মন ভালো করার ইসলামিক উপায় ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ৫ আমল

মন ভালো করার ইসলামিক উপায় ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কিছু আমল এ বিষয় গুলো জেনে রাখা আমাদের সকলের উচিত। কারণ মন খারাপ হওয়া খুবই স্বাভাবিক এবং আত্মকেন্দ্রিক একটি বিষয়। মন খারাপ কিংবা অশান্ত থাকলে আপনি কোন কিছুই স্বাভাবিকভাবে করতে পারবেন না।

image

কেননা এই অশান্ত মন আমাদের দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে শুরু করে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপেই প্রভাব বিস্তার করে। আমাদের সবারই বিভিন্ন কারণেই মন খারাপ হতে পারে এবং সেই অশান্ত মনকে ভালো করতে আমরা নানা রকম উপায়ে চেষ্টা করে থাকি।

এই ক্ষেত্রে, মন ভালো করার ইসলামিক উপায় ও রাসুলল্লাহ (সাঃ) এর পালন করা কিছু আমল গুলোই আপনার মন ভালো করার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী ও উত্তম সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে।

সূচিপত্র: মন ভালো করার ইসলামিক উপায় ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কিছু আমল

মন ভালো করার কিছু কথা (ভূমিকা)

প্রতিটি মুহূর্তই আমাদের মন ভালো রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মন হচ্ছে মানব দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চালিকা শক্তি। তাই মন ভালো করার ইসলামিক উপায় গুলোই হতে পারে আপনার জন্য শ্রেষ্ঠ এবং সর্বোত্তম উপায়।

আপনার মনে জমে থাকা সকল কষ্ট এবং খারাপ লাগা দূর করে মন ভালো করতে আপনি হয়তো অনেক উপায়ই অবলম্বন করে থাকেন। তবে মন ভালো করার ইসলামিক উপায়গুলো আপনার মন শুধু ভালই করবে না বরং আপনার মনে এনে দিবে এক অন্যরকম শান্তির অনুভূতি।

মানুষের মনও মেঘের মতোই ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়, কখনো সাদা তো কখনো কালো আবার কখনো নীল তো কখনো দোসর। ঠিক তেমনি আপনার ভালো থাকা মনটিও হঠাৎ করেই কোনো কারণে খারাপ হয়ে যেতে পারে। তবে মন খারাপের কারণ যাই হোক আপনার মন সুস্থ অথবা ভালো রাখাটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মন আপনার শারীরিক স্বাস্থ্য ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে।

আপনার মনে যখন দুশ্চিন্তা কিংবা হতাশা থাকবে তখন মনে খুব অস্থিরতা কাজ করবে, আপনার মানসিক চাপ বেড়ে যাবে। আর আপনি মনের অস্থিরতা নিয়ে কখনোই কোনো কাজ স্বাভাবিকভাবে করতে পারবেন না এবং আপনি শারীরিকভাবেও দুর্বলতা অনুভব করবেন। তাই মন ভালো করার ইসলামিক উপায় গুলো হতে পারে আপনার জন্য যথাযথ উপায়।

আপনার মনকে সব সময় সুস্থ রাখতে এবং নিজেকে মানসিক চাপমুক্ত রাখতে আমার এই আর্টিকেলটি বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। মন ভালো করার ইসলামিক উপায় গুলো নিয়ে আমরা আজকের এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনাদের জন্যই পুঙ্খানুপুঙ্খ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল।

মন ভালো করার ইসলামিক উপায় ৫ আমল

আপনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে চাইলে অবশ্যই আপনার মনকে রাখতে হবে হতাশা ও চাপমুক্ত। আর মন ভালো করার ইসলামিক উপায় গুলোই আপনার মনের সকল হতাশা ও চাপ দূর করে আপনার মনকে করবে ভালো। মন ভালো করার ইসলামিক উপায় গুলো নিচে পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো।

  1. আল্লাহর যিকির করা
  2. আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল রাখা
  3. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা
  4. সামর্থ্য অনুযায়ী দান সদকা করা
  5. সৎ ব্যক্তিদের সংস্পর্শে থাকা

আল্লাহর যিকির করা: আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, "যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরকে শান্ত রাখে। জেনে রাখো আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।" (সূরা: রা'দ ২৮)--- পবিত্র আয়াতটির মাধ্যমেই বোঝা যায় যে, আল্লাহর যিকির দ্বারাই আপনার মনের হতাশা দূর হয়ে যাবে এবং মনে শান্তি ফিরে আসবে ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল রাখা: পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেছেন, "নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।" (সূরা: আল ইনশিরাহ ৫)--- পবিত্র এই আয়াতটির দ্বারা এখানে বলা হয়েছে।

আমাদের দুঃখ কষ্টগুলো চিরস্থায়ী নয় তাই জীবনের ক্ষণস্থায়ী দুঃখ কষ্ট নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে আল্লাহর উপর আমাদের তাওয়াক্কুল বা ভরসা রাখতে হবে। কেননা তারপরে রয়েছে শান্তি ও স্বস্তি। আর ঈমানদার ব্যক্তিরা সর্বাবস্থায় এক আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা রাখেন এবং দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকেন।

পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা: মন ভালো করার ইসলামিক উপায় গুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা। আমাদের মনের সকল খারাপ দিক, পেরেশানি, দুঃখ কষ্ট এবং হতাশা দূর করার ক্ষেত্রে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের কোনোই বিকল্প নেই। তাই মন ভালো রাখতে এবং চাপমুক্ত থাকতে আপনি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করুন।

সামর্থ্য অনুযায়ী দান সদকা করা: আপনার মন খারাপ থাকলে কিংবা মনে কোন কারণে অশান্তি হলে তখন নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী গরিব-দুঃখী বা অসহায়দের মাঝে বেশি বেশি দান সদকা করা একটি উত্তম ইসলামিক উপায়। এতে করে আপনার মনের অশান্তি দূর হয়ে মনে শান্তি আসবে এবং মন ভালো থাকবে।

সৎ ব্যক্তিদের সংস্পর্শে থাকা: আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা পবিত্র কোরআন শরীফে ইরশাদ করেছেন, "হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হয়ে যাও।" (সূরা: আত তাওবাহ, ১১৯)

আপনার মন খারাপ থাকলে কিংবা মন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকলে তখন আপনাকে শুধুমাত্র একজন সত্যবাদী অথবা মুমিন কোনো ব্যক্তিই ভালো পরামর্শ দিয়ে মনের দুশ্চিন্তা দূর করতে সহায়তা করবে। এছাড়াও সৎ ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকলে আপনার মনের খারাপ লাগা এমনিতেও কম অনুভূত হবে।

মন ভালো করার ইসলামিক উপায় গুলো আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে। এই উপায় গুলো আপনি আপনার প্রয়োজনে অথবা নিয়মিত অবলম্বন করে আপনি আপনার মনকে সবসময়ই সুস্থ ও ভালো রাখতে পারেন।

মন ভালো করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কিছু আমল

ইসলাম আমাদের মনকে সুস্থ ও ভালো রাখার ক্ষেত্রে দিয়েছেন প্রয়োজনীয় নির্দেশনা আর বলেছেন, মনে সুস্থতা ও অসুস্থতা মানবদেহকেও প্রভাবিত করে থাকে। মনের সুস্থতা ও অসুস্থতার বিষয়ে হাদিস শরীফে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

"জেনে রাখো, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা (মুদগা) আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখো, সে গোশতের টুকরাটি হলো কলব (অন্তর)। (সহিহ বুখারী, হাদিস-৫২, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা- ৩৯-৪০)

আমাদের মনের পেরেশানি দূর করে মন ভালো করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর পালন করা কিছু আমল নিচে আলোচনা করা হলো।

বিপদ দূর করার দোয়া, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে অবগত আছি কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি যদি তা পাঠ করে, আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তার সেই বিপদ দূর করে দেবেন। (সুবহানাল্লাহ) সেই দোয়াটি হচ্ছে আমার ভাই ইউনুস (আ.) এর দোয়া।

এর বাংলা উচ্চারণ, লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন। অর্থ- হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি নিজের প্রতি অবিচার করেছি। (তিরমিজ, ৩৫০৫)

দুশ্চিন্তা ও পেরেশানির দোয়া, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) দুশ্চিন্তা ও পেরেশানির সময় একটি বিশেষ দোয়া পাঠ করতেন। দোয়াটি হলো, "আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজু বিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি ওয়া কাহরির রিযাল।

অর্থ- হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষের দমন-পীড়ন থেকে। (সহীহ বুখারী , ২৮৯৩)

দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় নবী করীম (সাঃ) এই দোয়াটি পড়তেন, দোয়াটির বাংলা উচ্চারণ হলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আজীমুল হালীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আজীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরদ্বি ওয়া রাব্বুল আরশিল কারীম।

অর্থ- ওই আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই যিনি মহান ও সহনশীল, ওই আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই যিনি আরশে আলীমের মালিক, ওই আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই যিনি এই আসমান জমিন এবং মহা আরশের মালিক। (মুসলিম, ২০৯২)

আমাদের প্রিয় নবী কারীম (সাঃ) এর পালন করা এবং উপরে বর্ণিত দোয়া গুলো নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহ আপনার সমস্ত পেরেশানি দূর করে আপনার মনে প্রশান্তি ফিরিয়ে দিবে ইনশাআল্লাহ।

মন ভালো করার তিনটি সুন্নতি উপায়

image

আমাদের পার্থিব জীবনের প্রতিটি বিষয় নিয়েই রয়েছে ইসলামিক দিক-নির্দেশনা, ঠিক তেমনি মন ভালো করার বিষয়েও রয়েছে নির্দেশনা। এখানে আপনার জন্য মন ভালো করার তিনটি সুন্নতি উপায়ও আলোচনা করা হয়েছে।

  1. সালাম বিনিময় করা
  2. হাসি মুখে কথা বলা
  3. সুন্দর ধারণা পোষণ করা

সালাম বিনিময় করা: সালামের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করা যায়। কেননা সালাম মানে পারস্পারিক শান্তির জন্য দোয়া করা। তাই আপনি যদি নিজের মধ্যে বেশি বেশি সালাম দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন, তবে অন্তরে শান্তি অনুভব করবেন পাশাপাশি আপনার মনও ভালো থাকবে।

হাসি মুখে কথা বলা: হাসি মুখে কথা বলার কারনে আমাদের মনের চাপ হ্রাস পায় এবং মন ভালো থাকে। তাছাড়া হাসিমুখে কথা বলা নবীজি (সাঃ) এর একটি সুন্নত। এমনকি যারা সব সময় হাসি মুখে কথা বলে তাদেরকে সবাই পছন্দ করে।

সুন্দর ধারণা পোষণ করা: আল্লাহর রাসূল (সাঃ) হাদীসে বলেছেন, "সুন্দর ধারণা সুন্দর ইবাদতের অংশ।" সুন্দর ধারণা পারস্পারিক সম্পর্ক এবং ভ্রাতৃত্ববোধ মজবুত করে। যারা সব সময় সুন্দর ধারণা পোষণ করে তাদের মানসিক প্রশান্তি বজায় থাকে এবং সব সময় মন ভালো থাকে। সুন্দর ধারণা পোষণ করার ফলে তাদের মনে বিরূপ চিন্তা আসতে পারে না।

মন ভালো করার ইসলামিক উপায় গুলোর মধ্যে এই সুন্নত উপায় গুলোও আপনার মন ভালো করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

মন খারাপের কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ

এই বিশ্ব জগতে আপনার-আমার মন খারাপের অগণিত কারণ রয়েছে যা গণনা করেও বের করা সম্ভব নয়। তবে মন খারাপের অসংখ্য কারণগুলো থেকে কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ জেনে নেয়া যেতে পারে যেমন-

  • পারিবারিক কলহের জেরে আপনার মন খারাপ হতে পারে।
  • আপনার অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে মন খারাপ হতে পারে।
  • আপনার অতীতের কোনো ভালো স্মৃতি মনে পড়লে মন খারাপ হতে পারে।
  • আপনি আপনার বিশ্বস্ত কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতারিত হলে আপনার মন খারাপ হবে।
  • প্রিয়জন কিংবা বন্ধু-বান্ধবের সাথে কলহের কারণে মন খারাপ হতে পারে।
  • কর্মস্থলে প্রত্যাশিত সফলতা অর্জিত না হলে অথবা আপনার বসের সাথে কোনো কারনে ঝামেলা হলে মনে অশান্তি দেখা দিতে পারে।
  • পরিবারের কোনো সদস্য বা নিকট আত্মীয় বা খুব কাছের কেউ প্রয়াত হলে খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনার মনে কষ্ট আসবে এবং আপনার মন খুব খারাপ হবে।
  • আপনার কাছের মানুষদের কাছ থেকে অধিকার ও প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্য না পেলে মন খারাপ হয়।

এমন আরো অসংখ্য কারণ রয়েছে যার ফলে আমাদের মন খারাপ হতে পারে। আপনার মন খারাপের কারণ যাই হোক না কেন, মন ভালো করার ইসলামিক উপায় গুলো অবলম্বন করে আপনি আপনার মন ভালো করা সহ আপনার জীবনকেও সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারেন। কেননা মন ও দেহ একে অপরের পরিপূরক।

মন ভালো রাখার প্রয়োজনীয়তা

ইসলামের দৃষ্টিতে আমাদের দেহ ও মনের মধ্যে একটি গভীর যোগসূত্র রয়েছে। তাই আমাদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মনের সুস্থতাও গুরুত্বপূর্ণ। মন ভালো না থাকলে, মনে হতাশা থাকলে এবং মনে দুশ্চিন্তা পেরেশানি থাকলে তার প্রভাব আপনার পার্থিব ও অপার্থিব জীবনে পড়বে। নিম্নে কয়েকটি মন ভালো রাখার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

  1. আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করা যায় না। হতাশা এবং দুশ্চিন্তা থেকে মনকে মুক্ত রাখা আল্লাহর অনুগ্রহ স্বরূপ।
  2. মন ভালো না থাকলে, মনে রাগ-ক্ষোভ ও হতাশা থাকার কারণে মুমিনের ঈমান ঠিক থাকে না, ফলে ঈমান নষ্ট হয়।
  3. মনের বিষন্নতা আপনাকে শুধু মানসিকভাবেই না শারীরিকভাবেও অসুস্থ করে তুলবে। আর এই পুষে রাখা বিষন্নতা আপনার শারীরিক অসুস্থতা দিনকে দিন বাড়িয়ে তুলবে। এমন কি মৃত্যু পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে।
  4. মন ভালো না থাকলে আপনি আপনার পার্থিব ও অপার্থিব কাজগুলোর সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবেন না। তাই পার্থিব ও অপার্থিব কাজগুলোর ভারসাম্য বজায় রাখতে মন ভালো রাখা প্রয়োজন।
  5. মনের অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা এবং রাগ-ক্ষোভ আপনার আমলকেও নষ্ট করে দেয়।

এজন্য ইসলাম আমাদের মনের সুস্থতার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন। যে বিষয়গুলো আমাদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এমন সব নেতিবাচক বিষয়গুলো ভুলে যেতে এবং অনেক সময় ধরে মনে পুষে না রাখতে ইসলাম আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন।

তাই আপনি সবসময় মন ভাল করার ইসলামিক উপায় ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উল্লেখিত আমল গুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন যেন আপনি সবসময়ই মানসিক ও শারীরিক উভয় দিক থেকেই ভালো থাকতে পারেন।

ইসলামে সুস্থ মনের পরিচয়

ইসলামে সুস্থ মনের পরিচয় বলতে বোঝায় আপনার অন্তরে ঈমানের পরিশুদ্ধি, কল্যানকামিতা, ভালোবাসার পবিত্রতা, সত্যবাদিতা, উদারতা এবং নৈতিক চরিত্র ইত্যাদির মত গুণাবলী থাকা অথবা অর্জন করাই হচ্ছে আপনি একজন সুস্থ মনের অধিকারী

আপনি সুস্থ মনের অধিকারী হতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই হিংসা-বিদ্বেষ, কপটতা, অহংকার, মিথ্যা এবং মন্দ চরিত্রের মতো বিষয়গুলো থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আর এই সকল মন্দ বিষয়গুলো থেকে আপনি তখনই মুক্ত থাকতে পারবেন যখন আপনি মন ভালো করার ইসলামিক উপায় ও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর শেখানো আমল ও সুন্নতগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করতে পারবেন।

উপসংহার - শেষ কথা

মন ভালো করার ইসলামিক উপায় ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নির্দেশিত আমল গুলো সহ আরো কিছু বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খ আপনাদের জন্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করছি, আমার এই আর্টিকেলটি আপনাদের সহযোগিতায় ভূমিকা রাখতে পারবে ইনশাআল্লাহ।

মন ভালো করার ইসলামিক উপায় গুলো ও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কিছু আমল এগুলো প্রয়োগ করার পাশাপাশি আপনি আপনার হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে আরো কিছু কাজ করতে পারেন যেমন,

নিয়মিতভাবে প্রতিদিন ১৫ মিনিট রোদে কাটানো, ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা, ১৫ মিনিট শরীর চর্চা করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, সময় পেলে ঘুরতে যাওয়া, মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে গল্প করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক ভালো রাখা, দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যস্ত থাকা এবং রাতে অন্ততপক্ষে সাত ঘন্টা ঘুমানো ইত্যাদি অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।

মানসিক চাপ এবং মনের নানা রকম দুশ্চিন্তা কেড়ে নিতে পারে আপনার জীবনের সকল আনন্দ-উচ্ছ্বাস ও সুখ-শান্তি। যার ফলে আপনার শারীরিক ও মানসিক নানারকম জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। তাই আমার বিশ্বাস, মন ভালো করার ইসলামিক উপায় গুলো ও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর আমল আপনার জীবনের সকল জটিলতা দূর করে জীবনে শান্তি আনয়ন করবে ইনশাআল্লাহ। (1215)

Thanks

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
Comment মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url