ই ক্যাপ এর ১৬ টি উপকারিতা ও অপকারিতা ত্বক ও চুলের উজ্জ্বলতা

আমাদের শরীরে তিন ধরনের এন্টি অক্সিজেন ভিটামিন কাজ করে। যথা: ভিটামিন এ সি এবং ই। এখানে ডাক্তারের পরামর্শক্রমে ভিটামিন ই বা ই ক্যাপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। মূলত আজকের আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

image

শুধু তাই নয় ই ক্যাপের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত আর্টিকেলটি পড়লে ই ক্যাপ খাবার নিয়ম, ই ক্যাপ কোনটা ভালো, ই ক্যাপ এর বিকল্প সহ আরো অনেক বিষয় জানতে পারবেন। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন এবং ই ক্যাপ সম্পর্কিত সামগ্রিক বিষয়গুলো জানুন যা আপনাদের অনেক কাজে লাগবে।

সূচিপত্র: ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা

ই ক্যাপ এর উপকারিতা

চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি :

আমাদের অনেকের চুল ফেটে যায়, ভেঙ্গে যায়, চুল পড়ে যায়। আর এই সকল সমস্যা ই ক্যাপ দূর করে থাকে। ই ক্যাপ নতুন চুল গজাতেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চুলের যত্নেই মানুষ ই ক্যাপ বেশি খেয়ে থাকে। এছাড়া বাহ্যিক চুলে ব্যবহারের জন্য ই ক্যাপ এর মধ্যকার তরল পদার্থ এর সাথে আপনি বাড়িতে যে তেল ব্যবহার করেন তা মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগাতে হবে। এতে করে চুল হবে শক্ত, মজবুত, সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি:

ই ক্যাপে বিদ্যমান ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। আমাদের শরীরে যখন মেটাবনিজম হয় তখন কিছু ফ্রি রেডিকেল তৈরি হয়। এই ফ্রি রেডিকেল গুলো আমাদের শরীরের বিভিন্ন দিক দিয়ে ক্ষতি করে থাকে। এর কারণে আমাদের ত্বকের গ্লো কমতে পারে। ই ক্যাপ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ও ত্বককে সুস্থ রাখে। ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখে।

কোষগুলো পুনরুদ্ধার:

ফ্রি রেডিকেলের কারণে কোষগুলো ড্যামেজ হয়। ই ক্যাপ ড্যামেজ কোষ গুলোকে পুনরুদ্ধার করে।কোষগুলোকে পুনর্জীবিত করতে সাহায্য করে। যা মানুষকে সুন্দর করে তোলে।

বয়সের ছাপ দূর করে:

ফ্রি রেডিকেলের কারণে কপালে রিংকেল পরে, চোখের নিচে কালো দাগ পরে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের চামড়ায় ভাঁজ পড়ে, কুঁচকে যায়। এছাড়াও অনেক সমস্যা দেখা যায়। আর এসব ক্ষেত্রে ই ক্যাপ এন্টি এইজিং হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ তেল ত্বকের বলি রেখা দূর করতে ম্যাজিক এর মত কাজ করে। ই ক্যাপের ভেতরের তেলটি সিরাম হিসেবে কাজ করে।

হাড়ের সমস্যা রোধ:

ই ক্যাপের অন্যতম একটি উপকারিতা হলো এটি হারের সমস্যা এমনকি বন্ধ্যাত্বের সমস্যাও রোধ করে থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:

ভিটামিন ই এর অভাবজনিত যত রোগ আছে সব রোগেরই প্রতিরোধক হিসেবে এটি কাজ করে। ই ক্যাপ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে সক্রিয় রাখে।

ক্ষত নিরাময়:

শরীরে কোন ক্ষত দেখা দিলে বা আঘাতের ফলে সৃষ্ট ক্ষতস্থান শুকাতে ই ক্যাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ক্ষতিকর টক্সিন বের করা:

আমাদের শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন ই ক্যাপ বের করতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের শরীর ভালো থাকে।

হৃদরোগ প্রতিরোধ:

ই ক্যাপ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কেননা ধমনী ও রক্তনালীর দেয়ালকে সুরক্ষিত রাখে ভিটামিন ই। এটি রক্তনালীর কার্যকারিতা উন্নত করে।

নখের যত্ন নেয়া:

সঠিকভাবে নখের যত্ন নিতে হবে কেননা বিভিন্ন ধরনের কাজে আমাদের নখ সহজেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে, ফেটে যেতে পারে, ভেঙ্গে যেতে পারে। এক্ষেত্রে ভিটামিন ই ক্যাপ আদর্শ ভূমিকা পালন করে। এটি নখের ভঙ্গুরতা দূর করে নখকে মজবুত করে তোলে। ই ক্যাপের ভিতরের তরল পদার্থটি নখ ও এর চারপাশে লাগাতে হবে। রাতে লাগালে বেশি উপকার পাওয়া যাবে কেননা নখে পানি বা অন্য কিছু লাগবেনা ফলে সারারাত নখ ময়েশ্চার থাকবে।

সানবার্ন থেকে রক্ষা:

সানর্বান থেকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। ই ক্যাপ আমাদের সানবার্ন থেকে রক্ষা করে। কড়া রোদে বা সমুদ্রে বেড়াতে গেলে ই ক্যাপ তার সুরক্ষা বলয় দিয়ে আমাদের ঢেকে রাখে ফলে সানর্বান আমাদের কোন ক্ষতি করতে পারে না।

চোখের সুরক্ষা করে:

চোখ খুবই সংবেদনশীল একটি অঙ্গ। ই ক্যাপ চোখের রেটিনাকে সুরক্ষা দান করে। ফলে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন ও ছানি পড়ার মতো রোগের ঝুঁকি কমে।

কিডনির সমস্যা প্রতিরোধ:

ই ক্যাপ কিডনির বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করে ফলে কিডনি সুরক্ষিত থাকে।

চর্মরোগ প্রতিরোধ:

চর্মরোগ দূর করার ক্ষেত্রে ই ক্যাপ খুবই কার্যকর।এমনকি এটি এলজাইমার্স রোগ ও দূর করে থাকে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ:

ভিটামিন ই ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ব্যাহত করার মাধ্যমে ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করে।

কাজ করার গতি বাড়ায়:

আমাদের শরীরে যদি ভিটামিন ই কমে যায় তাহলে খুব সহজে আমরা দুর্বল হয়ে যাবো এবং কোন কাজ করতে ইচ্ছে করবে না। তাই শরীরে ভিটামিন ই এর পরিমাণ যদি স্বাভাবিক থাকে হলে কাজের গতি বেড়ে যায়।

ই ক্যাপ এর অপকারিতা

ই ক্যাপে যেমন অনেক উপকারী গুণ রয়েছে ঠিক তেমনি এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। যেমন :

এলার্জি :

অনেকের ত্বকে ই ক্যাপ এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ফলে ত্বকে র‍্যাশ, চুলকানি বা ফুসকুড়ি দেখা যেতে পারে।

ওজন বেড়ে যাওয়া :

অতিরিক্ত ইক্যাপ খাওয়ার ফলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ত্বকে প্রদাহের কারণ :

ই ক্যাপ আমাদের জন্য অনেক উপকারী হলেও কারো কারো ক্ষেত্রে এটির ব্যবহার ক্ষতির কারণ হতে পারে।সংবেদনশীল ত্বকে সরাসরি ই ক্যাপের তরল পদার্থের ব্যবহার প্রদাহের কারণ হতে পারে।

ক্লান্তি :

শরীরে ভিটামিন ই কম থাকলে যেমন দুর্বলতা দেখা দেয় ঠিক তেমনি এর পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হলেও দুর্বলতা ও ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।

লিভারের ক্ষতি :

ই ক্যাপ অতিরিক্ত পরিমাণে খাবার ফলে শরীরে বিষাক্ত প্রভাব ফেলতে পারে। যার ফলে লিভারের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

রক্তক্ষরণের ঝুঁকি :

ই ক্যাপ রক্তের ঘনত্ব কমাতে সাহায্য করলেও অতিরিক্ত খেলে তা রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।ইকোসপ্রিন, ক্লোপিডোগ্রেল, ওয়ারফেরিন অথবা রক্ত পাতলা করা করার কোন ঔষধ এর সাথে ভিটামিন ই ক্যাপ খাওয়া যাবেনা। খেলে স্টোক হতে পারে এবং অন্যান্য জটিল সমস্যা হতে পারে।

পেটের সমস্যা :

ই ক্যাপ অনেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে হজমের সমস্যা করতে পারে। এর ফলে পেটে বমি বমি ভাব,পেট ব্যথা, ডায়রিয়া ইত্যাদি হতে পারে। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো হালকা ও অস্থায়ী আবার অনেকের ক্ষেত্রে বিরক্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে।

মাথা ব্যথা :

অনেকের ক্ষেত্রে ই ক্যাপ মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরার কারণও হতে পারে।

ই ক্যাপ খাবার নিয়ম

অতিরিক্ত কোন জিনিসই ভালো নয়। ই ক্যাপ এর ক্ষেত্রেও তাই। সাধারণত ই ক্যাপ খাবার নিয়ম নির্ভর করে আপনার বয়স, জেন্ডার, স্বাস্থ্য ইত্যাদির উপর।

তবে যে কোন ভিটামিন বা ঔষধ খাবার পূর্বে অথবা ব্যবহার করার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে।

সাধারণত ভিটামিন ই ক্যাপ ২০০ মিলিগ্রাম ও ৪০০ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়। আপনার শরীরে কি পরিমান ভিটামিন ঘাটতি আছে সেটা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। আন্দাজে নিজে নিজে খাওয়া যাবেনা। ই ক্যাপ আপনার শরীরে কেমন প্রতিক্রিয়া ফেলে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন এবং আপনার স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীকে অভিহিত করবেন।

ভিটামিন ই ক্যাপ কোনটা ভালো

ভিটামিন ই ক্যাপ কোনটা ভালো তা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জেনে নিতে হবে। এছাড়াও কিছু দিক আছে সেগুলো লক্ষ্য করতে হবে।

ভালো কয়েকটা ব্র্যান্ড বেছে নিতে হবে যেগুলো উৎপাদন অনুশীলন মেনে তৈরি হয়েছে এবং গুণগত মান ও বিশুদ্ধতা অন্যদের দ্বারা পরীক্ষিত হয়েছে।

লেভেল গুলি সাবধানে পড়তে হবে। এমন ভিটামিন ই ক্যাপের সন্ধান করতে হবে যেগুলোতে কৃত্রিমতা বর্জিত ভিটামিনের প্রাকৃতিক রূপ রয়েছে।

ভিটামিন ই ক্যাপ এর বিকল্প

আপনি যদি ভিটামিন ই ক্যাপ গ্রহণ করতে না চান তারপরও এর বিকল্প হিসেবে প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন খাদ্য উৎস থেকে ভিটামিন ই গ্রহণ করতে পারেন। ভিটামিন ই যুক্ত খাদ্যগুলো হল:

বিভিন্ন ধরনের বাদাম (পিনাট, আমন্ড বা কাঠবাদাম), সবুজ শাকসবজি যেমন: পালং শাক, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, মিষ্টি আলু, ইত্যাদি।

উপসংহার - শেষ কথা

ই ক্যাপের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের সবার ধারণা থাকা উচিত। এই আর্টিকেলটি পড়লে ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা সহ ই ক্যাপ সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়, আশা করি আপনারা আমার এই কথার সাথে সবাই একমত হবেন এবং ভিটামিন ই এর ঘাটতি মনে হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। (1219)

ধন্যবাদ-Thanks

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
Comment মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url