বাংলাদেশের জাতীয় গাছের নাম কি ১৮ টি জাতীয় সব কিছুর নাম
বাংলাদেশের জাতীয় গাছের নাম কি ১০ টি উপকারিতা সহ জাতীয় সব কিছুর নাম এ বিষয় সম্পর্কে আরো অনেক কিছু আমাদের অনেকেরই জানার আগ্রহ রয়েছে। সে দিক গুলো খেয়াল রেখেই আজকের আর্টিকেলটি আমি সাজানোর চেষ্টা করেছি।
এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনারা বাংলাদেশের জাতীয় গাছের নাম কি, জাতীয় ফল কি সহ এর সাথে সম্পর্কিত অনেক বিষয়ের বিস্তারিত জানতে পারবেন। ফলে এখান থেকে এগুলোর সাথে সম্পর্কিত অনেক প্রশ্নের উত্তর আপনি পেয়ে যাবেন। তাই পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
সূচিপত্র: বাংলাদেশের জাতীয় গাছের নাম কি ১৮ টি জাতীয় সব কিছুর নাম
(নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান ক্লিক করুন)
- বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলী
- বাংলাদেশের জাতীয় গাছের নাম কি
- বাংলাদেশের জাতীয় গাছের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি
- বাংলাদেশের জাতীয় গাছ নামকরণের ইতিহাস
- বাংলাদেশের জাতীয় গাছের ফল ও এর প্রকারভেদ
- বাংলাদেশসহ বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের আমের চাহিদা
- বাংলাদেশের জাতীয় গাছের উপকারিতা
- পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আম গাছ কোথায় অবস্থিত
- উপসংহার - শেষ কথা
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। প্রত্যেক দেশেরই নিজস্ব কিছু জাতীয় বিষয় থাকে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেরও কিছু জাতীয় বিষয় রয়েছে। তার মধ্যে জাতীয় গাছ একটি।
বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলী
প্রথমে জানবো বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়গুলি সম্পর্কে। বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়গুলো নিম্মে দেয়া হলো:
- বাংলাদেশের জাতীয় গাছের নাম - আম গাছ
- বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা - সবুজ আয়তক্ষেত্রের মাঝে লাল বৃত্ত
- বাংলাদেশের জাতীয় ভাষা - বাংলা
- বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত - আমার সোনার বাংলা
- বাংলাদেশের জাতীয় কবি - কাজী নজরুল ইসলাম
- বাংলাদেশের জাতীয় উৎসব - পহেলা বৈশাখ
- বাংলাদেশের জাতীয় ফল - কাঁঠাল
- বাংলাদেশের জাতীয় ফুল - শাপলা
- বাংলাদেশের জাতীয় মাছ - ইলিশ
- বাংলাদেশের জাতীয় পশু - রয়েল বেঙ্গল টাইগার
- বাংলাদেশের জাতীয় পাখি - দোয়েল
- বাংলাদেশের জাতীয় খেলা - হাডুডু/কাবাডি
- বাংলাদেশের জাতীয় বন - সুন্দরবন
- বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ - বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
- বাংলাদেশের জাতীয় লাইবেরি - আগারগাঁও, বাংলা নগর, ঢাকা
- বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা - ঢাকা চিড়িয়াখানা
- বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধ - সম্মিলিত প্রয়াস
- বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘর - বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, শাহবাগ।
বাংলাদেশের জাতীয় গাছের নাম কি?
এতক্ষণ আমরা বাংলাদেশের জাতীয় অনেক বিষয় সম্পর্কে জানলাম। এখন জানবো, বাংলাদেশের জাতীয় গাছের নাম কি? বাংলাদেশের জাতীয় গাছ আর জাতীয় ফল দুটো আলাদা জিনিস। জাতীয় ফল কাঁঠাল। আর বাংলাদেশের জাতীয় গাছের নাম আম গাছ।
জাতীয় গাছের নাম কি? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে দেখা যায়, আম গাছ অন্যান্য গাছের মতো নয়। এটি জাতীয় গাছ হওয়ার পিছনে রয়েছে অনেক কারণ। যা আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক বাহক। এর রয়েছে অনেক বড় ইতিহাস।
সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা এই রূপসী বাংলায় আম গাছ আমাদের দেশের একটি জাতীয় পরিচয় বহন করে এটি ভাবতেও বেশ ভালো লাগে। আম গাছ থেকে আমরা আম ফল পাই যা খুবই সুস্বাদু এবং প্রায় আমাদের সকলেরই খুব প্রিয়।
বাংলাদেশের জাতীয় গাছের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি?
বাংলাদেশের জাতীয় গাছের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি? নিন্মে সেগুলো দেওয়া হল :
- আম গাছ Mangifera indica নামক বৈজ্ঞানিক নামে পরিচিত।
- আম গাছের আদি উৎস অনুসন্ধান করলে ভারতীয় উপমহাদেশ কে পাওয়া যায়।
- আম গাছ অনেক লম্বা (৩০-৪০) মিটার হয়। এর উপরের দিকে ডালপালা, সবুজ পাতা সবকিছু বিস্তৃত অবস্থায় থাকে।
- আম গাছ চিকন, মাঝারি আবার অনেক মোটাও হয়ে থাকে।
- আম গাছ থেকে রসালো ও সুস্বাদু আম ফল হয়। ফল হওয়ার আগে আম গাছে হলুদ মুকুল আসে। কিছুদিন পর তা থেকে মিষ্টি সুবাস ভেসে আসে এবং এগুলো থেকে ধীরে ধীরে আম বড় হয়।
- আম গাছ থেকে ভালো কাঠ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের জাতীয় গাছ নামকরণের ইতিহাস
নামকরণের ইতিহাস, ২০১০ সালে মন্ত্রিসভায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে বিবেচনা করে আম গাছকে বাংলাদেশের জাতীয় গাছ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
আম গাছকে বাংলাদেশের জাতীয় গাছ হিসেবে নামকরণের পিছনে বেশকিছু কারণ ও ইতিহাস রয়েছে।আম খুবই সুস্বাদু, লোভনীয় ও সহজলভ্য ফল। আমাদের প্রায় সবার বাড়িতেই বা কাছাকাছি জায়গাতেই আমগাছ থাকে।
আর আম গাছ বা আম বাগানের ইতিহাসের কথা বলতে গেলে -
১৭৫৭ সালে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে ইংরেজদের যুদ্ধ হয়েছিল আম বাগানে। সে যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজয় বরণ করেন ফলে সেখানে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত যায়।
আবার ১৯৭১ সালে মুজিবনগর এর আম্র কাননে বা আম বাগানে মুক্তিযুদ্ধের শপথ গ্রহণ করা হয়। এর মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য আবার উদিত হওয়ার পথে অগ্রসর হয়। তাছাড়া আমাদের জাতীয় সংগীতেও আম বাগানের কথা উল্লেখ রয়েছে।
মূলত আম গাছকে জাতীয় গাছ হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার পিছনে এই বিষয়গুলোই কাজ করেছে।
বাংলাদেশের জাতীয় গাছের ফলের প্রকারভেদ
এই আর্টিকেলে এখন আমরা জাতীয় গাছের ফলের প্রকারভেদ কথা বলব। বাংলাদেশের জাতীয় গাছের ফল আম খেতে সবাই পছন্দ করে। আম বিভিন্ন প্রকারের বা জাতের হয়ে থাকে। এক একটি জাতের ঘ্রাণ, স্বাদ, সাইজ, রং একেক রকম হয়ে থাকে।
ইউকিপিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ প্রজাতির আম আছে। আর আমের কয়েকশো জাত রয়েছে। দেশি জাতের কয়েকটি আম হলো:
ফজলি, লেংড়া, হাড়িভাঙ্গা, খিরসাপাতি বা হিমসাগর, আম্রপলি, গোপালভোগ, গৌরমতি, ক্ষীরমন, লখনা, বৃন্দাবনি, সুন্দরী, বাতাসা, বোম্বাই, আমিনা, কাকাতোয়া, রাজলক্ষ্মী, সিন্দি, রত্না ইত্যাদি।
বাংলাদেশ সহ বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের আমের চাহিদা
বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে আম উৎপাদিত হয়। এ আম বেশি উৎপাদিত হওয়ায় ও অত্যাধিক সুস্বাদু হওয়ায় তা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়।
তাছাড়া খিরসাপাতি বা হিমসাগর এবং ফজলি আমের বিভিন্ন গুনাগুনের জন্য এগুলোকে বাংলাদেশের জিআই পণ্য হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে আমের রপ্তানি দিন দিন বেড়েই চলছে। তবে বিদেশে চাহিদা অনুযায়ী যেই হারে রপ্তানি হওয়ার কথা সেই পরিমাণ হচ্ছে না।
এর কারণ হিসেবে বলা যায় আন্তর্জাতিক মানদন্ড না মেনে উৎপাদন করা, প্যাকেজিং ও স্টোরের সমস্যা ইত্যাদি। এই সমস্যাগুলো সমাধানের মাধ্যমে যদি আম রপ্তানি করা যায় তাহলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক সমৃদ্ধশালী হবে।
বাংলাদেশের জাতীয় গাছের উপকারিতা
কোন দেশের জাতীয় জিনিস সে দেশের পরিচিতি তুলে ধরে। তেমনি বাংলাদেশের জাতীয় গাছ আম গাছ বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে প্রেজেন্ট করে। বাংলাদেশের জাতীয় গাছের উপকারিতা অনেক। যেমন:
১. আম গাছ আমাদের অক্সিজেন প্রদান করে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে।
২. আম বিদেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ অনেক অর্থ উপার্জন করে।
৩. আম দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে।
৪. আম গাছ থেকে যে কাঠ পাওয়া যায় তা মানুষের অনেক কাজে লাগে। যেমন: বিভিন্ন ফানিচার তৈরি করা, রান্নার কাজে লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করা, নৌকা তৈরি করা ইত্যাদি।
৫. হিন্দু কেউ মারা গেলে তার শবদেহ দাহ্য করার জন্য চন্দন কাঠের পাশাপাশি আম কাঠও ব্যবহার করা হয়।আম কাঠ শুকনো না থাকলেও অনেক ভালো জ্বলে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের তাদের পূজার ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিয়ম কানুন পালন করতে যেয়ে আম পাতার দরকার পড়ে।
৬. আম গাছ অনেক পশুপাখি, পোকামাকড় এর নিরাপদ বাসস্থান হিসেবে কাজ করে।
৭. আম গাছের পাতা, আম গাছের ছাল ইত্যাদি থেকে ঔষুধ তৈরি করা হয়।
৮. আম গাছের শীতল ছায়ায় ক্লান্ত পথিক বিশ্রাম নেয়।গ্রামে আম গাছের ছায়া সভা সমিতি বসে।
৯. আম গাছ সামাজিক বনায়ন তৈরিতে বেশ ভূমিকা রাখে।
১০. আম গাছের শিকড় মাটিকে শক্ত করে আটকে রাখে বিধায় মাটির ক্ষয় রোধ হয়।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আম গাছ কোথায় অবস্থিত
সব আম গাছের আকৃতি এক সমান হয় না। কোনটা বড় হয় আবার কোনটা একটু ছোট হয়।
আরো পড়ুন: পড়ালেখা কে আবিষ্কার করেছে পড়ালেখা নিয়ে ১ টি উক্তি
পৃথিবীতে যত আমগাছ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় আম গাছটি রয়েছে আমাদের বাংলাদেশে। আম গাছের আয়ুষ্কাল অনেক বছর হয়ে থাকে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আম গাছটির বয়স আনুমানিক ২২০ বছর হবে।
এই গাছটি বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে সীমান্ত ইউনিয়ন হরিণ মারীতে অবস্থিত। ৮০ থেকে ৯০ ফুট লম্বা গাছটির অবস্থান প্রায় দুই বিঘা জমির উপর। এটি সূর্যপুরী জাতের আমগাছ। এর ডালপালা গুলো বিস্তৃত জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে আছে।
উপসংহার - শেষ কথা
বাংলাদেশের জাতীয় গাছের নাম কি ১০টি উপকারিতা নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি ইতোমধ্যে আপনারা পড়ে ফেলেছেন। আশা করি, বাংলাদেশের জাতীয় গাছের নাম কি এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা আমাদের সকলের নিঃস্বার্থ বন্ধু আম গাছ সম্পর্কে অনেক তথ্য জেনেছেন। যা আপনাদের কাজে লাগতে পারে। আজ তাহলে বাংলাদেশের জাতীয় গাছের নাম কি এই আর্টিকেলটি এখানেই শেষ করলাম। (1219)
Thanks
আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url