হাত ঝিনঝিন করার ঔষধ করণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ১০ টি পয়েন্ট
আপনি জানেন কি হাত ঝিনঝিনের পেছনে থাকতে পারে এক বা একাধিক কারণ? আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা সেই সব কারণগুলো সম্পর্কে জানবো। সাথে জানবো হাত ঝিনঝিন করার ঔষধ সম্পর্কেও।
হাত ঝিনঝিন করা একটি অস্বস্তিকর অনুভূতি। অনেকের কাছে এটি পা ঝিনঝিন করার চাইতেও অসহ্য লাগে। তাই হাত ঝিনঝিন করার ঔষধ খোঁজেন অনেকেই।
আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে হাত ঝিনঝিন করে কেন, এটা কাদের বেশি হয়, হাত ঝিনঝিন করার ঔষধ, এ থেকে পরিত্রাণের ব্যায়াম সহ আরও নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে পারবেন। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
(নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান ক্লিক করুন)
সূচিপত্র: হাত ঝিনঝিন করার ঔষধ করণীয় ও ১০ টি প্রতিকার
- হাত ঝিনঝিন করে কেন?
- হাত ঝিনঝিন কাদের হয়?
- হাত ঝিনঝিন করার ঔষধ ১০ টি প্রতিকার
- হাত ঝিনঝিন প্রতিরোধে করণীয়
- হাত ঝিনঝিন এর ব্যায়াম
- হাত ঝিনঝিন করে কোন ডাক্তার দেখাবো
- হাত ঝিনঝিন করা কি আতঙ্কের বিষয়
- সতর্কতা
- উপসংহার
হাত ঝিনঝিন করে কেন?
দীর্ঘসময় ধরে একই অবস্থানে থাকলে, হাতের কবজিতে বেশি চাপ দিলে, কোনভাবে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হলে, অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে ইত্যাদি নানা কারণে হাত ঝিনঝিন করতে পারে। সাধারণত হাত ঝিনঝিন এসব ছোটখাটো কারণেই হয়৷ এক্ষেত্রে এই অনুভূতি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। নড়াচড়া করলে, রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হলেই এটি চলে যায়।
তবে অনেক সময় হাত ঝিনঝিন করা কোন রোগের লক্ষণ হতে পারে। ডায়াবেটিসের রোগী, থাইরয়েডের রোগী, বা অন্য কোন সমস্যায় ভুগছেন এমন মানুষের হাত ঝিনঝিন করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে এই ঝিনঝিন অনুভূতি দীর্ঘ সময় স্থায়ীও হতে পারে।
অর্থাৎ, হাত ঝিনঝিন করা স্বাভাবিক হতে পারে। আবার কোন সিরিয়াস সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। তাই এর কারণ নির্ধারণ করে চিকিৎসা করতে হবে।
হাত ঝিনঝিন কাদের হয়?
হাত ঝিনঝিন কমবেশি সব বয়সের, সব অবস্থার মানুষেরই হয়৷ তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকে। বয়স আর শরীরের অবস্থার উপরে ভিত্তি করে এর অস্বাভাবিকতার মাত্রাও বাড়তে পারে। যেমন:
- মধ্যবয়সী
- গর্ভবতী নারী
- যাদের ওজন বেশি
- ডায়াবেটিস রোগী
- উচ্চ রক্তচাপে সমস্যা আছে যাদের
- থাইরয়েডের সমস্যায় যারা ভোগেন
- বাতের রোগী
- দীর্ঘসময় কম্পিউটারে কাজ করেন যারা
- দীর্ঘসময় ধরে লেখালেখি, সেলাই, টেনিস খেলা ইত্যাদি কাজ যারা করেন
- যাদের কবজিতে বেশি চাপ পড়ে
উপরোক্ত শ্রেণীর মানুষদের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক হাত ঝিনঝিন করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই আপনি এই ক্যাটাগরির মধ্যে পড়লে সতর্ক হোন। হতেও পারে বড় কোন বিপদ থেকে বাঁচতে পারবেন।
হাত ঝিনঝিন করার ঔষধ ও ১০ টি প্রতিকার
হাত ঝিনঝিন করার ঔষধ সম্পর্কে এবার আমরা আলোচনা করবো। তবে এমন নয় যে এরকম অনুভূতি দেখা দেওয়া মাত্র আমরা ওষুধ খেয়ে নেবো। বরং নিচের ধাপগুলো মেনে চলতে হবে:
- প্রথমে দেখতে হবে কোন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে হচ্ছে কি না।
- যদি দেখা যায় আসলেই এটি কোন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক সেই ওষুধ সেবন বন্ধ করতে হবে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে ইনসুলিন নিন।
- থাইয়য়েড হরমোন কম হলে তা জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ নিন।
- ভিটামিনের অভাবে এরকম হলে ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অথবা ভিটামিন ওষুধ গ্রহণ করার মাধ্যমে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে।
- প্রিগাবালিন জাতীয় ওষুধ হাত ঝিনঝিন কমাতে সহায়ক।
- এমিট্রিপটাইলিন জাতীয় ওষুধও হাত ঝিনঝিন কমায়।
- এ ওষুধগুলো দীর্ঘ সময়ের জন্য খেতে হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
- ‘গুলেন-বারি সিন্ড্রোম’ নামে এক ধরনের পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথির ফলে রোগীর হাত-পা হঠাৎ অবশ হয়ে যায়। এ ধরনের রোগের ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করাতে হবে।
- ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোন ওষুধ সেবন করা যাবে না।
এগুলোই মূলত হাত ঝিনঝিন করার ঔষধ। হাত ঝিনঝিন দেখা দিলে এই পদক্ষেপগুলোতেই নিরাময় আশা করা যায়। এবার চলুন দেখি কীভাবে এর প্রতিরোধ করা যায়।
হাত ঝিনঝিন প্রতিরোধে করণীয়
কিছু কাজ করার মাধ্যমে আমরা এই হাত ঝিনঝিন প্রতিরোধ করতে পারি। নিচে এগুলো সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:
- জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনুন। স্বাস্থ্যকর ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করুন।
- দীর্ঘ সময় ধরে হাতে চাপ দিয়ে কাজ করতে হলে ৩০ মিনিট পরপর বিরতি নিন। এই সময়ে একটু বিশ্রাম নিন, হাঁটাচলা করলে আরও ভাল হয়।
- টেবিল ও হাতের দূরত্ব এমন রাখুন যাতে হাত টেবিলের সমান্তরালে থাকে।
- শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
- কিছু হাতের ব্যায়াম করতে পারেন। এতে হাত ঝিনঝিন কম করবে।
আশা করা যায় এই কাজগুলো ঠিকমতো করলেই হাত ঝিনঝিনের সম্ভাবনা অনেকটা কমে যাবে। ফলে আর এই অস্বস্তিকর অনুভূতির মোকাবেলা করতে হবে না।
হাত ঝিনঝিন এর ব্যায়াম
ব্যায়াম-১:
- হাত একটা সমতল টেবিলের ওপরে এমনভাবে রাখুন যেন হাতটা টেবিলের কিনারায় ঝুলে থাকে।
- এরপর টেবিল থেকে হাত না সরিয়ে আঙুলগুলোকে ওপরে ওঠান এবং কবজি উপরের দিকে ভাঁজ করুন।
- এরপর কবজি নিচের দিকে ভাঁজ করুন এবং আঙুলগুলো নিচে নামিয়ে নিন।
- এভাবে মোট ১০ বার করুন।
ব্যায়াম-২:
- বাহুসহ পুরো হাতকে একটা আরামদায়ক অবস্থানে রেখে হাতের পাতা ছড়িয়ে দিন।
- এবার হাতের আঙুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করুন।
- এভাবে ১০ বার মুষ্টিবদ্ধ করুন এবং খুলুন।
- হাতের ভেতরে নরম রাবারের বল নিয়েও এভাবে মুষ্টিবদ্ধ করার অভ্যাস করতে পারেন।
ব্যায়াম-৩:
- হাতকে আরামে রাখুন।
- এরপর বৃদ্ধাঙ্গুলীর অগ্রভাগ দিয়ে এক এক করে হাতের প্রতিটি আঙুলের অগ্রভাগে চাপ দিন।
- উদাহরণস্বরূপ: তর্জনী আঙ্গুলের অগ্রভাগে চাপ দেওয়ার সময় হাতকে 👌 এরকম দেখাবে। এভাবে প্রতিটি আঙ্গুলে চাপ দিতে হবে।
হাত ঝিনঝিন করে কোন ডাক্তার দেখাবো?
হাত ঝিনঝিন বিভিন্ন কারণে হতে পারে। কখনো এটি হতে পারে স্বাভাবিক অস্থায়ী ঝিনঝিনানি, আবার কখনো কোন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা রোগের ফলে। কারণের উপর নির্ভর করবে এর চিকিৎসা।
যদি মনে হয় হাত অস্বাভাবিকভাবে ঝিনঝিন করছে, তাহলে অবিলম্বে নিকটস্থ হাসপাতালে যান। সেখান থেকে ডাক্তাররা আপনার অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হয় নিজেরাই কোন চিকিৎসা দেবেন, আর নয়তো কোন বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেবেন।
অস্বাভাবিক হাত ঝিনঝিনের নানা রকম চিকিৎসা আছে৷ অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা, হারবাল চিকিৎসা ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতিতে এর নিরাময় করা হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে হাতুড়ে ডাক্তারদের ব্যাপারেও সতর্ক হতে হবে। ভালোভাবে অনুসন্ধান করে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
হাত ঝিনঝিন করা কি আতঙ্কের বিষয়
হাত ঝিনঝিন করা সবসময় আতঙ্কের বিষয় নয়। অনেক সময়ই এটি স্বাভাবিক কারণে হয়ে থাকে। দেহভঙ্গি ঠিক করলে, হাঁটাচলা বা ব্যায়াম করলে এটি চলে যায়।
তবে অনেক সময় কোন রোগের কারণে এই অনুভূতি দেখা দিতে পারে। আবার কোন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াস্বরূপও হতে পারে। অন্তর্নিহিত কোন জটিল রোগের লক্ষণও হতে পারে হাত ঝিনঝিন করা।
তাই একে নিয়ে খুব বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার যেমন দরকার নেই, ঠিক তেমনি একে অবজ্ঞা করাও উচিত নয়। হাত ঝিনঝিন দীর্ঘস্থায়ী হলে দেরি না করে কোন ভালো ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। তাহলে আশা করা যায় কোন রোগ থাকলেও তা খারাপ অবস্থায় পৌঁছাতে পারবে না।
সতর্কতা/এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন
হাত ঝিনঝিন করার ঔষধ সম্পর্কিত এতোক্ষণের আলোচনায় আমরা অনেক কিছুই জানলাম। কিন্তু কিছু সতর্কতা অবলম্বন না করলে এই সবই অর্থহীন হয়ে যেতে পারে। যেমন:
আরো পড়ুন: সকল রোগ থেকে মুক্তির দোয়া - ১ টি সুরা ও শানে নুযুল
- হাতুড়ে ডাক্তার হতে সাবধান। আজকাল অনেকেই প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ডাক্তার সেজে বসে থাকে আর ভুলভাল চিকিৎসা দিয়ে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ করে দেয়।
- রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ওষুধ খাবেন না।
- একইভাবে, চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ওষুধ খাওয়া বাদও দেবেন না।
- নিজে নিজে কোন ব্যায়াম করতে যাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। অবশ্যই কোন ব্যায়াম করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- অস্বাভাবিকতা লক্ষ করলে তাকে উপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করুন।
তাই এই ব্যাপারগুলো অবশ্যই মাথায় রাখবেন। আশা করা যায় তাহলে চিকিৎসার সর্বোত্তম ফল পাবেন।
উপসংহার - শেষ কথা
হাত ঝিনঝিন করার ঔষধ সম্পর্কিত আজকের আলোচনা আশা করি সবার ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে, তাহলে প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এতে তারাও সতর্ক থাকতে পারবেন। সবাই সুস্থ থাকুন সেই কামনা করে আজকের মতো তাহলে এখানেই বিদায় নিচ্ছি। (1214)
Thanks
আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url