ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ ১০ টি রোগের সতর্কবার্তা
ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ তা আমাদের সবার জানা থাকা প্রয়োজন। অনেক সময় শরীরের বিভিন্ন স্থানের ছোটখাটো ব্যথাকে আমরা অবজ্ঞা করি। তার মধ্যে ঘাড় ব্যথা অন্যতম। দৈনন্দিন কর্মব্যস্ত জীবনের চাপে বা বয়সের ভারে অনেক সময়ই আমাদের ঘাড় ব্যথা করে। একে আমরা তেমন কিছু না ভেবে উড়িয়ে দিই।
আজকের আর্টিকেলটিতে তাই আমরা আলোচনা করবো ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ তা নিয়ে। আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণা অনুযায়ী সাজানো এই লেখাটি সম্পূর্ণ শুরু থেকে শেষ অবধি পড়লে আপনি সহজেই ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ হতে পারে তা জেনে সতর্ক থাকতে পারবেন। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে শুরু করি।
(নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান ক্লিক করুন)
সূচিপত্র: ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ
- ঘাড় ব্যথার প্রকারভেদ
- ঘাড় ব্যথার কারণ
- ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ
- ১০ টি রোগের সতর্কবার্তা
- ঘাড় ব্যথা প্রতিরোধের উপায়
- ঘাড় ব্যথা হলে করণীয়
- ঘাড় ব্যথার ঔষধ
- ঘাড় ব্যথার ব্যায়াম
- সতর্কতা
- উপসংহার
যতো দ্রুত রোগ শনাক্ত করা যায়, ততো তাড়াতাড়ি আমরা সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে নিরাপদ হতে পারি। তাই ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ হতে পারে তা সবার জানা থাকা প্রয়োজন।
ঘাড় ব্যথার প্রকারভেদ
সবার আগে আমরা আলোচনা করবো ঘাড় ব্যথার প্রকারভেদ নিয়ে। কারণ ঘাড় ব্যথার প্রকারভেদ অনুযায়ী এটি ভিন্ন ভিন্ন রোগের লক্ষণ হতে পারে। আবার কোন রোগের লক্ষণ না-ও হতে পারে।
ঘাড় ব্যথার প্রকারভেদ গুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো:
- মাংশপেশীতে ব্যথা
- মাংসপেশীতে খিঁচুনী
- মাথাব্যথা
- নার্ভজনিত ব্যথা
- হাড়ে ব্যথা
- অন্যান্য
১। মাংশপেশীতে ব্যথা: ঘাড়ের মাংসপেশীতে ব্যথা হতে পারে। মাংসপেশীতে টান লাগা, কোন মাংসপেশী ছিঁড়ে যাওয়া, বা কোনভাবে আঘাত পেলে এরূপ ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
২। মাংসপেশীতে খিঁচুনী: মাংসপেশীতে হঠাৎ খিঁচুনী হতে পারে। এর ফলে ঘাড়ে হঠাৎ তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় এবং অনেক সময় ঘাড় নাড়াতে কষ্ট হয়।
৩। মাথাব্যথা: মাথা এবং ঘাড় যেখানে মিলিত হয়, অর্থাৎ ঘাড়ের উপর দিক ও মাথার নিচের দিকে ব্যথা হতে পারে। নড়াচড়া করলে এই ব্যথা বাড়ে।
৪। নার্ভজনিত ব্যথা: কোনভাবে নার্ভে আঘাত লাগলে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
৫। হাড়ে ব্যথা: অনেক সময় হাড় ভাঙ্গা, মচকানো, বা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার ফলে ঘাড়ে ব্যথা দেখা দিতে পারে।
৬। অন্যান্য: এছাড়া অনেক সময় শরীরের অন্যত্র স্থানের কোন ব্যথা ঘাড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এগুলোই মূলত ঘাড় ব্যথার প্রকারভেদ। এবার চলুন দেখে নিই ঘাড় ব্যথার কারণ কী?
ঘাড় ব্যথার কারণ কি?
ঘাড় ব্যথার কারণ বিভিন্ন হতে পারে। নিম্নে ঘাড় ব্যথার কারণ গুলো বর্ণনা করা হলো:
- বালিশ
- দেহভঙ্গি
- ঝুঁকে বসে থাকা
- গৃহস্থালী কাজ
- মানসিক অবস্থা
- ব্যায়াম
- ভার উত্তোলন
- আঘাত লাগা
- হাড়
- মাংসপেশী
- বয়সজনিত
- রোগজনিত
১। বালিশ: বালিশের সঠিক ব্যবহার না করার জন্য হতে পারে ঘাড়ে ব্যথা। যেমন: ঘুমানোর সময় ব্যবহৃত বালিশ যদি হয় অতিরিক্ত মোটা বা পাতলা, তাহলে ঘুম থেকে ওঠার পর ঘাড়ে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
২। দেহভঙ্গি: দেহভঙ্গি বা posture ঠিক না রাখলে, যেমন: দীর্ঘক্ষণ ঝুঁকে বসে থাকলে বা অস্বাস্থ্যকর দেহভঙ্গিতে ঘুমালে, ঘাড়ে ব্যথার পাশাপাশি শরীরের আরও নানা স্থানে ব্যথা হতে পারে।
৩। ঝুঁকে বসে থাকা: দীর্ঘক্ষণ ঝুঁকে বসে থেকে টিভি দেখলে, কম্পিউটার চালালে, বা পড়াশোনা করলে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
৪। গৃহস্থালী কাজ: গৃহস্থালী কাজের সময় দীর্ঘক্ষণ কোন অস্বাস্থ্যকর দেহভঙ্গিতে থাকলে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
৫। মানসিক অবস্থা: খুব দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপে ভুগতে থাকলে ঘাড়ে ব্যথা দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুন: মন ভালো করার ইসলামিক উপায় এবং মেয়েদের মন ভালো করার উপায়
৬। ব্যায়াম: ব্যায়াম অতি উত্তম। তবে অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
৭। ভার উত্তোলন: অত্যধিক ভার উত্তোলন, বিশেষ করে ঘাড়ের ব্যবহার করে তা করলে, ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
৮। আঘাত লাগা: ঘাড়ে কোন কারণে আঘাত লাগলে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
৯। হাড়: ঘাড়ের কোন হাড় ক্ষয়প্রাপ্ত হলে বা আঘাত পেলে হতে পারে ঘাড়ে ব্যথা।
১০। মাংসপেশী: ঘাড়ের মাংসপেশীতে টান লাগলে বা আঘাতপ্রাপ্ত হলে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
১১। বয়সজনিত: এছাড়া বয়সজনিত কারণেও ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
১২। রোগজনিত: ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে বিভিন্ন রোগের লক্ষণ।
এগুলোই মূলত ঘাড়ে ব্যথার কারণ। এবার চলুন জেনে নিই ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ।
ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ ১০ টি রোগের সতর্কবার্তা
এতোক্ষণ জানলাম ঘাড় ব্যথার কারণ। এবার জেনে নেবো আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূল আলোচ্য বিষয়: ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ। ঘাড় ব্যথা হতে পারে নিম্নোক্ত রোগগুলোর লক্ষণ:
১। কোন হাড়ে গভীর আঘাত লাগার লক্ষণ হতে পারে।
২। নার্ভ ড্যামেজের লক্ষণ হতে পারে।
৩। স্পাইনাল কর্ড ড্যামেজের লক্ষণ হিসেবেও হতে পারে ঘাড় ব্যথা।
৪। রুমটাইড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি ঘাড়ে ব্যথা অনুভব করতে পারেন।
৫৷ হতে পারে ক্যান্সারের লক্ষণ।
৬। কোন ইনফেকশনেরও সংকেত হতে পারে।
৭। হাড়ের কোন ডিজঅর্ডার নির্দেশ করতে পারে।
৮। উচ্চ রক্তচাপের ফলে অনেক সময় ঘাড় ব্যথা হয়।
৯। এটি হতে পারে ব্রেকিয়েল প্লেক্সাস নামক রোগের একটি লক্ষণ।
১০। এছাড়া টর্টিকালিসের লক্ষণও হতে পারে।
ঘাড় ব্যথা উপরোক্ত সমস্যাগুলোর লক্ষণ হতে পারে। তবে অনেক সময় খুবই সাধারণ কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে, যেমন: অস্বাস্থ্যকর দেহভঙ্গিতে শোয়া। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ঔষধ সেবন করা উচিত নয়।
ঘাড় ব্যথা প্রতিরোধের উপায়
ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ তা জানলাম। এবার জানবো ঘাড় ব্যথা প্রতিরোধের উপায়। কারণ প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধ উত্তম। নিম্নোক্ত উপায়ে আমরা ঘাড় ব্যথা প্রতিরোধ করতে পারি:
১। দীর্ঘসময় ঝুঁকে বসে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন না চালানো।
২। একটানা পড়ার টেবিলে বসে না থেকে মাঝেমধ্যে হাঁটাচলা করা।
৩। অনেকক্ষণ অস্বাস্থ্যকর দেহভঙ্গিতে বসে টিভি না দেখা।
৪। অত্যধিক ভার উত্তোলন না করা। আর করতে হলে সঠিক দেহভঙ্গিতে করা।
৫। ঘাড়ের উপরে বেশি চাপ বা ভার না দেয়া।
৬। বালিশ খুব উঁচু বা খুব নিচু না হয় সেদিকে লক্ষ রেখে ঘুমানো।
৭। বিছানা অতিরিক্ত শক্ত বা নরম না করা।
৮। মাথা, ঘাড় নুইয়ে গৃহস্থালি কাজ না করা। প্রয়োজনে বিশেষ যন্ত্রপাতি কেনা। যেমন: মাটিতে বসে তরকারি না কেটে দাঁড়িয়ে কাটা যায় এমন ব্যবস্থা করা।
৯। নিয়মিত ঘাড়ের ব্যায়াম করা যাতে ঘাড় সচল থাকে ও সহজে টান বা আঘাত না লাগে।
১০। মেরুদণ্ড বক্র করে না শোয়া।
উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করলেই আশা করা যায় ঘাড় ব্যথা প্রতিরোধ করা যাবে।
ঘাড় ব্যথা হলে করণীয় কি?
ঘাড় ব্যথা হলে করণীয় হলো প্রথমেই ঘাড় ব্যথা কেন হচ্ছে তা খুঁজে বের করা। ঘাড় ব্যথার কারণ গুলো আরেকবার রিভাইজ দিন। তারপর ভেবে দেখুন এগুলোর মধ্যে কোনটা আপনি করেছেন কি না।
ঘাড় ব্যথা কখনো কখনো কোন রোগের লক্ষণ হয়। তবে অনেক সময়ই এটা হয় অতি সাধারণ ব্যথা। সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে ও দেহভঙ্গিমা ঠিক রাখলেই এটা ঠিক হয়ে যায়। তাই ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ এটাও চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করে নির্ণয় করে নিতে পারেন।
আর যদি সমস্যা জটিল মনে হয় তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। ডাক্তার আপনার অবস্থা বুঝে চিকিৎসা দেবেন।
ঘাড় ব্যথার ঔষধ
ঘাড় ব্যথার জন্য নিজে নিজে কোন ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
বেশি ব্যথা হলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। চিকিৎসক আপনার অবস্থা বুঝে প্যারাসিটামল বা কোন ব্যথানাশক ওষুধ দিতে পারেন। আর যদি অন্য কোন রোগ থাকে তাহলে তার জন্য ওষুধ দিতে পারেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকাই উত্তম।
ঘাড় ব্যথার ব্যায়াম
ঘাড় ব্যথার ব্যায়াম করার মাধ্যমে আমরা ঘাড় ব্যথার সম্ভাবনা অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারি। নিম্নোক্ত সহজ ব্যায়ামগুলো আমরা করতে পারি:
১। পিঠ ও ঘাড় সোজা করে বসুন বা দাঁড়ান। এবার নিজের থুতনিটা আস্তে আস্তে বুকের কাছাকাছি নামিয়ে এনে ১৫-৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এরপর আস্তে আস্তে আবার মাথাকে আগের অবস্থায় আনুন অর্থাৎ সোজা করুন। এরপর থুতনি আস্তে আস্তে উপরে নিয়ে যান৷ যতোটা পারেন উপরে নিয়ে গিয়ে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এরপর আবার শুরুর অবস্থানে চলে আসুন। এটি দিনে যেকোন এক বেলা দশবার করতে পারেন।
২। দুই পা ফাঁক করে ও দুই হাত দুইদিকে ঝুলিয়ে দাঁড়ান। এরপর আস্তে আস্তে ডানদিকে মাথাটি ঝোঁকাতে থাকুন। ডান কান দিয়ে নিজের ডান কাঁধ স্পর্শ করার চেষ্টা করুন। কাঁধের পেশিতে টান না লাগা পর্যন্ত এটা করে যান। এভাবে ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। তারপর শুরুর অবস্থানে ফিরে এসে বাম দিকেও অনুরূপভাবে করুন।
৩। পিঠ ও ঘাড় সোজা করে বসুন বা দাঁড়ান। এরপর মাথা সোজা রেখেই আস্তে আস্তে ডান দিকে ঘোরান। ঘাড়ের পেশিতে টান না লাগা পর্যন্ত ঘোরাতে থাকুন। ১৫-৩০ সেকেন্ড এই অবস্থায় থেকে আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসুন। বামদিকেও অনুরূপভাবে করুন।
আশা করা যায় এই সহজ ব্যায়ামগুলো করলেই আমরা ঘাড় ব্যথা অনেকটা প্রতিহত করতে পারবো।
ঘাড় ব্যথা - সতর্কতা
ঘাড় ব্যথা হলেই অনেকে ভাবেন প্রেশার বেড়েছে। অনেকে আবার নিজে নিজে ওষুধও খেয়ে নেন। এরকম করা ঠিক নয়। যেকোন ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
আরো পড়ুন: ই ক্যাপ এর ১৬ টি উপকারিতা ও অপকারিতা ত্বক ও চুলের উজ্জ্বলতা
ঘরোয়া চিকিৎসা করে যদি সুস্থ না হন তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। যদি দেখেন এক সপ্তাহ ধরে ব্যথা, বা ব্যথার সাথে জ্বর বা অন্য কোন শারীরিক সমস্যা হচ্ছে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যান।
ঘাড় ব্যথা মানেই যেমন মারাত্মক রোগের লক্ষণ নয়, আবার তেমন একে অবজ্ঞাও করা ঠিক নয়। তাই সতর্ক থাকুন।
উপসংহার - শেষ কথা
আশা করি লেখাটি পড়ে নতুন কিছু জানতে পেরেছেন। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে নিজের প্রিয়জনদের সাথেও শেয়ার করতে পারেন। এতে তাঁরাও জানতে পারবেন ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ ও সতর্ক হতে পারবেন। এতোক্ষণ সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার সুস্থতা কামনা করে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি। (1214)
Thanks
আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url