আমানত কত প্রকার ও কি কি এবং সেরা ৮ প্রকার আমানত

আমানত ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট এবং আমানতের খেয়ানত করলে অনেক বড় শাস্তি রয়েছে। সেজন্য আমানত সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য আমানত কি, আমানত কত প্রকার, আমদের খেয়াল করলে কি হয় ইত্যাদি। কোরআন এবং হাদিসের আলোকে জানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

image

সম্পূর্ণ কনটেন্টি পড়ুন আশা করা যায় আপনার চাহিদার চাইতে বেশি কিছু পাবেন। কেননা বুদ্ধিমানদের জন্য কোরআন এবং হাদিসের আলোকে জ্ঞান রয়েছে।

সূচিপত্র: আমানত কত প্রকার ও কি কি এবং আমানত প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়

ইসলামিক

আমানত অর্থ কি, আমানত কি, আমানত কাকে বলে?

আমানত একটি আরবি শব্দ, আমিনুর থেকে উৎপত্তি। আমানত শব্দের অর্থ -বিশ্বস্ততা, আস্থা, নিরাপত্তা, তত্ত্বাবধান, আশ্রয় ইত্যাদি।

আল্লাহ প্রদত্ত সমস্ত কিছুই বান্দার কাছে আমানত। আমানত (ইংরেজি: Deposit) নগদ সমতুল্য কোন মূল্যবান সম্পদকে। যে সম্পদ কোন ব্যক্তি কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে গচ্ছিত রাখা। যেকোনো ব্যক্তি যেমন: চেয়ারম্যান, মেম্বার, মোড়ল, রহিম, করিম ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন সোনালী ব্যাংক, আশা ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক ইত্যাদি।

অতি সহজ ভাবে বলা যায় আপনার এক লক্ষ টাকা আপনার ভাইয়ের কাছে রেখেছেন। এই এক লক্ষ টাকা আমানতের টাকা।

আমানত কত প্রকার ও আমানতের প্রকারভেদ

আমানতদারী একটি মহৎ গুণ। সব ব্যাপারে আমানতদারী রক্ষা করার জন্য ইসলামের বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আমানত কত প্রকার বা আমানতের প্রকারভেদ বলতে গেলে অনেক কিছুই চলে আসবে ছোট্ট করে বলা যায়, আল্লাহ প্রদত্ত সমস্ত কিছুই বান্দার কাছে আমানত। আমানত কত প্রকার আপনাদের বুঝতে সহজ করার জন্য অল্প কয়েকটি পয়েন্ট নিচে দেওয়া হল।

  1. আর্থিক আমানত
  2. কথার আমানত
  3. গোপনীয়তা রক্ষার আমানত
  4. দায়িত্বের আমানত
  5. রাষ্ট্রীয় আমানত
  6. ন্যায়বিচার
  7. নেতৃত্ব ও পদমর্যাদা
  8. জনগণের আমানত ইত্যাদি।

আল্লাহ প্রদত্ত সমস্ত কিছুই বান্দার কাছে আমানত উপরের পয়েন্ট গুলো সহ আরো যেগুলো রয়েছে,-জীবন, যৌবন, চক্ষু, বাকশক্তি ইত্যাদি।

আমাদের সকলেরই নিজ নিজ দায়িত্ব রয়েছে সে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা আমাদের কর্তব্য। (আল্লাহ বড় ক্ষমাশীল, দয়ালু) আপনার হয়তো অনেকেই জানেন কাল কেয়ামতের ময়দানে সকলকেই নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। আমার হিসাব আপনাকে কিংবা আপনার হিসেবে আমাকে দেওয়া লাগবে না।

আমানতের খেয়ানত করলে কি হয় ? আমানতের কোরআনের আয়াত

আলহামদুলিল্লাহ, আপনারা আমানত সম্পর্কে অবগত আছেন। আমরা খুবই দুর্বল গোলাম, আমাদের মালিক আমাদেরকে আমানত সম্পর্কে কি বলছেন। আমানতের খেয়ানত করলে কি হয় সরাসরি কোরআন থেকে বোঝার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। কেননা আল্লাহ প্রদত্ত রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পথের চেয়ে উত্তম পথ আর নেই।

আল্লাহ্‌ বলেন, সূরা নিসা ০৪, আয়াত নং ৫৮

۞ اِنَّ اللّٰهَ يَاۡمُرُكُمۡ اَنۡ تُؤَدُّوا الۡاَمٰنٰتِ اِلٰٓى اَهۡلِهَا ۙ وَاِذَا حَكَمۡتُمۡ بَيۡنَ النَّاسِ اَنۡ تَحۡكُمُوۡا بِالۡعَدۡلِ​ ؕ اِنَّ اللّٰهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمۡ بِهٖ​ ؕ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ سَمِيۡعًۢا بَصِيۡرًا‏ ٥٨

অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, হকদারদের হক তাদের কাছে পৌঁছে দিতে। তোমরা যখন মানুষের মাঝে বিচার করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে কত উত্তম উপদেশই না দিচ্ছেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন। (৫৮)

সূরা: মা'আরিজ, ৭০ আয়াত নং ৩২

وَالَّذِيۡنَ هُمۡ لِاَمٰنٰتِهِمۡ وَعَهۡدِهِمۡ رٰعُوۡنَ ۙ‏ ٣٢

অর্থ: যারা তাদের আমানাত ও ও‘য়াদা রক্ষা করে। (৩২)

সূরা: বাকারা ২, আয়াত নং ২৮৩

۞ وَاِنۡ كُنۡتُمۡ عَلٰى سَفَرٍ وَّلَمۡ تَجِدُوۡا كَاتِبًا فَرِهٰنٌ مَّقۡبُوۡضَةٌ ​ ؕ فَاِنۡ اَمِنَ بَعۡضُكُمۡ بَعۡضًا فَلۡيُؤَدِّ الَّذِى اؤۡتُمِنَ اَمَانَـتَهٗ وَلۡيَتَّقِ اللّٰهَ رَبَّهٗ​ؕ وَلَا تَكۡتُمُوا الشَّهَادَةَ ​ ؕ وَمَنۡ يَّكۡتُمۡهَا فَاِنَّهٗۤ اٰثِمٌ قَلۡبُهٗ​ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ عَلِيۡمٌ‏ ٢٨٣

অর্থ: যদি তোমরা সফরে থাক এবং কোন লেখক না পাও, তাহলে বন্ধক রাখার জিনিসগুলো অন্যের দখলে রাখতে হবে, যদি তোমরা পরস্পর পরস্পরকে বিশ্বাস কর তাহলে যাকে বিশ্বাস করা হয়েছে সে যেন আমানত ফিরিয়ে দেয় এবং তার প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করে। তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না, যে ব্যক্তি তা গোপন করে, তার অন্তর পাপী। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত। (২৮৩)

সূরা: নিসা ৪, আয়াত নং ৫৮

۞ اِنَّ اللّٰهَ يَاۡمُرُكُمۡ اَنۡ تُؤَدُّوا الۡاَمٰنٰتِ اِلٰٓى اَهۡلِهَا ۙ وَاِذَا حَكَمۡتُمۡ بَيۡنَ النَّاسِ اَنۡ تَحۡكُمُوۡا بِالۡعَدۡلِ​ ؕ اِنَّ اللّٰهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمۡ بِهٖ​ ؕ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ سَمِيۡعًۢا بَصِيۡرًا‏ ٥٨

অর্থ: হে মুসলিমগণ! আল্লাহ‌ তোমাদের যাবতীয় আমানত তার হকদারদের হাতে ফেরত দেবার নির্দেশ দিচ্ছেন। আর লোকদের মধ্যে ফায়সালা করার সময় “আদল” ও ন্যায়নীতি সহকারে ফায়সালা করো।আল্লাহ্‌ তোমাদের বড়ই উৎকৃষ্ট উপদেশ দান করেন। আর অবশ্যই আল্লাহ‌ সবকিছু শোনেন ও দেখেন। (৫৮)

সূরা: আনফাল ৮, আয়াত নং ২৭

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَخُوْنُوا اللّٰهَ وَ الرَّسُوْلَ وَ تَخُوْنُوْۤا اَمٰنٰتِكُمْ وَ اَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ

হে ঈমানদারগণ! জেনে বুঝে আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করো না, নিজেদের আমানতসমূহের খেয়ানত করো না। (২৭)

সূরা: শু'আরা ২৬, আয়াত নং ১২৫

اِنِّىۡ لَـكُمۡ رَسُوۡلٌ اَمِيۡنٌ​ۙ‏ ١٢٥

অর্থ: আমি তোমাদের জন্য একজন আমানতদার রসূল। (১২৫)

আল্লাহর শাস্তি খুবই কঠিন আমাদের কারো সহ্য করার ক্ষমতা নেই। আপনারা নিজেই পড়লেন আমানতের জন্য আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও আরো বেশ কিছু জায়গায় আমানত সম্পর্কে বলা হয়েছে।

আপনারা সুরা গুলোর শানে নুযূল এবং তাফসীর পড়লে আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। এবং আমানত সম্পর্কে সঠিক নির্দেশনা পাবেন ইনশাআল্লাহ।

আমানতের হাদিস / আমানতের গুরুত্ব

আমানতের হাদিস অনেকগুলোই রয়েছে, আমরা কয়েকটি হাদিসের মাধ্যমে আমানতের গুরুত্ব এবং আমানতের খেয়ানত করলে কি হয় সে সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

সহি বুখারি: ৩৩ নং হাদিস

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত :

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটিঃ

  1. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে;
  2. যখন অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে এবং
  3. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে

এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি, আমানতের খিয়ানত করলে মুনাফিকদের কাতারে শামিল হয়ে যাওয়া। আপনারা হয়তো অনেকেই মুনাফিকদের শাস্তি সম্পর্কে অবগত আছেন।

সহি বুখারি: ২৬৮১ নং হাদিস

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত :

তিনি বলেন, আবূ সুফইয়ান (রাঃ) আমাকে খবর দিয়েছেন যে, হিরাক্লিয়াস তাকে বলেছিলেন, তোমাকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] তোমাদের কী কী আদেশ করেন? তুমি বললে যে, তিনি তোমাদেরকে সলাতের, সত্যবাদিতার, পবিত্রতার, ওয়াদা পূরণের ও আমানত আদায়ের আদেশ দেন। হিরাক্লিয়াস বললেন, এটাই নবীগণের সিফাত।

আরো পড়ুন: ইব্রাহিম আঃ এর কোরবানির ইতিহাস ও আত্মত্যাগের ৮ উদাহরণ

সহি বুখারি: ৪৩৮২ নং হাদিস

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত :

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ প্রত্যেক উম্মতের জন্য আকজন আমানতদার রয়েছে। আর এ উম্মাতের আমানতদার হল আমূ 'উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ্‌।

সহি বুখারি: ৬৪২৮ নং হাদিস

ইমরান ইব্‌নু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত :

যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে আমার যুগের লোকেরাই সর্বোত্তম। তারপর এর পরবর্তী যুগের লোকেরা। তারপর এর পরবর্তী যুগের লোকেরা। ‘ইমরান (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথাটি দু’বার কি তিনবার বললেন, তা আমার স্মরণ নেই- তারপর এমন লোকেরা আসবে যে, তারা সাক্ষ্য দিবে, অথচ তাদের সাক্ষ্য চাওয়া হবে না। তারা খিয়ানতকারী হবে। তাদের নিকট আমানত রাখা হবে না। তারা মানত করে তা পূরণ করবে না। তারা দেখতে মোটা তাজা হবে।

শেষ কথা

আলহামদুলিল্লাহ, আমরা আমানত সম্পর্কে কোরআন এবং হাদিস থেকে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছি আমরা সকলে যেন আমল করতে পারি, আমিন। আল্লাহু কিছু কিছু ভুল মাফ করেন না, এর মধ্যে একটি আমানতের খেয়ানত করা। (আল্লাহ পরম দয়ালু ক্ষমাশীল) আল্লাহ আমাদের বোধশক্তি দান করুন, এবং আমরা সকলেই নিজ নিজ আমানত রক্ষা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

ধন্যবাদ-Thanks

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
Comment মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url