ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহ ২৮টি তথ্য কারণ লক্ষণ ও সতর্কতা

বেশ কয়েকটি ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহ আছে যেগুলো আমাদের সকলের জানা উচিত। এছাড়াও ডেঙ্গু রোগের কারণ ও লক্ষণ, ডেঙ্গু জ্বর - সতর্কতা, কখন ডেঙ্গু জ্বর হয়, ইত্যাদি পয়েন্টগুলো জানলে আমরা খুব সহজেই ডেঙ্গু জ্বর থেকে পরিত্রাণ পাবো ইনআশাল্লাহ।

image

অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ সহ বেশ কয়েকটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের দেওয়া পরামর্শ থেকে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাসঙ্গিক তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন তাহলে আপনি খুব সহজেই ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহ সনাক্ত করতে পারবেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন।

সূচিপত্র: ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহ ২৮টি তথ্য কারণ লক্ষণ ও সতর্কতা

(নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান ক্লিক করুন)

রোগ ও সমস্যা All Article (Click here)

বাতজ্বর এবং চিকুনগুনিয়া যেকোনো জ্বর হলে আমাদের উচিত অবহেলা না করা। অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ, বলছেন জ্বর আসলে কোন অসুখ না, বরং জ্বর অন্যান্য রোগের লক্ষণ এর একটি প্রকাশ। আশা করি আপনারা এখন থেকে জ্বরের বিষয়ে সচেতন থাকবেন। এই ধারাবাহিকতায় ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহ, ডেঙ্গু রোগের কারণ ও লক্ষণ, ডেঙ্গু জ্বর - সতর্কতা, কখন ডেঙ্গু জ্বর হয় এই সকল পয়েন্টগুলো আপনাদের কাছে তুলে ধরা হলো।

ডেঙ্গু রোগের কারণ?

প্রথমেই আমরা ডেঙ্গু রোগের কারণ সম্পর্কে জানব আপনি যদি যেকোনো সমস্যার উৎপত্তি বা উৎস সম্পর্কে জানেন তাহলে সেই সমস্যার সাথে মোকাবেলা করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায় ঠিক তেমনি ডেঙ্গু রোগের কারণ গুলো জানলে আপনার ডেঙ্গু মোকাবেলা করতে সহজ হবে।

ডেঙ্গু রোগের কারণ, (স্ত্রী এডিস মশা) আপনারা জানেন মশার মধ্যেও বিভিন্ন জাত রয়েছে এবং পুরুষ ও স্ত্রী মশা রয়েছে এই মশার মধ্যে স্ত্রী এডিস মশা ভাইরাস বহন করে আমাদের শরীরে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটায়। [আশা করি এতটুকু বিষয় আপনার কাছে ডেঙ্গু রোগের কারণ, পানির মতো সচ্ছ এবং ক্লিয়ার]

ডেঙ্গু রোগের প্রধান কারণ Aides aegypti ও Aides albopictus স্ত্রী এডিশন মশার কামড় থেকে চার প্রকার ডেঙ্গু ভাইরাসের হয়।

  • DENV-1
  • DENV-2
  • DENV-3
  • DENV-4

উপরে উল্লেখিত ক্যাটাগরির গুলোর মধ্যে যেকোনো ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে তবে দুশ্চিন্তা করবেন না আপনি সঠিক গাইডলাইন অনুসরণ করলে ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবেন।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহ

বেশ কিছু লক্ষণের মাধ্যমে আপনারা খুব সহজেই ডেঙ্গু জ্বর সনাক্ত করতে পারবেন নিচে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহ দেওয়া হল।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহ ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
উচ্চ তাপমাত্রা ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন সময় হঠাৎ করে জ্বরের মাত্রাটা বেড়ে যায়।
মাথাব্যথা কিছু কিছু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর কপাল ব্যথা করে অনেক সময় এত পরিমাণ ব্যথা করে রোগী চিৎকার শুরু করে। তবে কপাল বেশি ব্যথা করে মাথার অন্যান্য জায়গা কম ব্যথা করে।
চোখের পেছনে ব্যথা সাধারণত আমরা যখন কোন দিকে তাকাই তখন আমাদের চোখ স্থির থাকে না, নাড়াচাড়া করে ঠিক সে সময় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর চোখ কখনো কখনো ব্যথা অনুভব করে।
মাংসপেশী ব্যাথা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের প্রচন্ড ব্যথা হয় সেজন্য অনেকেই ডেঙ্গু জ্বরকে (ব্রেকবোন ফিভার) বলে।
বমি বমি বমি ভাব কখনো কখনো বমি হয়ে যায় এরকম সমস্যা হতে পারে।
ত্বকে র‍্যাশ বা লালচে দাগ খেয়াল করে দেখবেন আপনার ত্বকে ছোট ছোট ফুসকুড়ি এছাড়াও হাতে পায়ে লাল লাল দাগ হয়ে গেছে, দেখে মনে হয় আপনাকে কেউ কোন কিছু দিয়ে আঘাত করেছে এরকমটা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়।
ক্লান্তি ও দুর্বল কোন কিছু করতে মন চায় না, মনে হয় শুয়ে বসে থাকি, শুয়ে বসে থাকলেও কিছু ভালো লাগেনা, ক্লান্তি ও দুর্বল অনুভূতি হয় ইত্যাদি।
রক্তপাত এই সমস্যাটি খুবই কম এবং একেবারে সীমিত কখনো হয়তো বা নাক দিয়ে অথবা সর্দির সাথে হালকা পরিমাণে রক্ত বের হয়।
হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ আমাদের শরীরে সর্বক্ষণ হৃদস্পন্দন হয় এবং রক্ত চলাচল করে কিন্তু আপনি যদি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন তাহলে আপনার শরীরের হৃদস্পন্দন কমে যাবে এবং রক্তচাপ কমে যাবে।

সাধারণত এই লক্ষণ গুলোর মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ডেঙ্গু জ্বর সনাক্ত করা হয়, এছাড়াও বেশ কিছু মেডিকেল টেস্ট রয়েছে যেগুলো করলে আপনি ১০০% নিশ্চিত হয়ে যাবেন। তবে আপনি যখন মেডিকেল টেস্ট করবেন ভাবছেন তার আগে অবশ্যই আপনাকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।

ডেঙ্গু জ্বর - সতর্কতা

আমার পূর্বপুরুষেরা বলতো এমনকি এখনো বলে (সতর্কের ঘরে চুরি কম হয়) সত্যি তাই আপনি যদি সচেতন থাকেন তাহলে যেকোনো সমস্যা আপনাকে খুব সহজে আক্রমণ করতে পারবেনা। নিচে বেশ কিছু পয়েন্ট দেওয়া হল আপনারা জানেন আমি শুধু আপনাদেরকে একটু মনে করিয়ে দিচ্ছি। আপনার অনেক সচেতন সেজন্য হয়তোবা অনলাইনে এসে এরকম একটি আর্টিকেল পড়ছেন। (ধন্যবাদ আপনাদেরকে)

মশা কামড়, মশার কামড় আমরা কেউ সহ্য করি না তারপরেও মশা আমাদেরকে আক্রমণ করা থামায় না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা মশার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ না করি। কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করি ১. মশারি ব্যবহার করি, ২. মশার কামড় থেকে বাঁচার ক্রিম, ৩. বড় কাপড় পরিধান করা যাতে পুরোপুরি শরীর ঢেকে যায়, ৪. মশা-রোধক বিভিন্ন স্প্রে এবং কয়েল ব্যবহার ইত্যাদি।

মশার উৎপত্তি, এডিস মশা স্বচ্ছ পানিতে খুব দ্রুত বংশবিস্তার করে। সেজন্য আপনাদের উচিত বাড়ির আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা যেমন: ফুলের টব, ফ্রিজের ট্রে, এসির নিচে, পানির ট্যাঙ্ক, বালতি ইত্যাদি। আরো একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন বাড়ির আশেপাশে জঙ্গল ঝোঁক পরিষ্কার করে রাখার।

চিকিৎসকের পরামর্শ, আপনি নিজের অবস্থা নিজে খুব ভালো উপলব্ধি করতে পারবেন এছাড়াও এখন আপনি ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহ জেনে গেছেন আপনার যদি মনে হয় আমার অবস্থা খারাপ কিংবা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কখন ডেঙ্গু জ্বর হয় (সময়কাল)

আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এছাড়াও আপনি কি জানেন এডিস মশা কখন কামড়ায়? এই মশা সাধারণত অন্ধকারে কামড়ায় না, দিনের আলোতে বেশি কামড়ায়।

উদাহরণ, খেয়াল করে দেখবেন আপনি একটি রাস্তার পাশে বসে আছেন কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হলো কিংবা রাস্তার পাশে কিছু জঙ্গল আছে আপনাকে এডিস মশা কুটকুট করে কামড়াচ্ছে। এডিস মশা আপনারা অনেকে চিনেন এই মশার গায়ে সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে।

ডেঙ্গু জ্বর কখন বিপদজনক?

সাধারণত অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই ডেঙ্গু জ্বর কমে যায়। কিন্তু আপনার ডেঙ্গু জ্বর যদি

  1. ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার DHF
  2. অথবা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম DSS

পর্যায়ে পৌঁছে যাই তাহলে খুব দ্রুত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। কিভাবে বুঝবেন আপনি উপরে দুটি ডেঙ্গু জ্বরের মধ্যে কোনটিতে আক্রমণাক্ত হয়েছেন। নিচের দেওয়া লক্ষণ গুলো দেখলেই বুঝে নিবেন এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

আরো পড়ুন: মাথার পিছনে ব্যথার ২০ টি কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার

  • তীব্র পেটব্যথা করা
  • প্রচন্ড বমি হলে
  • নাক মুখ দিয়ে রক্তপাত
  • প্রচুর ক্লান্ত অনুভব হলে
  • শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হলে
  • ত্বক ঠাণ্ডা হয়ে গেলে
  • রক্তচাপ কমে গেলে *
  • পেশাব পায়খানা কমে গেলে *
  • রক্তে প্লাটিলেট সংখ্যা কমে গেলে *

(*) চিহ্নিত পয়েন্টগুলো প্রাথমিক চিকিৎসক ডাক্তারের মাধ্যমে পরীক্ষা করতে হবে। এগুলো রোগীর মাঝে প্রকাশ পেলে দেরি না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।

উপসংহার - শেষ কথা

ডেঙ্গু জ্বর একটি মারাত্মক মশা-বাহিত রোগ এই সমস্যার সমাধান করার জন্য আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে তাহলেই ডেঙ্গু জ্বর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই সমস্যাটি কয়েকদিনের সেরে যায় তবে DHF এবং DSS রূপ নিলে সমস্যা। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই সচেতন থাকুন প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহ ও প্রতিকার সম্পর্কে পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজন সকলকে সচেতন করুন।

ধন্যবাদ-Thanks

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
Comment মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url