ঠোঁট গোলাপি করার ১০ টি সহজ উপায়

ঠোঁট গোলাপি করার উপায় ১০ টি সহজ পদ্ধতি নিয়ে লেখা আমাদের আজকের আর্টিকেল। এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন, ঠোঁট গোলাপি করার উপায়, ঠোঁটের যত্ন নেয়া, ঠোঁটের বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান, ঠোঁট গোলাপি করার দোয়া, ঠোঁটে গোলাপি আভা আসার জন্য কি ধরনের খাবার খেতে হবে সহ আরো অনেক বিষয়।

image

শীত সহ সব ঋতুতে আপনার ঠোঁটের শুষ্কতা, ফাটা, কালো দাগ দূর করে ঠোঁটকে সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক ও উজ্জল গোলাপি করার জন্য আপনি ঠোঁট গোলাপি করার উপায় সমূহ অনুসরণ করতে পারেন। এতে আপনার কোন সাইড ইফেক্ট হবে না বরং আপনি বেশ উপকৃত হবেন।

(নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান ক্লিক করুন)

সূচিপত্র: ঠোঁট গোলাপি করার উপায় ১০ টি সহজ পদ্ধতি

ঠোঁট গোলাপি - কিছু কথা

মানুষ সৌন্দর্যের পূজারী। আমরা সকলেই আমাদের সুস্থ ঠোঁট, সুন্দর হাসি চাই। কিন্তু জন্মগত, আবহাওয়া কারণে ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজেদের স্বভাবের কারণে আমাদের ঠোঁট ফেটে যায়, চামড়া উঠে যায়, অনেক সময় রক্ত বের হয়, শুষ্ক হয়ে যায়, কালো হয়ে যায়।

এ সকল সমস্যা দূর করে ঠোঁটকে নরম ও গোলাপি করা যাবে ঠোঁট গোলাপি করার উপায় ১০টি সহজ পদ্ধতির মাধ্যমে। ঠোঁট মানুষের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং শরীরের বাহ্যিক ত্বকের অন্তর্ভুক্ত।

বাহ্যিকভাবে ঠোঁটকে শুধু যত্ন করলেই হবে না এর পাশাপাশি আমাদের ঠোঁট গোলাপি করার জন্য কিছু খাবারও খেতে হবে। ঠোঁট গোলাপি করার উপায় জানার পূর্বে চলুন ঠোঁট সম্পর্কে কিছু বিষয়ে আমরা জেনে নেই।

ঠোঁট শুষ্ক ও ফাটার কারণ

বাহ্যিক ত্বকের অন্যান্য জায়গার তুলনায় ঠোঁটের চামড়া বেশ পাতলা হয়। নরম সুন্দর ঠোঁটের পরিবর্তে অনেক সময় আমাদের ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যায়, ঠোঁটের চামড়া উঠে যায়, ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হয়। এমন হলে আমাদের কথা বলতে, হাসতে সহ বিভিন্ন ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।

সাধারণত বাতাসে আদ্রতা কম থাকলে, শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে, ভিটামিনের অভাব হলে, ঠোঁট শুষ্ক হওয়া, চামড়া ওঠা, রক্ত বের হওয়া ইত্যাদি সমস্যাগুলো দেখা দেয়।

ঠোঁট কালো হওয়ার কারণ

ঠোঁট গোলাপি করার উপায় সমূহ জানার পাশাপাশি আমাদেরকে জানতে হবে ঠোঁট কালো হওয়ার কারণ সম্পর্কে। ঠোঁট কালো হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। নিম্মে ঠোঁট কালো হওয়ার কারণগুলো দেওয়া হলো :

  • সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি আমাদের ত্বকের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই রশ্মির প্রভাবে আমাদের ঠোঁট সহ ত্বক কালো হয়ে যায়। ফলে ঠোঁটের ত্বক তার লাবণ্যতা হারায়।
  • ধূমপান করলে ঠোঁট কালো হয়ে যায়। এটা সাধারণত ছেলেদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়।
  • বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধির জন্য অনেক সময় ঠোঁট কালো হয়ে যায়।
  • অনেক রোগের চিকিৎসা রয়েছে যা করলে ঠোঁটের রং কালো হতে পারে।
  • ঠোঁট গোলাপি করার উপায় হিসেবে ক্ষতিকর কেমিক্যাল দ্বারা তৈরি বিভিন্ন ধরনের কসমেটিক্স ব্যবহার করলেও উজ্জ্বল গোলাপি হওয়ার পরিবর্তে ঠোঁট কালো হয়ে যায়।
  • মানসিক চাপ খুব খারাপ জিনিস। এর প্রভাব আমাদের শরীরের ত্বকে পড়ে। যার কারনে অনেক সময় ঠোঁট কালো হয়।

ভ্যাসলিন দিলে কি ঠোঁট কালো হয়ে যায়?

শীত আসলে ঠোঁটকে শুষ্ক হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য এবং ঠোঁটের লাবণ্যতা বজায় রাখার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের কসমেটিকস সামগ্রী ব্যবহার করে থাকি। এ সকল প্রসাধনীর মধ্যে ভ্যাসলিন খুবই পরিচিত একটি নাম।

ঠোঁটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে এবং ঠোঁটকে কোমল করতে আমরা ভ্যাসলিন ব্যবহার করে থাকি। তবে দীর্ঘ সময় ধরে ভ্যাসলিনের ব্যবহার হিতে বিপরীত হতে পারে। মানে ঠোঁটকে উজ্জ্বল করার পরিবর্তে আরো কালো ও শুষ্ক করে দিতে পারে।

ঠোট গোলাপি করার জন্য ঠোঁটের যত্ন নেয়া

নিন্মোক্ত উপায়ে ঠোঁটের যত্ন নেয়া যেতে পারে। যেমন:

  • ধূমপান বর্জন করতে হবে।
  • ঠোঁটকে ময়েশ্চারাইজ করতে হবে।
  • সানবার্ন হওয়া থেকে ত্বককে রক্ষা করতে হবে।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে যাতে শরীরে অভাব না হয়।
  • ঠোঁটে কোন লিপস্টিক ব্যবহার করলে তা আস্তে আস্তে পরিষ্কার করতে হবে। ভালো মানের লিপস্টিক তথা কসমেটিক্স ব্যবহার করতে হবে।
  • যে ধরনের প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে এবং যে ধরনের খাবার খেলে ঠোঁটে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বা এলার্জি হয়, সে ধরনের প্রোডাক্ট ও খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • কেমিক্যাল দ্বারা তৈরি দ্রব্য সামগ্রী ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান দ্বারা ঠোঁট এর যত্ন নিতে হবে। এতে কোন সাইড ইফেক্ট নেই।

ঠোঁট গোলাপি করার উপায় ১০টি সহজ পদ্ধতি

image

ঠোঁট গোলাপি করার উপায় গুলো নিম্নে দেওয়া হল:

  1. মধু ও লেবুর মিশ্রণ
  2. মধু চিনি ও অলিভ অয়েল এর স্কার্ব
  3. টুথপেস্ট
  4. গোলাপ পাপড়ির নির্যাস
  5. টক দইয়ের স্কার্ব
  6. নারকেল তেলের স্কার্ব
  7. অ্যালোভেরা
  8. দুধ ও হলুদের মিশ্রণ
  9. শসা ও লেবুর মিশ্রণ
  10. বিট রুট

১. মধু ও লেবুর মিশ্রণ: ঠোঁট গোলাপি করার উপায় গুলোর মধ্যে মধু ও লেবুর মিশ্রণ অন্যতম। মধু খুবই উপকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এটি ত্বকে ময়েশ্চারাইজার এর কাজ করে। পরিমাণ মতো মধু ও লেবু একসাথে মিশিয়ে তা ঠোঁটে লাগাতে হবে।

প্রায় ৩০-৪০ মিনিট রাখার পর স্বাভাবিক পানি দিয়ে মিশ্রণটি ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ব্যবহারে ঠোঁটের কালো দাগ দূর হবে এবং ঠোঁট হবে উজ্জ্বল ও নরম প্রকৃতির।

২. মধু চিনি ও অলিভ অয়েল এর স্কার্ব: ঠোঁট গোলাপি করার উপায়ের মধ্যে একটি হল মধু চিনি ও অলিভ অয়েল এর স্কার্ব। পরিমাণ মতো মধু চিনি ও অলিভ অয়েল একসাথে মিশিয়ে একটি স্কার্ব তৈরি করে নিতে হবে। এই স্কার্ব মেসেজ করে ঠোঁটে লাগাতে হবে। আধা ঘন্টা পর তা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

৩. টুথপেস্ট: ঠোঁট গোলাপি করার উপায় সম্পর্কে কথা বলতে গেলে টুথপেস্টের কথা বলতেই হয়। কেননা এটি আমাদের ঠোঁটের গোলাপি আভা নিয়ে আসে এবং আমাদের সকলের ঘরে এই জিনিসটি বিদ্যমান।

একটি নরম ব্রাশে কিছুটা টুথপেস্ট নিয়ে তা ঠোঁটের উপর আস্তে আস্তে ঘষলে কালো দাগ দূর হয় এবং গোলাপি আভা ফুটে ওঠে।

৪. গোলাপ পাপড়ির নির্যাস: গোলাপ পাপড়ির নির্যাস ঠোঁট গোলাপি করার উপায় হিসেবে খুবই কার্যকর। প্রয়োজন মত গোলাপ পাপড়ি নিয়ে একদম মিহি করে তাতে মধু মিশিয়ে ঠোঁটে লাগাতে হবে। সব সময় এটি ব্যবহারে ঠোট হবে গোলাপের পাপড়ির মতো গোলাপি।

৫. টক দইয়ের স্কার্ব: টক দই, মধু, কিছুটা হলুদ এবং দানাদার চিনি একসাথে মিশিয়ে একটি স্কার্ব তৈরি করে নিতে হবে। এই স্কার্ব ঠোঁটে মেখে বেশ কিছুক্ষণ ঘষতে হবে। এতে ঠোঁটের শুষ্ক ভাব দূর হয়ে ঠোট হবে উজ্জ্বল।

৬. নারকেল তেলের স্কার্ব: ঠোঁট গোলাপি করার উপায় হিসেবে নারিকেল তেলের স্কার্বের কথা বলা যায়। নারকেল তেল, লেবুর রস ও চিনি একসাথে মিশিয়ে স্কার্ব তৈরি করে তা ঠোঁটে লাগিয়ে ঘষতে হবে। এতে ঠোঁটের কালো দাগ দূর হয়ে ঠোঁট হবে নরম ও কোমল।

৭. অ্যালোভেরা: বহুগুনে গুণান্বিত প্রাকৃতিক একটি উপাদানের নাম হচ্ছে এলোভেরা। আমাদের ত্বকের শুষ্কতা দূর করে ত্বককে ভালো রাখার ক্ষেত্রে এর তুলনা হয় না। অ্যালোভেরা ঠোঁটে লাগালে ঠোঁটের শুষ্কতা এবং কালো ভাব দূর হয়।

৮. দুধ ও হলুদের মিশ্রণ: ঠোঁট গোলাপি করার উপায় হিসেবে দুধ ও হলুদের মিশ্রণও বেশ কার্যকর। দুধ এবং হলুদে দুটো উপাদানই আমাদের ত্বকে উজ্জ্বল করে। এ দুই উপাদান একসাথে মিশিয়ে শুষ্ক ও কালো ঠোঁটে ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

৯. শসা ও লেবুর মিশ্রণ: শসা ও লেবু একসাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে। যদি প্রতিদিন এটি ঠোঁটে ব্যবহার করা হয় তবে ঠোঁটের কালো দাগ দূর হবে।

১০. বিট রুট: ঠোঁট গোলাপি করার উপায় হিসেবে বিটরুটের কথা আমাদেরকে বলতেই হবে। ঠোঁট গোলাপি করতে শুধু বিটরুট এর রস ঠোঁটে লাগালে বেশ উপকার পাওয়া যাবে।

ঠোঁট গোলাপি করে যে সব খাবার

এতক্ষণ আমরা ঠোঁট গোলাপি করার উপায় সম্পর্কে জানলাম। এবার আমরা জানবো যেসব খাবার খেলে ঠোঁট সুন্দর, কোমল ও উজ্জ্বল রঙের হয়।

  • গাজর ও পাঁকা টমেটোর তৈরি সালাদ খেতে হবে।
  • ঠোঁট গোলাপি করতে মধু ঠোঁটের ত্ব্কে ব্যহারের পাশাপাশি প্রতিদিন খেতে হবে।
  • শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি খাবার হচ্ছে গ্রিন টি। যদিও এটা পান করতে চা কফির মত এত ভালো লাগে না তারপরও এটা খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

এছাড়া ঠোঁট গোলাপি করা সহ ঠোঁটের ত্বককে সুস্থ স্বাভাবিক রাখার জন্য নারিকেল, এলোভেরা, লেবু, বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি, ফলমূল ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। এ সকল খাবার আমাদের শরীরের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।

ঠোঁট গোলাপি করার ক্রিম / কসমেটিক্স ব্যবহারে সতর্কতা

ঠোঁটকে গোলাপি করার উপায় হিসেবে ঠোঁটের যত্ন নেওয়া ও ঠোঁটের ত্বককে ভালো রাখার জন্য অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ক্রিম বা কসমেটিক্স ব্যবহার করে থাকেন।

এসব ক্রিম এবং কসমেটিক সামগ্রী ব্যবহারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। এগুলো কেনার আগে এসব সামগ্রীর গুণগতমান সম্পর্কে খেয়াল রাখতে হবে, কম দামে নিম্নমানের কসমেটিক্স ব্যবহার করা যাবে না।এগুলো ব্যবহার করলে ঠোঁট গোলাপি না হয়ে বরং আরো কালো হয়।

কসমেটিক কেনার আগে দেখতে হবে সেই কসমেটিক্স ডেট ওভার কিনা ও এলার্জি ফ্রি কিনা।

ঠোঁট সাজাতে মেয়েদের লিপস্টিক ছাড়া চলেই না। ঋতুভেদে আবহাওয়ার প্রতি লক্ষ্য রেখে লিপস্টিক নির্বাচন করতে হবে। যেমন: শীতকালে শুষ্ক ঠোটে ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার করা যাবে না। ব্যবহার করলে ঠোঁটে আরো সমস্যা দেখা দেবে। শীতকালে ক্রিমি টাইপের লিপস্টিক, লিপ গ্লস ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।

উপসংহার - শেষ কথা

পরিশেষে বলা যায়, ঠোঁট গোলাপি করার উপায় ১০টি সহজ পদ্ধতির দ্বারা খুব সহজেই আমরা আমাদের ঠোঁটকে সুস্থ, নরম, কোমল ও আকর্ষনীয় করে তুলতে পারবো। যেহেতু এ পদ্ধতি গুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক হওয়ায় ত্বকের কোন সাইড ইফেক্ট হয় না। তাই আসুন আমরা সবাই এই পদ্ধতি গুলো নিজেদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করি ও ঠোঁটকে ভালো রাখি।

শুষ্ক কালো ও ফাটা ঠোঁট বিভিন্ন ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। আর সুস্থ সবল গোলাপি ঠোঁট এ সকল পরিস্থিতি থেকে আমাদের বাঁচায় এবং এটি সৌন্দর্যের প্রকাশক। (1219)

Thanks

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
Comment মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url