তিরমিযী)।

হযরত হাসান (রা) বর্ণনা করেছেন যে, অত্র হাদিসে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করার অর্থ হলো মাথার চুল মুন্ডানো (আবু দাঊদ)

হিকমত: আল্লামা ইবন কাইয়্যেম (র) স্বীয় কিতাব 'তুহফাতুল মআউলঊদ'-এ উল্লেখ্য করেছেন যে, মাথা মুড়ানোর হেকমত হল দ্বারা শারীরিক শান্তি বৃদ্ধি পায়, চুলের গ্রন্থি খুলে যায় যা দ্বারা চুলের উৎসস্থলে ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অনুরূপ দৃষ্টিশক্তি, ঘ্রাণ শক্তি এবং শ্রবণশক্তি ও বৃদ্ধি পায়।

শিশুর মাথা মুন্ডানোর পর সাদাকা

নবজাতকের মাথা মুন্ডানোর পর তার চুলের সমপরিমাণ রৌপ্য বা তৎমূল্য সাদাকা করা মুস্তাহাব।

হাদিস শরীফে এরশাদ করেন:

عن علي بني ابي طالب رضي الله عنه قال عق رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الحسن بشاة وقال يا فاطمة احلقي راسه تصدقي بو زنة شعره فضة فوز نته فكان وز نه درهما او بعض درهم

"হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হাসান-এর পক্ষ থেকে একটি ছাগল দ্বারা আকিকা করেছিলেন আর বলেছিলেন: হে ফাতিমা! হাসান-এর মাথা মুড়িয়ে দাও আর তার চুলের সমপরিমাণ ওজনে রৌপ্য সাদাকা করে দাও। [হাদিসের রাবী হযরত আলী (রা) বলেন]

তারপর আমি হাসান-এর কর্তৃক চুল ওজন করে দেখলাম যে, সেগুলোর ওজন ছিল এক দিরহাম বা তার অংশবিশেষের ওজনের সমান।

আরো পড়ুন: ধনী হওয়ার শক্তিশালী ১ টি আমল

আকিকার নিয়ম ও দোয়া

জবাইকারীই দোয়া পড়বে। যদি পিতা সন্তানের আকিকার পশু যবেহ করে। (যবেহর পূর্বে) তখন এ দোয়া পড়বে:

اَللّٰهُمَّ هَذِهِ عَقِيْقَةُ ابْنِيْ فُلاَنٍ دَمُهَا بِدَمِهٖ وَلَحْمُهَا بِلَحْمِهٖ وَعَظْمُهَا بِعَظْمِهٖ وَجِلْدُهَا بِجِلْدِهٖ وَشَعْرُهَا بِشَعْرِهٖ اَللّٰهُمٌَ اجْعَلْهَا فِدَاءً لاِبْنِيْ مِنَ النَّارِ بِسْمِ اللّٰهِ اَللّٰهُ اَكْبَرْ

অর্থ: হে আল্লাহ! এটা আমার অমুক ছেলের আকিকা তার (পশুর) রক্ত,তার (ছেলের) রক্তের, তার মাংস ছেলের মাংসের, তার হাড় ছেলের হাড়ের, তার চামড়া ছেলের চামড়ার, তার চুল ছেলের চুলের বিনিময়ে কবুল করো। হে আল্লাহ! এ পশুকে আমার ছেলের জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে ফিদিয়া বানিয়ে দাও। আল্লাহর নামে আরম্ভ, আল্লাহ মহান।

(দোয়া শেষ করার সাথে সাথে দ্রুত যবেহ করে দিন)

'অমুক' এর স্থানে এ সন্তানের যে নাম হয় তা হবে, আর মেয়ে সন্তান হলে উভয় স্থানে اِبْنِيْ এর জায়গায় بِنْتِيْ এবং هٖ আছে সেখানে هَا হবে। যদি (পিতা ছাড়া) অন্য ব্যক্তি যবেহ করে তখন উভয় স্থানে اِبْنِيْ فُلاَن অথবা بِنْتِيْ فُلاَن এর স্থানে فُلَان اِبْنِ فُلَان বলবে সন্তানকে তার পিতার দিকে সম্পর্কিত করবে।

শেষ কথা - উপসংহার

আলহামদুলিল্লাহ, আপনি যদি পরিপূর্ণ লেখাটি পড়ে থাকেন তাহলে আকিকা বিষয় কোরআন এবং হাদিস থেকে আকিকার নিয়ম আকিকার দোয়া এবং হাদিস জেনে গেছেন। আমরা সকলেই আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য আমল করব ইনশাআল্লাহ।

ধন্যবাদ-Thanks

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
Comment মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url