মেয়েদের হার্টের সমস্যার ৯ টি লক্ষণ সতর্কবার্তা ও প্রতিকার
মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ ৯ টি সতর্কবার্তা আমাদের জানা থাকা দরকার। কারণ আমাদের মধ্যে অনেকে নিজে নারী, আর তাছাড়া সবার পরিবারেই নারী সদস্য রয়েছেন। অনেক সময়ই মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ জানা না থাকায় আমরা নিজেরা বা আমাদের প্রিয়জনেরা ঝুঁকিতে থাকেন।
এই আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ ৯ টি সতর্কবার্তা, সমস্যার প্রতিরোধ, ও প্রতিকার দিয়ে। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন আশা করি গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য জানতে পারবেন।
সূচিপত্র: মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ ৯ টি সতর্কবার্তা
- ভূমিকা
- হার্টের সমস্যার প্রকারভেদ
- মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ
- হার্টের সমস্যার কারণ
- মেয়েদের হার্টের সমস্যার প্রতিরোধ
- মেয়েদের হার্টের সমস্যার প্রতিকার
- উপসংহার
হার্টের সমস্যার প্রকারভেদ
লক্ষণ জানার আগে জেনে নেয়া দরকার মেয়েদের হার্টের সমস্যার প্রকারভেদ। হার্টের সমস্যা নানা রকম হতে পারে। এগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে রোগ শনাক্ত করে সঠিক চিকিৎসা করা সহজ হবে। তাই আসুন জেনে নিই মেয়েদের হার্টের সমস্যার প্রকারভেদ।
- করোনারি আর্টারি ডিজিজ
- করোনারি মাইক্রোভাস্কুলার ডিজিজ
- ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম
- অ্যানজাইনা
- অ্যারিদমিয়া
- হার্ট ফেইলিউর
- অন্যান্য
১। করোনারি আর্টারি ডিজিজ: করোনারি আর্টারি ডিজিজ মেয়েদের মধ্যে বহুল প্রচলিত একটি হৃদরোগ। মেনোপজের পর এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে যেহেতু এই সময় নারীদের শরীরে ব্যাপক হরমোনাল পরিবর্তন হয়। ধমনীতে প্লাক (plaque) তৈরি হলে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়ে এই রোগ দেখা দেয়।
২। করোনারি মাইক্রোভাস্কুলার ডিজিজ: এই রোগটি পুরুষদের চাইতে নারীদের বেশি হয়ে থাকে। এই রোগ হলে বুকে তীব্র ব্যথা হয়।
৩। ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম: তীব্র ব্যথা বা শোক বোঝাতে আমরা "হৃদয়ভঙ্গ" বা "ব্রোকেন হার্ট" শব্দগুলো ব্যবহার করি। এগুলোকে বরাবর প্রতীকি শব্দ জেনে আসলেও আধুনিক বিজ্ঞান বলছে তীব্র শোক, রাগ, বা শক আসলেই হার্টের উপরে প্রভাব ফেলে। ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোমের ফলে বুকে ব্যথা দেখা দিতে পারে। এমনকি এর লক্ষণ দেখে হার্ট অ্যাটাক মনে হতে পারে। কিন্তু সাধারণত এটি দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করে না। মেনোপজের পরে নারীদের মধ্যে এই সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে।
৪। অ্যানজাইনা: হৃদপিণ্ডের সাথে সংযুক্ত ধমনীগুলোতে খিঁচুনী লেগে বুকে তীব্র ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা ঘুমের মধ্যে দেখা দিতে পারে।
৫। অ্যারিদমিয়া: এই সমস্যার ফলে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন অস্বাভাবিক হয়। অর্থাৎ অতি দ্রুত বা অতি ধীরে স্পন্দিত হতে পারে।
৬। হার্ট ফেইলিউর: হৃদপিণ্ডের কাজ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত যোগান দেওয়া। হার্ট ফেইলিউর হলে হৃদপিণ্ড তা করতে ব্যর্থ হয়। ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না এবং চিকিৎসার অভাবে রোগী মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।
৭। অন্যান্য: এছাড়া ভালভের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে অত্যধিক সুগার, কোলেস্টেরল ইত্যাদি নানা রকম সমস্যায় নারীরা ভুগতে পারেন।
হার্টের অনেক সমস্যাই নারী ও পুরুষদের মধ্যে একই। আবার কিছু সমস্যা নারীদের মধ্যে বেশি। তাই এসব রোগ বা সমস্যার প্রকারভেদ জেনে এর সঠিক চিকিৎসা করা উচিত।
মেয়েদের হার্টের সমস্যার ৯ টি লক্ষণ ও সতর্কবার্তা
মেয়েদের হার্টের সমস্যার প্রকারভেদ জানলাম। এবার চলুন জেনে নিই মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ ৯ টি সতর্কবার্তা কী কী। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো:
- বুকে ব্যথা
- শরীরের অন্যান্য স্থানে ব্যথা
- শ্বাসকষ্ট
- বমি বমি ভাব বা বমি
- অবসাদ বা ক্লান্তিভাব
- হজমে সমস্যা
- জ্বালাপোড়া
- ফোলা
- বুক ধড়ফড়ানি
১। বুকে ব্যথা: বুকে ব্যথা হওয়া হার্টের সমস্যার একটি প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। বিভিন্ন হৃদরোগের ফলে রোগী বুকে ব্যথা অনুভব করতে পারেন। অনেকে বুকে চাপ অনুভব করেন। পুরুষদের চাইতে মহিলাদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণটি অনেক সময় কম প্রকাশ পায়। তাই মহিলাদের এই ব্যাপারে বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
২। শরীরের অন্যান্য স্থানে ব্যথা: শরীরের অন্যান্য বিভিন্ন স্থানে ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে। ঘাড়, চোয়াল, পিঠ, হাত, বা গলায় ব্যথা অনুভব করতে পারেন। বাম হাতে ব্যথা ছড়িয়ে পড়া বা ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের একটি লক্ষণ। এরকম দেখলে দ্রুত রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।
৩। শ্বাসকষ্ট: হার্টের রোগ বা সমস্যার আরেকটি লক্ষণ হলো শ্বাসকষ্ট। রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে। বিশেষ করে ভারী কোন কাজ করার সময় শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
৪। বমি বমি ভাব বা বমি: এটি একটি প্রচলিত লক্ষণ। হার্টের সমস্যায় অনেকেরই বমি বমি ভাব হতে পারে। এমনকি বমিও হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
৫। অবসাদ বা ক্লান্তিভাব: একজন হার্টের রোগী প্রচন্ড অবসাদ বা ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন। কোন কাজ করার শক্তি না পেতে পারেন। তাই আপনি যদি অতিরিক্ত অবসাদ বা ক্লান্তিতে ভোগেন, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই ভালো।
৬। হজমে সমস্যা: হৃদরোগ অনেক সময় আমাদের হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৭। জ্বালাপোড়া: বুকের ভেতরে জ্বালাপোড়া করতে পারে।
৮। ফোলা: পা, পায়ের পাতা, তলপেট ইত্যাদি ফুলে উঠতে পারে। পা ফুলে ওঠা আবার কিডনির সমস্যারও একটি লক্ষণ। তাই এরকম দেখলে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। হতেও পারে কোন ভয়াবহ রোগ থেকে বেঁচে যাবেন।
৯। বুক ধড়ফড়ানি: হৃদরোগের আরেকটি লক্ষণ হলো বুক ধড়ফড় করা। তাই অল্পতেই যদি আপনার বুক ধড়ফড় করতে থাকে, তাহলে সতর্ক হোন।
উপরোক্ত লক্ষণগুলির এক বা একাধিক যদি কারও মধ্যে দেখা যায়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। লক্ষণ দেখা দেওয়ামাত্র চিকিৎসা শুরু করা গেলে ক্ষতির সম্ভাবনা ও মাত্রা অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়।
হার্টের সমস্যার কারণ
মেয়েদের মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ ৯ টি সতর্কবার্তা জানলাম, এবার আসুন মেয়েদের হার্টের সমস্যার কারণ গুলোও জেনে নিই।
১। সাধারণ কারণ: উচ্চ রক্তচাপ, অধিক কোলেস্টেরল, অতিরিক্ত ওজন, শরীরচর্চার অভাব, ধূমপান ইত্যাদি কারণে হার্টের সমস্যা হতে পারে।
২। মহিলাদের বিশেষ কারণ: অনেক সময় মহিলাদের মধ্যে এমন কিছু সমস্যা দেখা দেয় যা পুরুষদের মধ্যে দেখা যায় না। যেমন এক্ষেত্রে মেনোপজ, গর্ভকালীন কোন সমস্যা, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, এছাড়া মহিলাদের বিশেষ কোন হরমোনাল কারণে হার্টের সমস্যা হতে পারে।
৩। মানসিক স্বাস্থ্য: ডিপ্রেশন, মানসিক চাপ, অ্যাংজাইটি (anxiety) ইত্যাদি কারণে হার্টের সমস্যা হতে পারে।
আরো পড়ুন: মেয়েদের মন ভালো করার উপায় এবং ইসলামিক উপায়
৪। জিনগত কারণ: যদি পরিবারের মধ্যে হার্টের সমস্যার প্রচলন থাকে, তাহলে জিনগতভাবে তা আপনার মধ্যেও আসতে পারে।
৫। অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা: ডায়াবেটিস, অ্যানেমিয়া ইত্যাদি নানা স্বাস্থ্যগত সমস্যা একসময় হার্টের সমস্যারও জন্ম দিতে পারে।
মেয়েদের হার্টের সমস্যার প্রতিরোধ
প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধ উত্তম। তাই আসুন এবার জেনে নিই মেয়েদের হার্টের সমস্যার প্রতিরোধ আমরা কীভাবে করতে পারি।
মেয়েদের হার্টের সমস্যার প্রতিরোধ পদ্ধতিগুলো হলো:
১। স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ: পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি ইত্যাদি গ্রহণ করুন। এগুলো আপনার শরীর ও মন ভালো করবে, হার্টের সমস্যা সহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাবে।
২। প্রোটিন: প্রোটিনজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করুন। তবে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন। এক্ষেত্রে ডাল, বিভিন্ন বিচি (beans), সূর্যমুখী বীজ, মিষ্টি কুমড়া, তিল, বাদাম ইত্যাদি খেতে পারেন।
৩। চর্বি কম গ্রহণ: তেল, চর্বি কম এরকম খাবার গ্রহণ করুন।
৪। ভাজাপোড়া খাবার: বেশি ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন। এসব খাবারে থাকা তেল ও লবণ হার্টের জন্য ক্ষতিকর।
৫। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: আপনার পরিবারে যদি হার্টের সমস্যার প্রচলন থাকে, তাহলে কোন বিশেষজ্ঞের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলুন।
উপরোক্ত পন্থাগুলো মেনে চললে আশা করা যায় মেয়েদের হার্টের সমস্যার প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এবার চলুন মেয়েদের হার্টের সমস্যার প্রতিকার জেনে নিই।
মেয়েদের হার্টের সমস্যার প্রতিকা
হার্টের সমস্যার স্থায়ী কোন প্রতিকার নেই। এমন নয় যে একটা ওষুধ খেলাম আর সেরে গেলো। তবে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের মাধ্যমে একে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তাই হার্টের সমস্যার প্রতিকার বলতে এগুলোকেই বোঝায়। মেয়েদের হার্টের সমস্যার প্রতিকার গুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো:
১। শরীরচর্চা: নিয়মিত শরীরচর্চা করলে শরীর ও মন উভয়ই ভালো থাকে ও হার্টের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হয়।
২। ডায়েট: স্বাস্থ্যসম্মত ডায়েট অনুসরণ করুন। এতে হার্টের নানাবিধ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে।
৩। ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। কারণ অতিরিক্ত ওজন হৃদরোগ সহ আরও নানা রোগের কারণ। তাই শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।
৪। মানসিক চাপ কমানো: অত্যধিক মানসিক চাপ হার্টের উপরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। এজন্য নিজের শখের কোন কাজ, মেডিটেশন এবং/অথবা যোগাসন করা, বডি ম্যাসাজ ইত্যাদি করা যেতে পারে।
৫। পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন সময়মতো ঘুমাতে যান ও পর্যাপ্ত ঘুম পাচ্ছেন তা নিশ্চিত করুন। ইনসমনিয়ার সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের সাহায্য নিন।
৬। মাদক ও নেশাদ্রব্য পরিহার: ধূমপান, মদ্যপান ইত্যাদি হার্টের উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই এগুলো বর্জন করার চেষ্টা করুন।
উপরোক্ত নিয়মগুলো ঠিকমতো মেনে চললে আশা করা যায় মেয়েদের হার্টের সমস্যার প্রতিকার করা সম্ভব হবে। এছাড়া ডাক্তার যদি কোন ওষুধ দেন তাহলে তা-ও ঠিকমতো সেবন করতে হবে। এতে সমস্যাগুলো অনেকটাই সীমিত রাখা সম্ভব হবে।
উপসংহার - শেষ কথা
হার্টের সমস্যা একদিনে হয় না। দীর্ঘদিন ধরে আস্তে আস্তে এই সমস্যাগুলো তৈরি হয়। সচেতনতা অবলম্বন করে চললে এগুলো থেকে অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত থাকা যায়। তাই সেই সচেতনতা সৃষ্টিরই চেষ্টা করলাম আজকের এই লেখায়।
আশা করি মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ ৯ টি সতর্কবার্তা বিষয়ক এই আর্টিকেলটি আপনার জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। লেখাটি ভালো লাগলে আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করতে পারেন যাতে তারাও উপকৃত হন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সকলের সুস্থতা কামনা করে আজকের মতো এখানেই ইতি টানছি। (1214)
Thanks
আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url