শীতের সকাল নিয়ে কিছু কথা ১০ টি অপরূপ মুগ্ধতার পয়েন্ট
শীতের সকাল নিয়ে কিছু কথা ১০ টি অপরূপ মুগ্ধতা সম্পর্কিত এ আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে শীত ঋতুকে কেন্দ্র করে। প্রত্যেক ঋতুরই নিজস্ব রূপ রয়েছে। তেমনি শীত ঋতুও তার নিজস্ব রূপে নিজেকে সাজায়।
শীতের সকাল নিয়ে কিছু কথা এই আর্টিকেলটিতে আমি বাংলাদেশের শীতের সকালের বেশ কিছু দিক ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যা পুরোপুরি আমাদের বাস্তব জীবনের সাথে সম্পর্কিত। আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি আপনি পড়বেন এবং শীতের সকালের অপরূপ মুগ্ধতায় মুগ্ধ হবেন।
(নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান ক্লিক করুন)
সূচিপত্র: শীতের সকাল নিয়ে কিছু কথা ১০ টি অপরূপ মুগ্ধতা
- ভূমিকা
- শীতের আগমনী বার্তা
- সূর্যোদয়ের পূর্ব মুহূর্তে শীতের সকাল
- শিশিরে ভেজা সকাল বেলা
- শহরের শীতের সকাল
- গ্রাম বাংলার শীতের সকাল
- শীতের সকালে খেজুরের রস
- শীতের সকালের পিঠা পায়েস
- শীতের সকাল কি সবার জন্য উপভোগ্য
- উপসংহার - শেষ কথা
ভূমিকা
ষড়ঋতুর বাংলাদেশে শীতকাল অন্যতম একটি ঋতু। বাংলার প্রতিটি ঋতুর আলাদা আলাদা রূপে আমরা মুগ্ধ হই ও তা উপভোগ করি।
শীতের সকাল নিয়ে কিছু কথা বলতে গেলে শীতের আগমন, সূর্যোদয়, শিশির ভেজা সকাল, শহরে ও গ্রামের শীতের সকাল, রকমারি পিঠা - পায়েশ, খেজুর রস, গুড় ইত্যাদি সহ আরো অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হয়।
শীতের সকাল নিয়ে কিছু কথা তে শীতের অপরূপ মুগ্ধতার এই সকল বিষয় নিয়ে আজ আমরা কথা বলব। শীতের সকাল তথা শীত ঋতুর মুগ্ধতার গভীরে প্রবেশ করবো।
শীতের আগমনী বার্তা
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাক্ষেত্র আমাদের এই বাংলাদেশ। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে নয়ন জুড়ায় দেশি-বিদেশি সকল মানুষের। শীতের সকাল নিয়ে কিছু কথা বলতে গেলে প্রথমে বলতে হবে শীতের আগমনী বার্তা সম্পর্কে।
আরো পড়ুন: শীত প্রকৃতির রূপ অনুচ্ছেদ ও ২৬ টি মজার খাবার
হেমন্তের শেষে চারদিকে হিমেল হাওয়া ও কুয়াশার চাদরে মুড়ি দিয়ে আগমন ঘটে শীত ঋতুর। শীত তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের দ্বারা স্বমহিমায় ঘোষণা করে তার আগমনী বার্তা। হেমন্তের শেষের দিকে ধীরে ধীরে শীত শুরু সূর্যোদয়ের পূর্ব মুহূর্তে শীতের সকাল।
এ সময় দিনের বেলা তেমন শীত না লাগলেও শেষ রাতের দিকে কিছুটা শীত অনুভূত হয়। তবে এই সময় যে বাতাস বয়ে যায় তা ঠান্ডা থাকে। আমাদের শরীরের ত্বক তা অনুভব করতে পারে এবং ত্বকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়।
সূর্যোদয়ের পূর্ব মুহূর্তে শীতের সকাল
শীতের আগমনের পর ধীরে ধীরে শীত বাড়তে থাকে এবং কুয়াশার পরিমাণও বাড়তে থাকে। রাত যত গভীর হয় শীতের তীব্রতাও তত বারে এবং সূর্যোদয়ের পূর্ব মুহূর্তে শীতের পরিমাণ আরো বেশি থাকে। এ সময় বাতাসের আদ্রতা কমে যায় ও কনকনে শীত পড়ে।
এ সময় আমরা লেপ কাঁথা কম্বল মুড়ি দিয়ে সবাই ঘুমিয়ে থাকি। আমাদের ঘুম ভেঙে গেলেও অনেকেই শুয়ে থেকে অলস সময় পার করি। কেননা বাহিরে প্রচুর ঠান্ডা থাকে।
অত্যাধিক কুয়াশায় সবকিছু আচ্ছন্ন থাকে। সূর্যি মামা মুখ লুকিয়ে রাখে আকাশের কোন এক কোণে। ঘন কুয়াশার কারণে তার দেখা মেলা ভার। সূর্যোদয়ের পর ধীরে ধীরে যখন কুয়াশা কাটতে শুরু করে তখন সূর্যিমার মুখ আমরা দেখতে পাই।
শিশির ভেজা সকাল বেলা
শীতের সকাল নিয়ে কিছু কথা তে এখন আমরা শিশির ভেজা সকাল নিয়ে কথা বলব। ভোরে চারদিকে যখন ঘন কুয়াশা থাকে তখন সেই কুয়াশা মাঠ, ঘাট, গাছপালা, রাস্তার পাশে সবুজ ঘাস সহ সর্বত্রই পরে।
গাছের পাতা, ধানের শীষ, সবুজ ঘাস, বিভিন্ন ধরনের শাক এর উপর কুয়াশা জমে জমে অনেকটা গোল বিন্দুতে পরিণত হয়। যাকে আমরা বলি শিশির বিন্দু। এই শিশির বিন্দুকে অনেকে মুক্তোর সাথে তুলনা করেন। কেননা শিশির বিন্দুর উপর সকালের সূর্যের আলো পড়লে তা মুক্তোর মত জ্বলজ্বল করতে থাকে।
শিশির ভেজা সকাল বেলার এই দৃশ্য শীত প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের জানান দেয়। আর রূপসী বাংলার এই অপরূপ মুগ্ধতায় আপনি হবেন মুগ্ধ।
শিশির ভেজা সকাল বেলা মাঠ, রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় আমাদের পা শিশিরে ভিজে যায়। সূর্যের আলো যখন বাড়তে থাকে তখন শিশিরবিন্দু আস্তে আস্তে মিলিয়ে যায়। শীতের সকালের এই অপরূপ খেলা সত্যিই অসাধারণ।
শহরের শীতের সকাল
শীতের সকাল নিয়ে কিছু কথা তে শহরের শীতের সকাল কেমন হয় তা আলোচনা করবো। ঋতু বৈচিত্র্যের বাংলাদেশে শীতের সকাল সব জায়গায় এক রকম হয় না। শহরের শীতের সকাল এবং গ্রামের শীতের সকালের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
শহরের শীতের সকালের প্রকৃতি আর গ্রামের শীতের সকালের প্রকৃতি একরকম নয়। শহরে শীতের তীব্রতা গ্রামের চেয়ে একটু কম থাকে। সেখানে ঘনবসতি, দালান-কোঠা বেশি হওয়ায় এবং গাছপালা কম হওয়ায় শীতের তীব্রতা কম হয়।
শহরে লোকজন ব্যস্ততা না থাকলে সাধারণত একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠে। আর শীতকালে কুয়াশাচ্ছন্ন ও বেশ ঠান্ডা পড়ায় বেশি দেরি হয়। ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য সকলে শীত বস্ত্র পরিধান করে। শহরবাসী শীতের সকালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তেমন উপভোগ করতে পারে না।
গ্রাম বাংলার শীতের সকাল
শীতের সকালের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং শীতকে উপভোগ করতে হলে গ্রামে আসতে হবে। আমাদের দেশে শীতকালীন সময় শুরু হয় নভেম্বরের শেষে বা ডিসেম্বরের শুরুতে। শহরবাসীদের এ সময় শীতকালীন পেশাগত ছুটি বা বাচ্চাদের স্কুল কলেজের ছুটি থাকে। সে সময় অনেকেই শীতের আমেজ বা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে গ্রামে বেড়াতে আসেন।
গ্রামের কুয়াশাচ্ছন্ন চারপাশ, শীতের সকালের সূর্যোদয়, ধীরে ধীরে রক্তিম সূর্যকে হাসতে দেখা, শিশির ভেজা সকাল বেলা, খেজুর রস, খেজুর গুড়, রকমারি পিঠা পায়েস, সকালবেলা ধোঁয়া উঠানো গরম গরম পিঠা, সকাল বেলার শিশির ভেজা তাজা শাকসবজি ইত্যাদি সবকিছুই গ্রাম বাংলার মানুষ উপভোগ করে থাকেন।
শীতের সকালে খেজুরের রস
শীতের সকাল নিয়ে কিছু কথা বলতে গেলে খেজুরের রসের কথা বলতেই হবে। কেননা এটাকে শীত প্রকৃতির একটা বৈশিষ্ট্যের মতোও বলা যেতে পারে যে, শীতকালে আমাদের দেশে খেজুরের রস পাওয়া যায়।
গ্রামে খেজুর গাছে ওঠে গাছি কাঁচি দিয়ে গাছ ছেচে ও কেটে দড়ি দিয়ে বেঁধে রসের মাটির হাড়ি পাতে। পরদিন গাছি গাছ থেকে একদম ফ্রেশ ও মিষ্টি রসে ভরা হাড়ি নামায়। যার স্বাদ, ঘ্রাণ এবং গুণগত মান অতুলনীয়।
আমরা অনেকেই শীতের সকালটা শুরু করি একদম গাছ থেকে পারা তাজা খেজুরের রস খেয়ে। এই খেজুরের রস জাল দিয়ে তৈরি করা হয় এক নম্বর খেজুরের গুড়। এই গুড় বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।যেমন :ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, চকলেট গুড়, চিটেগুড়, হাজারীগড়, ভেলি গুড়, দানা গুড় ইত্যাদি।
এসব গুড় দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। এই গুড় দিয়ে রকমারি পিঠা, পায়েস, সন্দেশ, মিষ্টি সহ বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক ও লোভনীয় খাবার তৈরি করা হয়। যা কিনা গুণে মানে স্বাদে অনন্য।
শীতের সকালের পিঠা পায়েস
শীতের সকাল নিয়ে কিছু কথা তে পিঠা পায়েসের কথা না বললেই নয়। আমাদের দেশে শীত আসে এক ভিন্ন আমেজ নিয়ে। শহর গ্রাম সব জায়গায় শীতকালে পিঠা পায়েসের ধূম পরে।
শহরে মানুষ ব্যস্ততার কারণে বাসায় পিঠা কম তৈরি করে। তারা বেশিরভাগই পিঠা কিনে খায়। শহরে রাস্তার পাশে সকাল সন্ধ্যায় বিভিন্ন ধরনের পিঠার দোকান বসে। এসব দোকানে ভাপা, চিতই, মেরা, পাটি সাপটা সহ বিভিন্ন ধরনের পিঠা ও ভর্তা পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন: শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় ও ৫ টি কার্যকরী টিপস
শহরের থেকে গ্রামের মানুষের শীতের সকালে পিঠা পায়েশ তৈরির প্রবণতা বেশি দেখা যায়। গ্রামে সকাল বেলা গরম গরম ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা খাওয়ার জন্য ছেলে মেয়েদেরকে চুলার পাশে জড়ো হয়ে বসে থাকতে দেখা যায়।
এছাড়া খেজুরের রস দিয়ে বানানো বিভিন্ন জাতের পিঠা, দুধ চিতই, সেমাই পিঠা, পাটিসাপটা, পুলি পিঠা, নারকেল পুলি, নকশী পিঠা, মালপোয়া, খেজুর পিঠা, তেলের পিঠা সহ আরো নানাজাতের পিঠা বানানো হয়।
পিঠার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পায়েস ও ক্ষীর তৈরি করা হয়। যা খুবই সুস্বাদু হয়ে থাকে।
শীতের সকাল কি সবার জন্য উপভোগ্য
শীতের সকাল কি সবার জন্য উপভোগ্য শীতের সকাল নিয়ে কিছু কথা বলতে গেলে এই কথাটি আমাদের সামনে আসে। শীতকালের প্রকৃতি, শীতের আবহাওয়া আমরা উপভোগ করি ঠিকই কিন্তু সব সময় ও সবার জন্য তা উপভোগ্য নয়।
কুয়াশা এবং অতিরিক্ত ঠান্ডায় মানুষের সাধারণ জীবন যাপন ব্যাহত হয়। তারা তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেনা। শীতের সময় কয়েকদিন ধরে শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়। এটা সকলের জন্যই খুবই সব কষ্টদায়ক। যারা দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষ তারা কাজ করতে পারে না ফলে অনেক সমস্যা হয়।
অনেকে অতিরিক্ত শীতের কারণে আগুন ধরিয়ে আগুনের তাপ নেয়। শীতের সময় ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এ সময় বিশেষ করে শিশু এবং বৃদ্ধরা বেশি কষ্ট ভোগ করে।
তাই বলা যায় যে, শীত সব সময় সবার জন্য উপভোগ্য নয়।
উপসংহার - শেষ কথা
শীতের সকাল নিয়ে কিছু কথা অপরূপ মুগ্ধতা নিয়ে লেখা আমার এই আর্টিকেলটিতে আমি শীত ঋতুর বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। কিছু সমস্যা থাকলেও শীতের সকালের অপরূপ সৌন্দর্যে বিভোর আমরা সকলেই।
সেই সাথে শীতকালীন সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর বিভিন্ন খাবার দাবার যেমন: শাকসবজি, ফলমূল, পিঠা, পায়েস, ক্ষীর ইত্যাদি তো আছেই। মূলত শীতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে এবং শীতের আমেজ উপভোগ করার জন্য শিশির ভেজা একটি সুন্দর শীতের সকাল সকলেরই কাম্য। আশা করি, শীতের সকাল নিয়ে কিছু কথা সম্পর্কিত এই আর্টিকেলটি আপনাদের সবার ভালো লেগেছে। (1219)
Thanks
আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url