দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক ও ১০ টি উপশমের ওষুধে
দাঁতে ব্যথা হলেই দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক খুঁজতে শুরু করেন অনেকে। কিন্তু সঠিক তথ্যের অভাবে অনেকসময় ভুলভাল মেডিসিন খেয়ে বাধে বিপত্তি। তাই এ ব্যাপারে সকলের জানা থাকা প্রয়োজন।
দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক হিসেবে অনেক ওষুধই ডেন্টিস্টরা প্রেস্ক্রাইব করে থাকেন। আমরা আজকের আর্টিকেলটিতে সেগুলো সম্পর্কে জানবো। এছাড়া জানবো দাঁত ব্যথার কারণ, দাঁত ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা, দাঁতের জন্য উপকারী ও ক্ষতিকর খাবার সহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
(নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান ক্লিক করুন)
সূচিপত্র: দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক ১০ টি ওষুধে উপশম
- দাঁত ব্যথার কারণ
- দাঁত ব্যথা প্রতিরোধের উপায়
- দাঁত ব্যথা হলে করণীয়
- দাঁত ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা
- দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক ১০ টি ওষুধে উপশম
- সতর্কতা
- দাঁতের জন্য উপকারী খাবার
- দাঁতের জন্য ক্ষতিকর খাবার
- উপসংহার
দাঁত ব্যথার কারণ গুলো কি কি?
দাঁত ব্যথার কারণ গুলো জানা থাকলে আমরা সহজেই সচেতন থেকে এই সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারি। দাঁত ব্যথার কারণ গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
- নিয়মিত ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ না করা।
- নিয়মিত ফ্লস (floss) না করা।
- অতিরিক্ত মিষ্টি বা চিনিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা।
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্য যেমন ভাজাপোড়া, তেলে ভাজা খাবার, জাঙ্কফুড ইত্যাদি খাওয়া।
- দাঁত ক্ষয় বা দাঁতে পোকা হওয়া।
মূলত এগুলোই দাঁত ব্যথার কারণ। আমরা এই ব্যাপারগুলোতে একটু সতর্ক হলেই আমাদের মৌখিক সুস্বাস্থ্য বজায় থাকবে।
দাঁত ব্যথা প্রতিরোধ করার উপায়
দাঁত ব্যথার কারণ জানলাম। এবার দাঁত ব্যথা প্রতিরোধের উপায় গুলোও জানা দরকার। নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করার মাধ্যমে আমরা সহজেই দাঁত ব্যথা প্রতিরোধ করতে পারি:
- দাঁতের জন্য সঠিক টুথপেস্ট ও টুথব্রাশ দিয়ে প্রতিদিন সকালে খাওয়ার পরে ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দাঁত ভালোভাবে ব্রাশ করা।
- নিয়মিত দাঁত ভালোভাবে ফ্লস করা।
- চিনিযুক্ত খাদ্য যথাসম্ভব পরিহার করা।
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্য, যেমন: ভাজাপোড়া খাবার, জাঙ্ক ফুড ইত্যাদি পরিহার করে চলা।
- মাসে একবার ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে দাঁতের চেকআপ করানো।
এই কাজগুলো করার মাধ্যমে আমরা সহজেই দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্ত থাকতে পারি। তাই এ ব্যাপারে আমরা সচেতন থাকার চেষ্টা করবো।
দাঁত ব্যথা হলে করণীয় ঘরোয়া চিকিৎসা বা ডেন্টিস্ট
দাঁত ব্যথার কারণ ও প্রতিরোধ তো জানলাম। কিন্তু এরপরেও দাঁত ব্যথা হলে করণীয় কী?
দাঁতে ব্যথা হলে প্রথমে ঘরোয়া চিকিৎসা করতে পারেন। সাধারণত এতেই ব্যথা সেরে যায়। তবে যদি না সারে তাহলে অবিলম্বে ডেন্টিস্টের কাছে যান। আপনার অবস্থা বিবেচনা করে ডেন্টিস্ট আপনাকে চিকিৎসা দেবেন।
আশা করা যায় এভাবে একটু সতর্ক হলে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলেই ব্যথা দ্রুত সেরে যাবে।
দাঁত ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা দ্রুত আরাম
দাঁত ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে নিচের কাজগুলো করতে পারেন:
- গরম পানিতে ১ বা ২ চা চামচ লবণ মিশিয়ে কুলি করুন।
- লবঙ্গ ও গোলমরিচের পেস্ট তৈরি করে দাঁতে কয়েক মিনিট লাগিয়ে রাখুন।
- যেখানে ব্যথা হচ্ছে সেখানে কিছুটা আলু কেটে ধরে রাখতে পারেন।
- দাঁতে সামান্য ফিটকিরি লাগিয়ে রাখলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যথা কমে।
- অতিরিক্ত ঠান্ডা খাবার পরিহার করুন।
এই দাঁত ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো করলেই সচরাচর দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। তবে অবস্থার উন্নতি না হলে অবশ্যই ডেন্টিস্টের কাছে যেতে হবে।
দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক ১০ টি ওষুধে উপশম
এবার আলোচনা করবো আজকের আর্টিকেলের মূল টপিক দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক নিয়ে। দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক সাধারণত হিসেবে নিচের ওষুধগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে:
- পেনিসিলিন
- টেট্রাসাইক্লিন
- অ্যাম্পিসিলিন
- অ্যামোক্সিসিলিন
- এরিথ্রোমাইসিন
- সেফালোস্পোরিন
- মেট্রোনিডাজল
- সালফোনামাইড
- সোট্রিমোক্সাজল
- লিঙ্কোসামাইড
১। পেনিসিলিন: দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক হিসেবে পেনিসিলিন ব্যবহৃত হয়। পেনিসিলিন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে। তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। উদাহরণস্বরূপ: অনেকের পেনিসিলিনে অ্যালার্জি থাকতে পারে।
২। টেট্রাসাইক্লিন: বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসায় টেট্রাসাইক্লিন জাতীয় এন্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়। তবে নতুন দাঁত গজাচ্ছে এমন অবস্থায় টেট্রামাইসিন সেবন করলে তা দাঁতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। সেজন্য ৮ বছর বা তার কম বয়সী বাচ্চাদের এবং গর্ভবতী বা বাচ্চাকে এখনও বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন নারীদের এই জাতীয় এন্টিবায়োটিক সেবন না করানোই ভালো।
৩। অ্যাম্পিসিলিন: এটি পেনিসিলিন ধরণের ওষুধ তবে আরও বেশি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করতে সক্ষম।
৪। অ্যামোক্সিসিলিন: এটিও পেনিসিলিন গ্রুপের আরেকটি এন্টিবায়োটিক। অ্যাম্পিসিলিনের মতো এটিও আরও বেশি সংখ্যক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম।
৫। এরিথ্রোমাইসিন: পেনিসিলিনে যদি কেউ অ্যালার্জিক হয়ে থাকেন তবে এরিথ্রোমাইসিন হতে পারে তার জন্য সঠিক এন্টিবায়োটিক।
৬। সেফালোস্পোরিন: সেফালোস্পোরিন মৌখিকভাবে সেবন করা যায় আবার অনেক সময় ইঞ্জেকশন হিসেবেও প্রয়োগ করা হয়। পেনিসিলিনে সমস্যা বা অ্যালার্জি থাকলে এটি একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।
৭। মেট্রোনিডাজল: মেট্রোনিডাজলের সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। দাঁতের চিকিৎসায় এই এন্টিবায়োটিকেরও ব্যবহার হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রোটোজোয়ার বিরুদ্ধে এটি কার্যকর।
৮। সালফোনামাইড: দাঁতের চিকিৎসায় সালফোনামাইড গ্রুপের ওষুধের বহুল ব্যবহার রয়েছে। এছাড়া শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের চিকিৎসায়ও এর ব্যবহার হয়।
৯। সোট্রিমোক্সাজল: এছাড়া দাঁতে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় সোট্রিমোক্সাজল (Cotrimoxazole) শ্রেণীর ওষুধ।
১০। লিঙ্কোসামাইড: অন্যান্য এন্টিবায়োটিকে কাজ না হলে অনেক সময় লিঙ্কোসামাইড ব্যবহার করা হয়। ক্লিন্ডাসিন এই ধরণের ওষুধ।
আপনার সমস্যা বিবেচনা করে ডেন্টিস্ট এই ওষুধগুলোর মধ্যেই কোন একটা প্রেস্ক্রাইব করতে পারেন। এগুলো যে শুধুই দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক তা নয়। শরীরের অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যায়ও এগুলোর ব্যবহার আছে।
দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা
দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক নিয়ে যা আলোচনা করলাম, তা একান্তই শিক্ষামূলক। এটা কোন বিশেষজ্ঞের প্রেস্ক্রিপশন না। তাই দয়া করে কেউ ইন্টারনেট ঘেঁটে নিজে নিজে কোন ওষুধ খাবেন না। দাঁতের ব্যথায় প্রথমেই ঘরোয়া চিকিৎসাগুলো করুন। তাতে কাজ না হলে চিকিৎসকের কাছে যান।
চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ওষুধ খাবেন না। আর এন্টিবায়োটিক তো একেবারেই না। অনেকে আবার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক তো খান, কিন্তু কোর্স সম্পূর্ণ করেন না।
যেমন: ডাক্তার হয়তো ৫ টা ট্যাবলেট খেতে বলেছেন। কিন্তু আপনার ৩ টা ট্যাবলেট খাওয়ার পরই ব্যথা সেরে গেছে। তখন আপনি বাকি দুইটা ট্যাবলেট আর খেলেন না। এই কাজ করা একেবারেই ঠিক নয়। এর ফলে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিকভাবে এন্টিবায়োটিক খান।
দাঁতের জন্য উপকারী খাবার সুস্থ ও মজবুত দাঁত
দাঁতের জন্য উপকারী খাবার বেশি বেশি গ্রহণের ফলে দাঁত হবে সুস্থ ও মজবুত। ফলে সহজে সমস্যা হবে না। দাঁতের জন্য উপকারী খাবার গুলো নিম্নরূপ:
- ফাইবার বা আঁশযুক্ত শাকসবজি ও ফলমূল।
- ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ বিভিন্ন খাবার যেমন ডিম, দুধ, শিমের বিচি, সয়াবিন ইত্যাদি।
- গ্রিন টি দাঁতের জন্য উপকারী। এতে থাকে পলিফেনল যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে।
- ফ্লুরাইড দাঁতের জন্য উপকারী। তাই ফ্লুরাইডযুক্ত বিভিন্ন খাবার এবং পানি।
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ বিভিন্ন ফলমূল যেমন লেবু, আমলকী, টমেটো, মাল্টা, কাঁচামরিচ ইত্যাদি।
- ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ বিভিন্ন খাবার দাঁতকে মজবুত করে।
- জিংক দাঁতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।
- ভিটামিন বি-১ সমৃদ্ধ বিভিন্ন খাবার দাঁতের ব্যথা কমাতে সহায়ক। ডিমের কুসুম, চিনাবাদাম ইত্যাদিতে ভিটামিন বি-১ পাওয়া যায়।
- আয়োডিনযুক্ত বিভিন্ন খাবার যেমন আয়োডিনযুক্ত লবণ, বাঁধাকপি, ফুলকপি ইত্যাদি।
- চিনিমুক্ত চুইং গাম মুখে লালা উৎপাদনে সাহায্য করে যা দাঁতের ফাঁক থেকে খাদ্যকণা সরাতে ভূমিকা রাখে।
দাঁতের যত্ন নিতে তাই খাদ্যতালিকায় এই উপাদানগুলো নিয়মিত রাখুন।
দাঁতের জন্য ক্ষতিকর খাবার পরিহার উচিত
উপকারী খাবার গ্রহণের পাশাপাশি দাঁতের জন্য ক্ষতিকর খাবার গুলো পরিহার করাও জরুরী। তাহলেই পাবেন সর্বোচ্চ ফলাফল। দাঁতের জন্য ক্ষতিকর খাবার গুলো হলো:
- চিনি
- তামাক
- জর্দা ও গুল
- মাদকদ্রব্য
- অতিরিক্ত টক খাবার যেমন তেঁতুল, টক ক্যান্ডি ইত্যাদি
- দাঁতের ফাঁকে আটকে যায় এমন খাবার
তাই আমরা চেষ্টা করবো দাঁতের জন্য ক্ষতিকর খাবার গুলো পরিহার করে চলার। এতে মুখের সর্বোচ্চ সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সক্ষম হবো।
উপসংহার - শেষ কথা
আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আশা করি আপনার জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। লেখাটি ভালো লাগলে প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। এতে তারাও নিজেদের মৌখিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন থাকতে পারবেন। এতোক্ষণ সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ। সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। (1214)
Thanks
আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url