শুষ্ক ত্বকের ঘরোয়া যত্ন ও ১০ টি সহজ পদ্ধতি
শুষ্ক ত্বকের ঘরোয়া যত্ন নেওয়ার পদ্ধতিগুলো জানা থাকলে আমরা যেকোন ঋতুতেই ত্বককে আর্দ্র ও ঝলমলে রাখতে পারি। কিন্তু সঠিক গাইডলাইনের অভাবে অনেকেই তা করতে সক্ষম হন না। উপরন্তু নানা দামী দামী প্রসাধনীর পেছনে টাকা নষ্ট করেন।
আজকের আর্টিকেলটি তাই সাজানো হয়েছে শুষ্ক ত্বকের ঘরোয়া যত্ন কীভাবে নেবেন সেসব টিপস ও ট্রিকস নিয়ে। লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনি জানতে পারবেন খুবই সহজে ঘরে বসেই খুবই স্বল্প খরচেই আপনি পেতে পারেন সুস্থ, সুন্দর, নজরকাড়া ত্বক। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
(নিচের যে অংশ থেকে দেখতে চান ক্লিক করুন)
সূচিপত্র: শুষ্ক ত্বকের ঘরোয়া যত্ন ১০ টি সহজ পদ্ধতি
- ভূমিকা
- ত্বক শুষ্ক হওয়ার কারণ
- শুষ্ক ত্বক চেনার উপায়
- শুষ্ক ত্বকের ঘরোয়া যত্ন ১০ টি সহজ পদ্ধতি
- গরমে শুষ্ক ত্বকের যত্ন
- শীতে শুষ্ক ত্বকের যত্ন
- শুষ্ক ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার
- শুষ্ক ত্বকের ফেসপ্যাক
- শুষ্ক ত্বকের জন্য কোন চিকিৎসা করা উচিত নয়
- উপসংহার
ভূমিকা
সুন্দর, মসৃণ ত্বক কে না চায়? শীত ও গ্রীষ্মে আমাদের অনেকেরই ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। এসময় ত্বকের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে আমরা অনেকে মূল্যবান পণ্যের পেছনে টাকা খরচ করতে থাকি।
কিন্তু কিছুটা সতর্ক হলেই আমরা এই কাজটি করতে পারি অতি সহজে, অতি স্বল্প খরচে। আপনার হাতের কাছেই রয়েছে আপনার ত্বকের জন্য আদর্শ বিভিন্ন টোটকা।
আমরা তাই আজ আলোচনা করবো শুষ্ক ত্বকের ঘরোয়া যত্ন নেওয়ার পদ্ধতিগুলো নিয়ে। তবে তার আগে জানবো ত্বক শুষ্ক হওয়ার কারণ।
ত্বক শুষ্ক হওয়ার কারণ
ত্বক শুষ্ক হওয়ার কারণ হতে পারে বেশ কিছু ব্যাপার। এগুলো জানা থাকলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারি। তাই ত্বক শুষ্ক হওয়ার কারণ গুলো আমাদের জানতে হবে। এরপর সেই মোতাবেক আমরা উক্ত শুষ্ক ত্বকের ঘরোয়া যত্ন নিতে পারি।
আবহাওয়া শুষ্ক হলে তার প্রভাবে ত্বকও শুষ্ক হতে পারে। আবার শরীরে পানির অভাবে এটি হতে পারে। বিভিন্ন সাবান বা প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে ত্বকের উপর থেকে তেলের স্তর উঠে গিয়ে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। পর্যাপ্ত ফলমূল, শাকসবজি, প্রোটিন ইত্যাদি না গ্রহণ করলেও ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। আবার কোন রোগের ফলেও এরকম হতে পারে।
অর্থাৎ ত্বক শুষ্ক হওয়ার কারণ হতে পারে এক বা একাধিক। কারণ নির্ধারণ করে সঠিক পদক্ষেপ নিলেই ত্বক হয়ে উঠবে সুন্দর।
শুষ্ক ত্বক চেনার উপায়
শুষ্ক ত্বক চেনার উপায় হলো মূলত ত্বককে পর্যবেক্ষণ করা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভালোভাবে দেখুন। আপনার ত্বক কি লালচে লালচে লাগছে? কিংবা ত্বকের বিভিন্ন স্থানে শুষ্ক চামড়া উঠে আসছে? ত্বকে আলতো আঁচড় কাটলে কি সাদা দাগ হয়ে যাচ্ছে?
এরকম হলে আপনার ত্বক শুষ্ক হয়ে গিয়েছে। তবে ঘাবড়াবেন না। আমরা এবার আলোচনা করবো শুষ্ক ত্বকের ঘরোয়া যত্ন, তথা ত্বকে আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনার সহজ উপায় নিয়ে।
শুষ্ক ত্বকের ঘরোয়া যত্ন
এবার চলে আসি আমাদের আজকের মূল আলোচনা শুষ্ক ত্বকের ঘরোয়া যত্ন বিষয়ে। শুষ্ক ত্বকের ঘরোয়া যত্ন যেভাবে আমরা নিতে পারি সেগুলো হলো:
১। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। এতে ত্বক হাইড্রেটেড হবে। ফলে শুষ্কতা কমে আসবে।
২। নিয়মিত পীনাট বাটার খেলে ত্বক শুষ্কতা থেকে মুক্ত থাকে। তাই খাদ্যতালিকায় পীনাট বাটার রাখতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার অ্যালার্জি আছে কি না সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
৩। ত্বকে নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল, বা সানফ্লাওয়ার অয়েল প্রয়োগ করতে পারেন।
৪। অ্যালোভেরা প্রয়োগ করতে পারেন। এটি ত্বককে শুষ্কতা থেকে মুক্তি দেয়। রাতে ত্বকে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে ঘুমান। সকালে উঠে পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
৫। খাদ্যতালিকায় রাখুন প্রচুর শাকসবজি এবং ফলমূল। বিশেষত মৌসুমি শাকসবজি ও ফলমূল খান।
৬। নরম কাপড় পরিধান করুন। এতে ত্বকে বেশি ঘষা লাগবে না এবং ত্বক ভালো থাকবে।
৭। ত্বকে ব্যবহার্য সাবান যেন ময়েশ্চারাইজারযুক্ত হয় সেদিকে লক্ষ রাখুন।
৮। ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করুন।
৯। বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রীন ব্যবহার করুন।
১০। এছাড়া মধু ব্যবহার করতে পারেন। খাওয়ার পাশাপাশি এটি সরাসরি ত্বকে প্রয়োগও করতে পারেন। এতে ত্বক শুষ্কতামুক্ত থাকবে।
এই সহজ পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে আমরা সহজেই পেয়ে যেতে পারি মসৃণ, সুন্দর ত্বক। দূর করে ফেলতে পারি ত্বকের আর্দ্রতা।
গরমে শুষ্ক ত্বকের যত্ন
গরমে ত্বক শুষ্ক হতে পারে ডিহাইড্রেশনের কারণে। তাই গরমে শুষ্ক ত্বকের যত্ন নিতে বেশি বেশি পানি খান। বাইরে যাওয়ার আগে অবশ্যই ত্বকে সানস্ক্রীন প্রয়োগ করুন। ময়েশ্চারাইজার সাথে রাখুন।
ত্বককে শুষ্ক করে দেয় এমন সাবান ও প্রসাধনী থেকে বিরত থাকুন। ময়েশ্চারাইজারযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করুন।
শীতে শুষ্ক ত্বকের যত্ন
শীতে শুষ্ক ত্বকের যত্ন নিতে ত্বকে কোল্ড ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া ভ্যাসলিন, লোশন, গ্লিসারিন ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।
শীতকালেও বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রীন ব্যবহার করাই উত্তম। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি পান করুন। মৌসুমি ফলমূল ও শাকসবজি গ্রহণ করুন।
শুষ্ক ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার
এতোক্ষণের আলোচনা শেষে আমরা বুঝতে পারলাম শুষ্ক ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার গুলোর মধ্যে রয়েছে:
- দুধ
- কলা
- মধু
- পেঁপে
- নারিকেল তেল
- অলিভ অয়েল
- সূর্যমুখী তেল
- অ্যালোভেরা জেল
- পানি
- মৌসুমি ফলমূল ও শাকসবজি
১। দুধ: দুধে থাকা ফ্যাট ও প্রোটিন ত্বককে মসৃণ করতে সাহায্য করে। দুধ একটি সুষম খাদ্য। এতে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় সকল খাদ্য উপাদানই রয়েছে।
২। কলা: কলা ত্বককে আর্দ্র ও সুন্দর করতে সাহায্য করে। এতে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদান আমাদের শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ ও রোগ প্রতিরোধী করে তোলে। কলা খাওয়ার পাশাপাশি ফেসপ্যাক বানিয়ে মুখেও প্রয়োগ করতে পারেন। এতে স্কিন হয়ে উঠবে সুন্দর, মোলায়েম, মসৃণ।
৩। মধু: মধুর বহুমুখী উপকারীতার জন্য যুগ যুগ ধরেই বিভিন্ন কালচারে মধু সমাদৃত হয়ে আসছে। আমাদের ত্বকের জন্যও মধু খুব উপকারী। খাওয়ার পাশাপাশি ফেসপ্যাক বানিয়ে ত্বকে প্রয়োগ করলে দ্রুত উপকার পাবেন।
৪। পেঁপে: পেঁপে খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি রয়েছে এর নানা স্বাস্থ্য ও রূপচর্চাগত উপকারীতা। পেঁপে দিয়েও বানিয়ে নিতে পারেন অসাধারণ কিছু ফেসপ্যাক।
৫। নারিকেল তেল: নারিকেল তেল ত্বকে প্রয়োগ করলে ত্বক সহজে শুষ্ক হবে না।
৬। অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েল একটি অতি উপকারী তেল। সমগ্র বিশ্বেই এটি সমাদৃত। এটি যেমন খাদ্যের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করে, তেমনি আমাদের ত্বকের জন্যও অতি উপকারী। ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন এই অলিভ অয়েল। এতে ত্বক সহজে শুষ্ক হবে না।
৭। সূর্যমুখী তেল: সূর্যমুখী ফুল ও সূর্যমুখী বীজের রয়েছে বহুমুখী উপকারীতা। আবার সূর্যমুখী তেল আমাদের ত্বককে শুষ্কতা থেকেও রক্ষা করতে সক্ষম।
৮। অ্যালোভেরা জেল: ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা জেলের জুড়ি মেলা ভার। অ্যালোভেরা জেল সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ করা যায়। আবার ফেসপ্যাক বানিয়েও ব্যবহার করা যায়। আবার অ্যালোভেরা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন প্রসাধনীও ত্বকের জন্য উপকারী। তবে লক্ষ রাখতে হবে এগুলো ভেজাল বা অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত নয়।
৯। পানি: বেশি বেশি পানি পান করলে ত্বক ভেতর থেকে হাইড্রেটেড থাকবে। ফলে সহজে শুষ্ক হবে না। মূলত পর্যাপ্ত পানির অভাবেই ত্বক শুষ্ক হয়।
১০। মৌসুমি ফলমূল ও শাকসবজি: বিভিন্ন মৌসুমি ফলমূল ও শাকসবজি আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকারের পাশাপাশি ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।
এবার আসুন দেখি কীভাবে এই উপাদানগুলো ব্যবহার করে শুষ্ক ত্বকের ফেসপ্যাক তৈরি করবো।
শুষ্ক ত্বকের ফেসপ্যাক
বিভিন্ন ফেসপ্যাক ব্যবহার করে আমরা সহজেই দূর করতে পারি ত্বকের শুষ্কভাব এবং পেতে পারি আকর্ষণীয় ত্বক। শুষ্ক ত্বকের ফেসপ্যাক যেভাবে তৈরি করতে পারেন:
১। একটি পাকা কলা ভালোভাবে চটকে নিয়ে এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েলের সাথে ওই চটকানো কলার এক টেবিল চামচ মিশিয়ে নিন। এরপর এটি ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে নিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করলে এক মাসেই ত্বক হয়ে উঠবে ঝলমলে।
২। আধা কাপ পরিমাণ পাকা পেঁপে চটকে নিন। এতে মেশান এক টেবিল চামচ মধু। এবার এই মিশ্রণটি ত্বকে দিয়ে রাখুন আধা ঘন্টা। অতঃপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ৩-৪ বার এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।
৩। এক চা চামচ নারিকেল তেলের সাথে কিছুটা অ্যালোভেরা মেশান। এটি ত্বকে প্রয়োগ করে রেখে দিন ১৫ মিনিট। তারপর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার করবে।
এভাবে ঘরে বসে খুবই স্বল্প সময়ে ও স্বল্প খরচেই বানিয়ে ফেলতে পারেন অসাধারণ এই ফেসপ্যাকগুলো। শুষ্ক ত্বকের ঘরোয়া যত্ন নিতে এগুলো অতি সহায়ক।
শুষ্ক ত্বকের জন্য কোন চিকিৎসা করা উচিত নয়
অনেকের ত্বক সংবেদনশীল হয়ে থাকে। সহজেই শুষ্ক হয়ে যায়, লালচেভাব বা জ্বলুনী দেখা দেয়। এরকম ত্বকের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী।
অত্যধিক রাসায়নিকযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার সংবেদনশীল ত্বকের উপরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া রেটিনল, বিভিন্ন ধরণের এসিড (যেগুলো ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয়) ইত্যাদি থেকেও বিরত থাকা ভালো। অনেকের আবার সানস্ক্রীনেও সমস্যা হতে পারে।
মোট কথা, সংবেদনশীল ত্বকের অধিকারীদের বেশি রাসায়নিক ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো। প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার করে ত্বকের যত্ন নিলেই তারা সর্বোত্তম ফল পাবেন আশা করা যায়।
উপসংহার - শেষ কথা
আশা করি এতোক্ষণের আলোচনা শেষে আমাদের মধ্যে শুষ্ক ত্বকের ঘরোয়া যত্ন বিষয়ে আর কোন সন্দেহ নেই। আর এর সবচাইতে ভালো দিক হলো খুবই স্বল্প সময়, শ্রম, ও অর্থ ব্যয় করেই আমরা পেতে পারি সর্বোচ্চ ভালো ফলাফল। স্কিনকেয়ার মানেই যে হাজার হাজার টাকা খরচ করা নয় তা আমাদের সবার জানা দরকার।
লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ে থাকলে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে নিজের বন্ধুবান্ধব ও প্রিয়জনদের সাথেও শেয়ার করতে পারেন। এতে তাঁরাও জানতে পারবেন শুষ্ক ত্বকের ঘরোয়া যত্ন নেওয়ার উপায়গুলো। সবার সুস্থতা কামনা করে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি। (1214)
Thanks
আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url