সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম - ৭ টি টিপস ও ট্রিকস
সূর্যমুখী বীজ আমাদের শরীরের জন্য অতি উপকারী। তবে উপকারী বলেই যেমন খুশি তেমনভাবে খেলে হবে না। সর্বোচ্চ উপকার পেতে জানা দরকার সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার সঠিক নিয়ম - ৭ টি টিপস ও ট্রিকস।
এই আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের গবেষণা ও পরামর্শ অনুযায়ী। আশা করি মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়লে আপনারা বিস্তারিত জানতে পারবেন।
সূচিপত্র: সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম ৭ টি টিপস ও ট্রিকস
- ভূমিকা
- সূর্যমুখী বীজ খেলে কী হয়?
- সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম ৭ টি টিপস ও ট্রিকস
- সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা
- সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার অপকারিতা
- উপসংহার
সূর্যমুখী বীজ সম্পর্কে কিছু কথা
সূর্যমুখী বীজ সূর্যমুখী ফুলের সাথে থাকে। এই বীজ খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি মানবদেহের জন্য অতি উত্তম। সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম জেনে সঠিকভাবে খেলে তা আমাদের দীর্ঘমেয়াদী অনেক উপকারের কারণ হতে পারে।
তবে খুব ভালো জিনিসেরও কিছু খারাপ দিক থাকতে পারে। তাই আসুন এখন জেনে নিই। তবে তার আগে জানবো সূর্যমুখী বীজ খেলে কী হয়।
সূর্যমুখী বীজ খেলে কী হয়?
এতোক্ষণে হয়তো আপনার মনে এই প্রশ্ন এসে থাকবে যে সূর্যমুখীর বীজ কেন খাবো। সূর্যমুখীকে আমরা সৌন্দর্যবর্ধনের একটা ফুল হিসেবেই জানি। এর বীজ যে আবার খাওয়াও যায় আর তার যে উপকারীতাও আছে তা আমরা অনেকেই হয়তো জানি না। আসুন এবার দেখে নিই সূর্যমুখীর বীজ খেলে কী হয়?
- প্রদাহ কমায়
- সোডিয়ামের যোগান দেয়
- হার্ট ভালো রাখে
- ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী
১। প্রদাহ কমায়: সূর্যমুখীর বীজে আছে মনোআনস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড চর্বি। এসব চর্বি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এক আউন্স সূর্যমুখীর বীজে মনোআনস্যাচুরেটেড চর্বি পাবেন ৩ গ্রাম, আর পলিআনস্যাচুরেটেড চর্বি পাবেন ৯ গ্রাম। তাই প্রদাহের সমস্যা থাকলে সূর্যমুখীর বীজ খেতে পারেন।
২। সোডিয়ামের যোগান দেয়: লবণযুক্ত সূর্যমুখী বীজ নিয়মিত খেলে তা শরীরের দৈনিক সোডিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে পারে। বাজারে এরকম বীজ কিনতে পাওয়া যায়।
৩। হার্ট ভালো রাখে: সূর্যমুখীর বীজ হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
৪। ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী: ডায়াবেটিসের রোগীরা সূর্যমুখী ফুলের বীজ খেলে উপকৃত হবেন। কারণ সূর্যমুখী ফুলের বিচিতে রয়েছে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা সূর্যমুখী ফুলের বীজ খেতে পারেন।
তাহলে জানলাম সূর্যমুখীর বীজ খেলে কী কী হয়। এবার চলুন জেনে নিই সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম।
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম ৭ টি টিপস ও ট্রিকস
- চিবিয়ে খাওয়া
- ভেজে খাওয়া
- তেল হিসেবে ব্যবহার
- বেকিংয়ে ব্যবহার
- সালাদে ব্যবহার
- মাখন হিসেবে
- ওটসের সাথে
একটা খাদ্য অনেক উপকারী হলেও সঠিক নিয়মে তা না খেলে অনেক সময় এর পরিপূর্ণ ফায়দা আমরা পাই না। এক্ষেত্রেও ব্যাপারটা খাটে। তাই উপকারের আশায় খাওয়ার আগে আমাদের জানতে হবে সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম - ৭ টি টিপস ও ট্রিকস। আসুন এবার সেগুলো জেনে নিই:
১। চিবিয়ে খাওয়া: সূর্যমুখী বীজ চাইলে চিবিয়ে খেতে পারেন। ফুল থেকে বিচিগুলো আলাদা করে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। তারপর চিবিয়ে খেয়ে নিন। বীজের খোলসগুলো ফেলে দিতে পারেন।
২। ভেজে খাওয়া: সূর্যমুখী ফুলের বিচি ভেজেও খাওয়া যায়। আমরা যেমন চিনাবাদাম ভেজে খাই, সেভাবে এই বীজগুলোও ভেজে নিতে পারেন। তাহলে খেতে ভালো লাগবে, আবার উপকারও পাবেন। চাইলে লবণও ব্যবহার করতে পারেন। এতে আলাদা স্বাদ আসবে।
৩। তেল হিসেবে ব্যবহার: রান্নায় সয়াবিন, সরিষা ইত্যাদি তেলের বদলে সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করতে পারেন। এতে সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা পাবেন, আবার একই সাথে খাবারে আলাদা স্বাদ আসবে।
৪। বেকিংয়ে ব্যবহার: আমরা অনেকেই বাড়িতে কুকি, কেক ইত্যাদি বানাই বা বেক (bake) করি। এসব বেকিংয়ে সূর্যমুখী বীজের ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে খাবারের স্বাদ যেমন বাড়বে, তেমনই সূর্যমুখীর উপকারিতা পাবেন।
৫। সালাদে ব্যবহার: নানারকম সালাদে সূর্যমুখীর বীজ ব্যবহার করতে পারেন। এতে সালাদের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পাবে, সাথে খেতেও ভালো লাগবে। এছাড়া সূর্যমুখী তেলও ব্যবহার করতে পারেন।
৬। মাখন হিসেবে: সানফ্লাওয়ার বাটার খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। অন্যান্য মাখনের বদলে এই মাখন কিনতে পারেন।
৭। ওটসের সাথে: নাস্তায় আমরা অনেকেই ওটস খেয়ে থাকি। এসময় ওটমিলের সাথে সানফ্লাওয়ার সীড মিশিয়ে খেলে উপকার পাবো আর একইসাথে এর টেস্টও বাড়বে।
অর্থাৎ, সানফ্লাওয়ার সীড খাওয়ার কোন নির্দিষ্ট একটি নিয়ম নেই। অনেক রকম ভাবে আমরা এই উপকারী খাদ্যটি গ্রহণ করতে পারি। তাই উপরের পয়েন্টগুলো থেকে আপনার যেটি পছন্দ হয় সেই নিয়মেই এই বীজ আপনি খেতে পারেন।
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা কী তা আমাদের জানা থাকা দরকার। উপরে "সূর্যমুখী বীজ খেলে কী হয়" সেকশনে আমরা কিছু উপকারিতা জেনেছি। এবার সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আরও কিছু পয়েন্ট বিস্তারিত জানবো। তাহলে আসুন সেগুলো জেনে নিই।
- ত্বকের উপকার করে
- মস্তিষ্কের উপকার করে
- হাড়ের সুস্থতা
- হজম
- রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
- ওজন নিয়ন্ত্রণ
- পুষ্টিকর
- ক্যান্সার
- কোলেস্টেরল কমায়
- মন ভালো করে
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারীতা গুলো নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:
১। ত্বকের উপকার করে: সূর্যমুখী বীজে রয়েছে ভিটামিন ই। এই ভিটামিন ই আমাদের ত্বকের জন্য অতি উত্তম ও প্রয়োজনীয় একটি ভিটামিন। এটি আমাদের ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি থেকে রক্ষা করে। ফলে ত্বক থাকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর।
২। মস্তিষ্কের উপকার করে: ইংরেজিতে একটা কথা আছে: Beauty with brain। অর্থাৎ, যার সৌন্দর্য আর বুদ্ধিমত্তা কোনটাই কম না। সানফ্লাওয়ার সীড শুধু আমাদের ত্বককে সুন্দর করে সৌন্দর্যবর্ধনই করে না, একই সাথে আমাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি করে। এতে থাকা ভিটামিন বি১ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়। এছাড়া মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নিঃসরণ ঘটতে সাহায্য করে যা আমাদের মন ভালো করে। এছাড়া আমাদের স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
৩। হাড়ের সুস্থতা: সানফ্লাওয়ার সীড হাড়ের সুস্থতাও বাড়ায়। এটি আমাদের হাড়কে মজবুত করে। আগেই বলেছি সূর্যমুখী ফুলের বিচিতে ভিটামিন ই থাকে। জানেন কি, এই ভিটামিন ই একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট? আর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হাড়ের ক্ষয় রোধ করে হাড়তে সুস্থ ও মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
৪। হজম: সূর্যমুখী ফুলের বীজে ফাইবার বা আঁশজাতীয় পদার্থ থাকে যা আমাদের হজমে সাহায্য করে। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৫। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: সূর্যমুখী বীজে থাকা উপকারী উপাদানগুলো আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৬। ওজন নিয়ন্ত্রণ: যারা ওজন কমাতে চান বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তারা সূর্যমুখী বীজ খেতে পারেন। এতে থাকা ফাইবার, প্রোটিন, ও ফ্যাট আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।
৭। পুষ্টিকর: সূর্যমুখীর বীজে থাকা আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যেমন ম্যাগনেসিয়াম, কপার, ফসফরাস ইত্যাদি। এগুলো আমাদের হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৮৷ ক্যান্সার: ক্যান্সার বর্তমান বিশ্বে এক আতঙ্কের নাম যার প্রতিষেধক আবিষ্কারের প্রাণপণ চেষ্টা চলছে। সূর্যমুখী বীজে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিক্যালস ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
৯। কোলেস্টেরল কমায়: সূর্যমুখী বীজ শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
১০৷ মন ভালো করে: সূর্যমুখী বীজে থাকা ভিটামিন বি৬ আমাদের দেহে সেরোটোনিন ও ডোপামিন হরমোন উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। এই হরমনগুলো আমাদের মন ভালো করতে সাহায্য করে।
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার অপকারিতা
অতি উত্তম জিনিসেরও ক্ষতিকর দিক থাকতে পারে। সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম - ৭ টি টিপস ও ট্রিকস জানলাম, উপকারীতাও জানলাম, এবার চলুন জেনে নিই সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার অপকারিতা কী কী।
১। অ্যালার্জি: কারও কারও মধ্যে সূর্যমুখী বীজ অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশনের কারণ হতে পারে। যেমন কারও বমি হতে পারে, শরীর চুলকাতে পারে, র্যাশ হতে পারে ইত্যাদি।
২। ওজন বৃদ্ধি: উপযুক্ত মাত্রায় খেলে যেমন এই বীজ ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে, তেমনি অতিরিক্ত খেলে আবার ওজন বাড়িয়েও তুলতে পারে। কারণ এতে রয়েছে ফ্যাট বা চর্বিজাতীয় উপাদান।
৩। কোষ্ঠকাঠিন্য: একদিকে যেমন সূর্যমুখীর বীজ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে, তেমনি অতিরিক্ত খেলে আবার কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণও হতে পারে। বিশেষ করে খোসাসহ খেলে এটি হতে পারে।
৪। কিডনি ড্যামেজ: সূর্যমুখীর বীজে থাকা ক্যাডমিয়াম নামক পদার্থ কিডনি ড্যামেজের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৫। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ: ঘরের ভেতরে সূর্যমুখীর বীজ থেকে গাছ হওয়ালে তা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
কাজেই, সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেই খেতে শুরু করে না দিয়ে, সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার অপকারিতা গুলোও জানুন। তাহলে সচেতনতার সাথে চলতে পারবেন।
উপসংহার - শেষ কথা
আশা করি এতোক্ষণে তাহলে আপনাদের সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম ৭ টি টিপস ও ট্রিকস, সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা, ও সূর্যমুখী বীজের অপকারিতা সম্পর্কে ভালো একটি ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি।
আর্টিকেলটি পড়ে যদি উপকৃত হন, তাহলে আপনার প্রিয়জনদের সাথেও শেয়ার করতে পারেন। এতে তারাও নতুন কিছু জানতে পারবেন এবং সুস্থ-সুন্দর একটি জীবনের দিকে আর এক ধাপ এগিয়ে যাবেন। এতোক্ষণ ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। (1214)
Thanks
আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url