শীত প্রকৃতির রূপ অনুচ্ছেদ ও ২৬ টি মজার খাবার
শীত প্রকৃতির রূপ অনুচ্ছেদ সম্পর্কিত আজকের আলোচনায় আপনাকে স্বাগত। আজ আমরা আলোচনা করবো শীতকাল এবং এর নানা চড়াই-উৎরাই নিয়ে। শীত কখন পড়ে, কেন পড়ে, শীত প্রকৃতির রূপ অনুচ্ছেদ, শীতের ফলমূল, ফুল, পাখি, এমনকি শীতের নেতিবাচক দিক নিয়েও।
বাংলাদেশে এখন শীত পড়া শুরু হচ্ছে। অনেক জায়গায় পুরোদমে সোয়েটার-জ্যাকেট পরে মানুষকে চলাফেরা করতে হচ্ছে। এই শীতের প্রকোপ সামনে আরও বাড়বে। সাথে বাড়বে শীত প্রকৃতির রূপ এবং একই সাথে শীতের বেদনা।
আজকের আর্টিকেলটিতে সেই সব বিষয়েই আলোকপাত করা হবে। চলুন তাহলে শুরু করি আমাদের শীত প্রকৃতির রূপ অনুচ্ছেদ সম্পর্কিত আজকের আলোচনা।
সূচিপত্র: শীত প্রকৃতির রূপ অনুচ্ছেদ ও ২৬ টি মজার খাবার
- ভূমিকা
- বাংলাদেশে শীতকাল কখন
- শীতকালে শীত কেন পড়ে
- শীত প্রকৃতির রূপ অনুচ্ছেদ
- শীতের ফুল
- শীতের ফলমূল ও শাকসবজি
- শীতের পিঠাপুলি
- শীতের বেদনা
- শীত সম্পর্কিত সতর্কতা
- উপসংহার
ভূমিকা - (শীত)
আর্টিকেলটি যখন লেখা হচ্ছে তখন শীত প্রকৃতির রূপ অনুচ্ছেদ বিষয়টি অতি প্রাসঙ্গিক। কারণ বাংলাদেশে এখন শীত পড়তে শুরু করেছে। রাতে শিশির আর ভোরে কুয়াশা ভেজা এই শীতকালে শীত প্রকৃতির রূপ অনুচ্ছেদ প্রাসঙ্গিক হবে না তো কখন হবে?
দেশের বিভিন্ন স্থানে হাড়কাঁপানো শীত না পড়লেও ভালোই ঠান্ডা পড়ছে। অনেকের এখনই শীতবস্ত্রের দরকার হচ্ছে। দ্রুত রাত নেমে আসছে। আর কিছুদিন পর শীতের পিঠা-পুলিরও ধুম পড়ে যাবে গ্রামেগঞ্জে।
বাজারে আসবে শীতকালীন ফলমূল ও শাকসবজি, গাছে গাছে দেখা দেবে শীতের ফুল। বিভিন্ন পুকুর-নদীতে নেমে আসবে অতিথি পাখিরা। শীত প্রকৃতির রূপ অনুচ্ছেদ টিতে আমরা সে সবই আলোচনা করবো।
বাংলাদেশে শীতকাল কখন?
শীত প্রকৃতির রূপ অনুচ্ছেদ বিষয়ে যাওয়ার আগে জেনে নিই বাংলাদেশে শীতকাল কখন। শীতকাল বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে হতে পারে। কোন কোন দেশে আবার সবসময়ই শীত থাকে। সেগুলো হলো শীতপ্রধান দেশ। তবে আমাদের বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল। এখানে সর্বদা শীত বা গরম থাকে না।
বাংলাদেশে শীত পড়া শুরু হয় মূলত নভেম্বর মাস থেকে। এসময়ে তেমন মারাত্মক শীত পড়ে না। তবে আবহাওয়া বেশ শীতল হয়ে যায়। দ্রুত সন্ধ্যা নেমে আসে। রাত দীর্ঘ হতে শুরু করে।
ডিসেম্বরে এই শীত বেশ জাঁকিয়ে বসে। এ সময় পুরোদমে শীত পড়তে থাকে। সবকিছু কুয়াশায় ঢাকা থাকে। এই সময় গ্রামেগঞ্জে পিঠাপুলি তৈরি হয়। শীতের সাথে খাপ খাওয়াতে গরম গরম এসব পিঠাপুলি আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য।
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দিকে শীত সবচাইতে মারাত্মক হয়। এ সময় যাকে বলে হাড়কাঁপানো শীত পড়ে। এই সময়টার পর আস্তে আস্তে শীত বেশ সহনীয় পর্যায়ে চলে আসে। অবশেষে শীতকাল গিয়ে আসে বসন্তকাল।
শীতকালে শীত কেন পড়ে?
শীতকালে শীত পড়ার কারণ রয়েছে বেশ কিছু। শীতকাল বলতে আমরা যে সময়টা বুঝি, এই সময়ে পৃথিবী এমন অবস্থানে থাকে যে এই অঞ্চলে সূর্যের আলো তির্যকভাবে পড়ে। ফলে বেশি তাপ পৌঁছাতে পারে না।
এছাড়া এ সময় দিন ছোট ও রাত বড় হয়। সেটাও হয় পৃথিবীর বিশেষ অবস্থানের কারণেই। ফলে সূর্য থেকে যতোটা তাপ এই অঞ্চলে সারাদিনে পৌঁছায়, দীর্ঘ রাতে সেই সব স্থায়ী হতে পারে না।
অর্থাৎ, পৃথিবীর বিশেষ অবস্থানের ফলে সূর্য থেকে বেশি তাপ একদিকে এখানে আসতে পারে না, আরেকদিকে যতোটুকু আসে সেটুকুও স্থায়ী হতে পারে না। এজন্য শীতকালে প্রকৃতির তাপমাত্রা কমে যায় তথা শীত পড়ে।
শীত প্রকৃতির রূপ অনুচ্ছেদ - সৌন্দর্য
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, ও বসন্ত – এই ছয় ঋতুর পর্যায়ক্রমিক আবর্তনে বাংলার প্রকৃতি হয়ে উঠেছে বৈচিত্র্যময় ও সুন্দর। প্রতিটি ঋতুরই রয়েছে স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য। শীতকালও এর ব্যতিক্রম নয়। শীত প্রতিবছর আসে তার নিজস্ব সৌন্দর্য নিয়ে।
শীতের সকাল হয় কুয়াশা-মাখানো, শীতল, নিরিবিলি। গ্রামেগঞ্জে হোক বা শহরে, এ সময় সবাই চায় উষ্ণতা। অনেককেই তাই দেখা যায় বিভিন্ন জায়গায় আগুন পোহাতে। এই দৃশ্য গ্রাম ও শহর উভয় স্থানেই দেখা যায়।
শীতকে ঘিরে গড়ে উঠেছে আমাদের পিঠাপুলির সংস্কৃতি। সুপ্রাচীন কাল থেকেই শীত মানেই নানা স্বাদের পিঠাপুলি। এসব পিঠা খেতে যেমন অসাধারণ, দেখতেও তেমন নজরকাড়া। প্রতিটি পিঠাই এক একটি অনন্য শিল্পকর্ম।
শীতের সকালের আরেকটি আকর্ষণ হলো খেজুরের রস। গাছিরা রাতে খেজুরগাছে কলসী ঝুলিয়ে রাখেন। পরদিন ভোরে পূর্ণ হয় সুস্বাদু রসে। শীত শীত সকালে এই গা হিম করা মিষ্টি রস যে না খেয়েছে, তাকে এর মজা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। যদিও বর্তমানে নিপাহ ভাইরাসের মতো বিভিন্ন রোগবালাইয়ের ভয়ে এই রস সরাসরি খেতে নিরুৎসাহিত করা হয়।
শীতকালে গাছের পাতা পড়ে যায়। এজন্য চারপাশে একটা নির্জীবতার ছোঁয়া আসে। তবে এর পাশাপাশি জন্ম নেয় শীতকালীন নানা ফুল, উৎপন্ন হয় নানা রংবেরঙের ফলমূল ও শাকসবজি। অর্থাৎ একদিকে যেমন প্রকৃতিতে নির্জীবতা আসে, তেমনি অন্যদিকে আসে নতুন এক সজীবতা।
শীতের রোদ তেমন ঝাঁঝালো হয় না। এই রোদ হয় নরম, কোমল। কোমল এই রোদে বসে অনেকেই আচার খান, অনেকে খান পিঠাপুলি, অনেকে গল্পগুজব করেন। অনেককে আবার ব্যস্ততায় ছুটতে হয় কর্মস্থলে।
তবে শীত প্রকৃতির রূপ উপভোগ করা সকলের ভাগ্যে জোটে না। শীতকাল অনেকের জন্যই এক কষ্টের সময়। বিশেষ করে গৃহহীন বা দরিদ্র মানুষ, পথপ্রাণী, ও বিভিন্ন রোগে যারা ভোগেন তাদের জন্য শীতকাল মোটেও সুখকর নয়। তাই এই সময় আমাদের যার যার জায়গা থেকে যথাসাধ্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত এবং সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত।
নতুন রঙে রাঙিয়ে তোলে নানা শীতের ফুল
শীতকালে গাছপালা তাদের পাতা হারায়। ফলে প্রকৃতিতে একটা নির্জীবতা দেখা দেয়। তবে একদিকে নির্জীবতা আসলেও প্রকৃতিকে নতুন নতুন রঙে রাঙিয়ে তোলে নানা শীতের ফুল।
এ সময় গাঁদা, গোলাপ, জিনিয়া, ডালিয়া, সূর্যমুখী, চন্দ্রমল্লিকার মতো নানা ফুল ফুটে প্রকৃতি যেন নববধূর সাজে সেজে ওঠে। এসব রংবেরঙের বাহারী ফুলগুলো যেকোন ফুলপ্রেমিকের মনেই আনন্দের তরঙ্গ তুলবে।
শীতকাল এজন্যই ফুল ভালোবাসা মানুষদের জন্য একটি অসাধারণ সময়। এ সময় এমন নানা ফুল ফোটে যা অন্য সময় পাওয়া যায় না। শীতের মূল আকর্ষণগুলোর মধ্যে তাই অন্যতম হলো শীতের ফুল।
শীতের ফলমূল ও শাকসবজি
ফুলের পাশাপাশি এ সময় পাওয়া যায় বিভিন্ন নজরকাড়া ও পুষ্টিকর ফলমূল এবং শাকসবজি। শীতকালীন এসব ফলমূল ও শাকসবজি দেখতে যেমন সুন্দর, খেতে যেমন অসাধারণ, ঠিক তেমন পুষ্টিগুণেও ভরপুর। শীত এলেই বাজার ভরে ওঠে এসব নানা পদের ফলমূল ও শাকসবজিতে।
শীতের ফলমূল ও শাকসবজির মধ্যে রয়েছে:
- গাজর
- শিম
- ক্যাপসিকাম
- ব্রকোলি
- বিট
- সফেদা
- জলপাই
- কমলা
- কুল বরই
- ফুলকপি
- বাঁধাকপি
- মূলা
- পেঁয়াজের ফুলকি
- শালগম
এছাড়া আরও অনেক শাকসবজি ও ফলমূলে এ সময় বাজার টইটুম্বুর হয়ে ওঠে। এসব ফলমূল ও শাকসবজি আমাদের শরীরের জন্য প্রচুর উপকারী। এগুলো আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, চেহারা সুন্দর করে, শরীরের অপরিহার্য কিছু ভিটামিনের যোগান দেয়। তাই শীতকালীন এসব ফলমূল ও শাকসবজি আমাদের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখা উচিত।
১২ রকমের মজার মজার শীতের পিঠাপুলি
শীতকাল মানেই বাংলার পিঠাপুলি। এ সময় বাংলার ঘরে ঘরে তৈরি হয় নানা স্বাদের, নানা রূপের পিঠাপুলি। এসব পিঠার আবার আছে বাহারি নানা নামও। যেমন:
- ভাপা পিঠা
- চিতই পিঠা
- দুধ চিতই
- পুলি পিঠ
- দুধ পুলি
- ক্ষীর পুলি
- পাটিসাপটা
- ফুলঝুড়ি
- ধুপি পিঠা
- পাকন পিঠা
- নকশি পিঠা
- মালপোয়া
আরও কত শত নাম! এতো পিঠা এ সময়ে তৈরি হয় যা কল্পনার বাইরে। শীতের এসব বিচিত্র পিঠাপুলি বর্তমানে দেশ ছেড়ে বহির্বিশ্বেও সুনাম কুড়াচ্ছে। পিঠাপুলির এই ঐতিহ্য আমাদের গর্ব।
শীতের দরিদ্র মানুষের ও বেদনা
শীত প্রকৃতির রূপ উপভোগ করার সৌভাগ্য সকলের থাকে না। এ সময়টা অনেকের জন্যই হয় কষ্টের। যেমন:
- দরিদ্র মানুষজন, যারা পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ্য রাখে না। শীত বেশি পড়লে তারা শীতে কষ্ট পায়।
- গৃহহীন মানুষদের এ সময় কষ্ট পেতে হয়। কারণ তাদের না থাকে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র, না আশ্রয়।
- পথপ্রাণীদের এ সময় কষ্ট সবচাইতে বেশি হয়। এই অবলা জীবগুলো তাদের কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারে না। তারা পথেঘাটে ছুটে বেড়ায় একটু উষ্ণতার আশায়। অনেকের পেটে ঠিকমতো খাবারও জোটে না। অনেক ছোট কুকুর-বিড়ালের বাচ্চারা এসময় কষ্ট পায়। মানুষের জন্য অনেকে শীতবস্ত্র নিয়ে এগিয়ে এলেও এদের জন্য সেটুকুও করা হয় না।
তাই আমাদের উচিত এ সময় যার যার জায়গা থেকে সাধ্যমতো সহানুভূতিশীল হওয়া। আপনার আশেপাশের অসহায় মানুষ ও প্রাণীদের দিকে এ সময় বাড়িয়ে দিন সাহায্যের হাত। এতে তাদের কষ্ট কমবে, আপনিও মনে এক অন্য রকম শান্তি পাবেন।
শীত সম্পর্কিত সতর্কতা
শীত প্রকৃতির রূপ অনুচ্ছেদ থেকে আমরা জেনেছি শীতকালে নানা অতিথি পাখির সমাগম এই অঞ্চলে হয়। এসব পাখি দূরদূরান্ত থেকে আমাদের দেশে আসে একটু উষ্ণতার আশায়। কিন্তু এক শ্রেণীর বর্বর মানুষ এসব পাখির অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের শিকার করে।
অতিথি পাখি হত্যা আমাদের রাষ্ট্রীয় আইনে গর্হিত অপরাধ। তাই এ সময় অতিথি পাখিদের প্রতি সদয় ও সশ্রদ্ধ হোন। তারা জীবন বাঁচাতে এখানে ছুটে এসেছে। তাদের মানুষের নিষ্ঠুরতার শিকার হওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে।
এ সময় আমরা নিজেরা অতিথি পাখি শিকার বা তাদের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকবো৷ আর অন্যদেরও এ ব্যাপারে সতর্ক করবো। তাদের রক্ষা করা আমাদেরই কর্তব্য।
উপসংহার - শেষ কথা
আজকের শীত প্রকৃতির রূপ অনুচ্ছেদ আপনার কেমন লাগলো? আশা করি লেখাটি পড়তে আপনার ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি পড়ে শৈশবের কথা মনে পড়েছে কি? যদি মনে পড়ে থাকে তাহলে অন্যদের সাথে শেয়ার করে তাদেরও শৈশবের সুখময় স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে পারেন।
আশা করি শীত প্রকৃতির রূপ অনুচ্ছেদ সম্পর্কিত আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের একটা ভালো সময় দিতে সফল হয়েছে। এই শীতে সবাই সুস্থ ও ভালো থাকুন সেই কামনা করে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি। (1214)
Thanks
আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url