কনসিভ করলে কি পেটে ব্যথা হয় ১৭ টি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ

কনসিভ করলে কি পেটে ব্যথা হয়? অনেকের প্রশ্ন। মাতৃত্ব অনেক নারীর জীবনেরই এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। অনেকেই অল্প বয়স থেকেই স্বপ্ন দেখেন একদিন মা হওয়ার। নতুন মা হওয়া নিয়ে আমাদের অনেকেরই থাকে নানা প্রশ্ন। এসব প্রশ্ন আমরা অনেক সময় করতে সঙ্কোচ বোধ করি।

image

এরকম কিছু প্রশ্নের উত্তর নিয়েই তাই সাজানো হয়েছে আজকের আর্টিকেলটি। আজ আমরা আলোচনা করবো কনসিভ অর্থ কি, এবং কনসিভ করলে কি পেটে ব্যথা হয় ১৭ টি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

সূচিপত্র: কনসিভ করলে কি পেটে ব্যথা হয় ১৭ টি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ

ভূমিকা

মাতৃত্ব জগতের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর মাধ্যমেই পৃথিবীতে অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মতো মানবজাতিরও সংখ্যাবৃদ্ধি হয়ে এসেছে যুগ যুগ ধরে। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি সম্পর্কে লজ্জা না করে জ্ঞানার্জন করতে হবে। তাই আজ আমরা জানবো কনসিভ করলে কি পেটে ব্যথা হয় ১৭ টি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ। তবে তার আগে চলুন জেনে নিই কনসিভ অর্থ কি?

কনসিভ অর্থ কি?

কনসিভ অর্থ গর্ভধারণ করা। অর্থাৎ, যখন আপনার জরায়ুতে ভ্রূণ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয় তখনই ধরা যায় আপনি কনসিভ করেছেন। সাধারণত যৌনমিলনের দ্বারা এটির সূত্রপাত হয়। তবে আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্যে অনেকে এখন যৌনমিলন ছাড়াও মা হতে পারেন। কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায় কেউ কনসিভ করেছেন কি না। চলুন এবার জেনে নিই কনসিভ করলে কি পেটে ব্যথা হয় ১৭ টি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ।

কনসিভ করলে কি পেটে ব্যথা হয় ১৭ টি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ

কনসিভ অর্থ কি তা জানলাম। এবার জেনে নেবো কনসিভ করলে কি পেটে ব্যথা হয় ১৭ টি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ। তবে তার আগে বলে রাখি, কেউ কনসিভ করেছেন কি না তা নিশ্চিতভাবে জানতে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

নিম্নে তুলে ধরা হলো কনসিভ করার লক্ষণ গুলো,

  1. মাসিক বন্ধ হওয়া
  2. বমি বমি ভাব, বমি, শরীর খারাপ করা
  3. স্তনের পরিবর্তন
  4. ঘন ঘন প্রস্রাব
  5. ক্লান্তি
  6. রক্ত
  7. মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা
  8. পেট ফাঁপা
  9. ব্যথা
  10. খাবার
  11. ঘ্রাণশক্তি
  12. পিঠে ব্যথা
  13. কোষ্ঠকাঠিন্য
  14. মুড স্যুইং
  15. শ্বাসকষ্ট
  16. বুক জ্বালাপোড়া
  17. ব্রণ

১। মাসিক বন্ধ হওয়া: কনসিভ করার প্রাথমিক একটি লক্ষণ হলো মাসিক বন্ধ হওয়া। কনসিভ করার ৮-১০ দিনের মাথায় প্লাসেন্টায় hCG নামক একটি হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোন ভ্রূণের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলস্বরূপ মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। তবে মাসিক বন্ধের একমাত্র কারণ প্রেগনেন্সি নয়। আরও বিভিন্ন কারণে মাসিক বন্ধ হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে নিশ্চিত হতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই শ্রেয়।

২। বমি বমি ভাব, বমি, শরীর খারাপ করা: গর্ভধারণের ২-৮ সপ্তাহের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে। গর্ভধারিণীর শরীর খারাপ করতে পারে, বিশেষ করে সকালবেলায়। বমি বমি ভাব হতে পারে। বমিও হতে পারে। প্রচুর ক্লান্ত লাগতে পারে। শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ১২ তম সপ্তাহে এই লক্ষণ চলে গিয়ে আবার ৩২ তম সপ্তাহে ফিরে আসতে পারে। এ সময় মায়ের স্বাস্থ্যের বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার। কারণ অতিরিক্ত বমি ও অসুস্থতা শরীরকে দুর্বল করে দিতে পারে, শরীরে পানিশূন্যতা হতে পারে।

৩। স্তনের পরিবর্তন: গর্ভধারণের আরেকটি লক্ষণ হলো স্তনে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটা। এ সময় আপনার স্তন আকার-আকৃতিতে বৃদ্ধি পেতে পারে, শিরা-উপশিরাগুলো স্পষ্টতর হতে পারে। নিপলের আশেপাশের ত্বক গাঢ় রং ধারণ করতে পারে। এই লক্ষণগুলো সচরাচর গর্ভধারণের ২-৩ দিনের মধ্যেই শুরু হয়। ( ব্রা সাইজ মাপার ১০০% সঠিক নিয়ম ও all cup নাম্বার সহ পিক )

৪। ঘন ঘন প্রস্রাব: ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। কারণ ভ্রূণের বৃদ্ধির জন্য চাই অতিরিক্ত পানি। তাই এসময় শরীরে অতিরিক্ত পানি ও রক্ত উৎপাদিত হয়৷ ফলে কিডনির কাজ বেড়ে যায়। এছাড়া ভ্রূণের বৃদ্ধির সাথে সাথে জরায়ুর আকারও বৃদ্ধি পায়। ফলে মূত্রথলিতে চাপ পড়ে। এসব কারণে এসময় অধিক প্রস্রাব হয়। এই প্রস্রাবের রং গাঢ় হতে পারে।

৫। ক্লান্তি: গর্ভকালীন সময়ে শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোন উৎপাদিত হয়। এই হরমোন ভ্রূণের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু একইসাথে এটি শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়ার (metabolism) গতি কমিয়ে দিতে পারে। ফলে বিপাকীয় প্রক্রিয়া চালাতে শরীরকে অতিরিক্ত শক্তি ক্ষয় করতে হয়। এ কারণে শরীরে ক্লান্তিভাব আসতে পারে। গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহেই এই লক্ষণটি দেখা দিতে পারে।

তবে দুর্বলতার পেছনে অনেক সময় অন্য কোন কারণও থাকতে পারে, যেমন: অ্যানেমিয়া।

৬। রক্ত: মাসিকের রাস্তা দিয়ে হালকা রক্ত বের হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে মাসিকের মতো ব্যথা বা ক্র্যাম্পিং হয় না। অবশ্য অনেক সময় এই রক্ত গর্ভপাতেরও লক্ষণ হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়াই উত্তম।

৭। মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা: গর্ভবতী হলে আপনার মাথা ব্যথা করতে পারে। মাথা ঘুরতেও পারে। মূলত শরীরে নানা হরমোনাল পরিবর্তন, পুষ্টির অভাব, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়া, ক্যাফেইন উইথড্রয়াল ইত্যাদি নানা কারণে এরকম হতে পারে।

৮। পেট ফাঁপা: পেট ফাঁপা গর্ভধারণের আরেকটি লক্ষণ। মূলত শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোনের উৎপাদনের ফলে এরকম হয়। এই হরমোন পেটে গ্যাস জমিয়ে পেট ফাঁপাতে পারে। এসময় পেট ভরা অনুভূত হয়, অস্বস্তি লাগে, পেট ফুলে ওঠে।

৯। ব্যথা: পিরিয়ডের সময় অনেক নারী তলপেটে ব্যথা অনুভব করেন যাকে ক্র্যাম্পিং বলা হয়। গর্ভধারণের ক্ষেত্রেও এরকম হতে পারে। সচরাচর ১-২ সপ্তাহের মাথায় এই ব্যথা হতে পারে৷ অনেকের ক্ষেত্রে ব্যথা অতি তীব্র হতে পারে। বেশি কষ্টকর অবস্থা হলে এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

১০। খাবার: বিভিন্ন খাবারের প্রতি অনীহা জন্মাতে পারে। আবার বিচিত্র সব খাদ্যের জন্য মন আঁকুপাঁকু করতে পারে। অনেকের আবার খাদ্য নয় এমন জিনিসও খেতে ইচ্ছা করতে পারে। আবার সারাজীবন অপছন্দ করেছে এমন কোন খাবার খেতে ইচ্ছা হতে পারে।

১১। ঘ্রাণশক্তি: গর্ভবতী ব্যক্তির ঘ্রাণশক্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। গন্ধের সামান্যতম পরিবর্তনও তিনি ধরে ফেলতে সক্ষম হতে পারেন। যেমন: খাবারের গন্ধ সামান্য এদিক-ওদিক হলে সেটা খেতে না পারা। আবার আগে অপছন্দ করতেন না এমন কোন গন্ধের প্রতি তীব্র অপছন্দ জন্মাতে পারে। গৃহস্থালির ছোটখাটো গন্ধ যা আমরা খেয়াল করি না সেগুলোও গর্ভবতীর জন্য অসুবিধাজনক হতে পারে।

১২। পিঠে ব্যথা: কনসিভ করার পর শরীরে ব্যাপক পরিবর্তন হয়। যেমন: সন্তান জন্মদানের সাথে জড়িত অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর সম্প্রসারণ হতে পারে, ওজন বাড়তে পারে, নানা হরমোন নিঃসৃত হতে পারে, রক্তসঞ্চালন বাড়তে পারে ইত্যাদি। এসব নানা পরিবর্তনের ফলস্বরূপ গর্ভবতীর পিঠে ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা অল্প বা বেশি হতে পারে।

এতে তাঁর চলাচলে অসুবিধা হতে পারে। এই ব্যথা থেকে আরাম পেতে ভারী কাজ থেকে বিরত থাকা, পিঠকে ঠিকমতো সাপোর্ট দেয় অতিরিক্ত নরম বা শক্ত নয় এরকম বিছানায় শোয়া, দেহভঙ্গি (posture) ঠিক রাখা ইত্যাদি করা যেতে পারে। তবে ব্যথা তীব্র হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যান।

১৩। কোষ্ঠকাঠিন্য: শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোন নিঃসরণের ফলে বিপাকীয় প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। এছাড়া জরায়ুর আকার বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিপাকতন্ত্রে খাদ্য ও পানির চলাচল ব্যাহত হয়৷ ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। এসময় বেশি বেশি পানি খান, ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করুন, হালকা ব্যায়াম যেমন যোগাসন করুন, হাঁটাচলা করুন। এসব কাজের মাধ্যমে এই সমস্যা কমানো যায়। তবে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

১৪। মুড স্যুইং: প্রেগনেন্সি চলাকালীন প্রচণ্ড মুড স্যুইং হতে পারে। কারণ এ সময়ে শরীরে নানা হরমোনাল পরিবর্তন ঘটতে থাকে। বিভিন্ন হরমোনের কার্যকারিতার ফলে হঠাৎ করে মন ভালো হয়ে যাওয়া, আবার প্রচণ্ড রাগ হওয়া, ডিপ্রেশন, হতাশা ইত্যাদি অনুভব করতে পারেন। তাই গর্ভবতীর প্রতি এ সময় অধিক যত্নশীল থাকুন। প্রয়োজনে সাইকোলজিস্টের শরণাপন্ন হোন।

১৫। শ্বাসকষ্ট: শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোনের ক্রিয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এছাড়া বাচ্চার বৃদ্ধির সাথে সাথে মায়ের শরীরে অধিক অক্সিজেন প্রয়োজন হতে পারে। আবার বাচ্চার আকার বৃদ্ধি পেলে মায়ের ডায়াফ্রামে চাপ লাগার ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

১৬। বুক জ্বালাপোড়া: গর্ভধারণের আরেকটি লক্ষণ হলো বুক জ্বালাপোড়া করা। হরমোনার পরিবর্তনের ফলে, শরীরের ভেতরে শিশুর বেড়ে ওঠার ফলে, এবং আরও নানা কারণে বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে।

১৭। ব্রণ: শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোনের ক্রিয়ার ফলে ত্বকের নিচে অধিক তেল উৎপাদন হয়৷ এই তেল লোমকূপে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে ঘামের সাথে শরীরের বর্জ্য নিষ্কাশনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এর ফলে মুখসহ শরীরের নানা স্থানে ব্রণ দেখা দিতে পারে।

উপরোক্ত লক্ষণগুলির বেশিরভাগ দেখা দিলে মোটামুটি ধরে নেওয়া যায় যে আপনি কনসিভ করেছেন। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায় না। তাই এক বা একাধিক লক্ষণ নিজের মধ্যে দেখতে পেলেই ডাক্তারের কাছে যান।

তাহলে, কনসিভ করার লক্ষণ গুলোর মধ্যে আমরা দেখলাম পেটে ব্যথা বা ক্র্যাম্পের কথা এসেছে। পেটে ব্যথার পাশাপাশি পিঠে ব্যথাও হতে পারে। কাজেই আমরা এতোক্ষণে আমাদের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি।

অর্থাৎ, কনসিভ করলে কি পেটে ব্যথা হয় ১৭ টি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ বিষয়ক আজকের আর্টিকেলটি থেকে আমরা এতোক্ষণে জানলাম যে হ্যাঁ, কনসিভ করলে পেটে ব্যথা হতে পারে। তবে কিছু কিছু মানুষের এটা হয় না। তাই এক্ষেত্রে আপনার পেটে ব্যথা হবেই এরকমটাও ধরে নেওয়া যায় না।

উপসংহার - শেষ কথা

মাতৃত্ব একজন নারীর জীবনে বেশ কষ্টকর একটি সময়। তাই এ সময় প্রয়োজন পরিবারের পরিপূর্ণ ভালোবাসা, যত্ন, এবং সহানুভূতি। আর এই যত্ন হতে হবে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে। আর সেই বিজ্ঞানসম্মত তথ্যই তুলে ধরার চেষ্টা করলাম এই লেখায়।

আশা করি এই তথ্যগুলো আপনাদের কাজে আসবে। আপনার পরিবার-পরিজনদের মধ্যে মা হতে চান বা মা হতে চলেছেন এমন কেউ থাকলে তাকে ও তার পরিবারকে এই লেখাটা পড়াতে পারেন। এতে করে তারাও সচেতন হতে পারবেন। এতোক্ষণ সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা জানিয়ে শেষ করছি। (1214)

Thanks

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
Comment মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url