এলোভেরা চুলে ব্যবহারের নিয়ম উপকারিতা ও ১০টি কার্যকরী টিপস
এলোভেরা চুলে ব্যবহারের নিয়ম সঠিকভাবে জানলে আপনারাও চুলের অনেক সমস্যা থেকে রক্ষা পাবেন। এই আর্টিকেলটি পড়লে এলোভেরা কি, এলোভেরা চুলে ব্যবহারের নিয়ম, উপকারিতা ও ১০টি কার্যকরী টিপস সহ আরো অনেক বিষয় আপনারা জানতে পারবেন।
মাথার চুলে সমস্যা অনেকেরই হয়ে থাকে। সচেতন ব্যক্তি সমস্যার সাথে আপোষ না করে তা সমাধানের চেষ্টা করেন। একজন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে এই আর্টিকেলটি পড়ুন। আশা করি আপনি এলোভেরা চুলে ব্যবহারের নিয়ম সঠিকভাবে জেনে চুলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।
সূচিপত্র: এলোভেরা চুলে ব্যবহারের নিয়ম উপকারিতা ও ১০টি কার্যকরী টিপস
- এলোভেরা চুলে ব্যবহারের নিয়ম
- এলোভেরা চুলে ব্যবহারের উপকারিতা
- এলোভেরা কারা ব্যবহার করবে
- এলোভেরা ব্যবহারে সতর্কতা
- উপসংহার
এলোভেরা চুলে ব্যবহারের নিয়ম ১০ টি কার্যকর টিপস
এলোভেরা চুলে ব্যবহারের নিয়ম ১০ টি কার্যকরী টিপস আলোচনা করা হলো:
১. আমরা সকলেই জানি চুলের যত্নে নিয়মিত তেল ব্যবহারের কোন জুড়ি নেই। ঘরোয়া পদ্ধতিতে এলোভেরা তেল তৈরি করে বা বাজার থেকে এলোভেরা তেল ক্রয় করে নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল ঘন হবে, তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাবে ও অকালে চুল পেঁকে যাবে না।
২. চুল উজ্জল ও ঝলমলে করার জন্য শ্যাম্পুর সাথে ঘরোয়া পদ্ধতিতে এলোভেরা জেল তৈরি করে বা দোকান থেকে কিনে আনা এলোভেরা জেল মিশিয়ে শ্যাম্পু করতে হবে। এছাড়া শুধু এলোভেরা পাতা থেকে সরাসরি জেল চামচ দিয়ে কুড়িয়ে ব্লেন্ড করে নিয়ে মাথার তালুতে মেসেজ করে গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত পুরো চুলে মেখে রাখতে হবে এবং এক ঘন্টা রাখার পর তা ধুয়ে নিলে চুল সুন্দর হয়। এটি নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে থাকে।
৩. একটি ডিমের কুসুমের সঙ্গে এক চা চামচ অলিভ ওয়েল ও দুই চা চামচ এলোভেরা ভালোভাবে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করতে হবে। প্যাকটি সম্পূর্ণ চুলে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রাখার পর শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্যাকটি চুলে পুষ্টি যোগায় এবং চুলের যত্নে খুবই কার্যকরী।
৪. মাথায় খুশকি হলে অ্যালোভেরা জেল এর সঙ্গে নারিকেলের তেল ও লেবুর রস মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগাতে হবে এবং কিছুক্ষণ পরে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। তাহলে আমরা সহজেই খুশকি থেকে মুক্তি পাবো
৫. বর্তমান সময়ে সবারই কাজের ব্যস্ততা থাকে, কাজের অনেক চাপ থাকে। ফলে চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য বেশি সময় পাওয়া যায় না। তাদের জন্য সহজ সমাধান দিতে পারে অ্যালোভেরা। প্রয়োজন মত এলোভেরা জেল এর সাথে তার দ্বিগুণ পরিমাণ টক দই ভালোভাবে মিশিয়ে কয়েক মিনিট মেসেজ করতে হবে। তারপর ২০ মিনিট অপেক্ষা করে সেগুলো কে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
৬. এলোভেরা জেলের সাথে সমপরিমাণ পেঁয়াজের রস মিশিয়ে মাথার ত্বকের মধ্যে ঘষতে হবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করেও মাথার খুশকি দূর হবে পাশাপাশি চুলের গোড়া মজবুত হবে।
৭. এলোভেরা চুলে ব্যবহারের নিয়ম গুলোর মধ্যে অন্যতম ১টি কার্যকরী নিয়ম হলো দুইটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর মধ্যকার তরল পদার্থ একটি বাটিতে নিয়ে তার সাথে এক চা চামচ নারিকেলের তেল এবং এক টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল একসাথে চামচ দিয়ে পাঁচ মিনিট ব্লান্ড করতে হবে। তারপর মিশ্রণটি সমস্ত চুলে মেখে বেশ কয়েক ঘন্টা রাখার পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি সপ্তাহে দুই বা তিন দিন ব্যবহার করলে চুলের রুক্ষতা দূর হবে, চুলের ফাটা ভাব দূর হবে, চুল লম্বা হবে এবং চুল পড়া বন্ধ হবে।
৮. এলোভেরা জেল, টক দই ও মধু এই তিনটির মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে কিছু সময়ে রেখে দিতে হবে। তারপর সেটা শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ঘষে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে চুল হবে আকর্ষণীয় ও স্বাস্থ্যজ্জল।
৯. এলোভেরা থেকে জেল বের করে তাতে কিছুটা পানি মিশিয়ে ব্লেন্ড করে তা একটি স্প্রে বোতলে ভরে রাখতে হবে। শ্যাম্পু করে কোথাও যাওয়ার আগে আমরা যদি আমাদের চুলটাকে আরো সিল্কি ও সুন্দর দেখাতে চাই তাহলে সেই স্প্রেটা চুলে করতে পারি।
১০. শ্যাম্পু ব্যবহার না করেও চুলে এলোভেরার জেল, নারিকেলের দুধ, নারিকেলের তেল এবং লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে আধা ঘন্টা পর চুল ধুয়ে পরিষ্কার করা যায়। এইভাবে চুল পরিষ্কারের পর ভেজা চুল গুলোকে শুকনো টাওয়েল দিয়ে ভালোভাবে মুছে বাতাসে শুকাতে হবে।
উপরিউক্ত এলোভেরা চুলে ব্যবহারের নিয়ম গুলো আমরা যদি মেনে চলি তাহলে সহজেই আমাদের চুল সুন্দর মজবুত ও লম্বা হবে।
এলোভেরা চুলে ব্যবহারের উপকারিতা
মানুষের শরীরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এলোভেরার উপকারিতা রয়েছে। এলোভেরা চুলে ব্যবহারের উপকারিতা গুলো দেয়া হল :
ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, এলোভেরার পুষ্টিগুণ চুলের যত্ন গভীর থেকে নিয়ে থাকে। এরমধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদান চুলের গভীরে পুষ্টি যুগিয়ে চুলকে করে তোলে আরো ঘন কালো উজ্জ্বল ও ঝলমলে।
এলোভেরা ব্যবহারে চুলের আদ্রতা বজায় থাকে, চুল মসৃণ হয়, চুল ফাটা রোধ হয় এবং চুল দ্রুত লম্বা করতে সাহায্য করে।
- মাথার খুশকি দূর হয়, চুলের গোঁড়া মজবুত হয়
- এলোভেরা চুল ঘন করে ও চুল পাঁকা রোধ করে
- এলোভেরা চুলের অতিরিক্ত তেল দূর করে।
- এতে ভিটামিন এ সি এবং ই আছে যা স্ক্যাল্প ইনফ্লামমেশান ও রেডিকেলস দূর করে
- ড্রাই স্ক্যাল্প এর জন্য এলোভেরা খুবই উপকারী। এটি স্ক্যাল্পকে স্বাস্থ্যকর করে এবং স্ট্রেস দূর করে
- স্ক্যাল্পের ব্লাড সার্কুলেশন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে যা হেয়ার গ্রোথ এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
- এলোভেরা ব্যবহারের ফলে চুলের ড্রাইনেস দূর হয়ে চুল সফট হয় এবং চুল ম্যানেজ করতে এটি সাহায্য করে
- এলোভেরা সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি থেকে স্ক্যাল্পকে রক্ষা করে বিধায় চুলের কালার ও শাইন বজায় থাকে এবং চুল দেখতে অনেক সুন্দর লাগে
- এলোভেরা স্ক্যাল্প এর পি এইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখে।এই ব্যালেন্স যদি ঠিক না থাকে তাহলে স্ক্যাল্প এর বিভিন্ন ধরনের ইস্যু হয় অর্থাৎ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়
- এলোভেরায় রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ক্ষমতা যা কিনা চুলের স্ক্যাল্পের যেকোনো সংক্রমণকে প্রতিহত করতে সাহায্য করে থাকে।
এলোভেরায় রয়েছে বিশেষ ধরনের ময়শ্চারাইজার যাকে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবেও তুলনা করা যায়। শ্যাম্পু করার পর ভেজা চুলে আমরা দোকান থেকে কিনে আনা বিভিন্ন ধরনের কন্ডিশনার ব্যবহার করে থাকি যা অনেক ধরনের কেমিক্যাল যুক্ত করে তৈরি করা হয়।
দোকান থেকে কেনা এসব জিনিসের চেয়ে শুধু এলোভেরা কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এভাবে এলোভেরা কে কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করলে একদিকে যেমন ফ্রেশ জিনিস ব্যবহার করা হয় অন্যদিকে সময় ও অর্থেরও অনেক সাশ্রয় হয়।
এলোভেরা কারা ব্যবহার করবে?
এলোভেরা এমন একটি ভেজষ উদ্ভিদ যাতে বিভিন্ন ধরনের উপাদান রয়েছে। যা চুলের জন্য খুবই উপকারী। এসব উপাদানের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন, এনজাইম, স্যালিসাইলিক এসিড, অ্যামিনো এসিড, এন্টি অক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ সি ই, সুগার, মিনারেল, লিগনিন, ভিটামিন বি ১২, ফলিক এসিড, কোলাইন ইত্যাদি।
এসব উপাদান চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে থাকে। অতএব যাদের চুল পড়ে যাচ্ছে, চুল রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে, ফেটে যাচ্ছে, চুল বেশি লম্বা হচ্ছে না, চুল পাতলা ও চুল ঘন করতে চাচ্ছে, চুল পেঁকে যাচ্ছে, মাথায় অনেক খুশকি থাকে, যাদের ড্রাই স্ক্যাল্প তারা যদি এলোভেরা ব্যবহার করে তাহলে আশানুরূপ ফল পাবে।
এলোভেরা ব্যবহারে সতর্কতা
এই আর্টিকেলটি পড়ার পর আমরা সকলেই বুঝতে পেরেছি যে চুলের যত্নে এলোভেরা একটি খুবই উপকারী জিনিস। তবে এ উপকার তখনই পাওয়া যাবে যখন এলোভেরা ব্যবহারের নিয়ম গুলো সঠিকভাবে মানা হবে।
এছাড়া আমরা জানি ত্বকের যত্নে এলোভেরা খুবই উপকারী। তবে এলোভেরা অনেক সময় সব ত্বকে সমান কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে না। স্ক্যাল্প ত্বকেরই একটি অংশ।
অনেকের স্ক্যাল্পে ও চুলে এলোভেরা জেল বা তেল দিলে এলার্জি হয়। তাই এলোভেরা ব্যবহারে এলার্জি আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য একটি প্যাচ পরীক্ষা করে নিতে হবে।
যদি এলোভেরা ব্যবহারে কোন প্রকার জ্বালা, চুলকানি বা অস্বস্তি বোধ হয় তাহলে সাথে সাথে তা ধুয়ে ফেলতে হবে।
দোকান থেকে কিনে আনা এলোভেরা জেল ও এলোভেরা তেল ব্যবহারের পূর্বে তার গুণগত মান যাচাই-বাছাই করে তারপর ব্যবহার করতে হবে।
চুলের ধরন বুঝে এলোভেরা ব্যবহার না করলে অনেক সময় চুল চিটচিটে বা আঠালো হয়ে যায়। সুতরাং এলোভেরা চুলে ব্যবহার এর ক্ষেত্রে আমাদের বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।
উপসংহার - শেষকথা
অ্যালোভেরা একটি প্রাকৃতিক উপাদান। যার গুনাগুন অনেক। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে আমরা যদি এলোভেরা চুলে ব্যবহারের নিয়ম ১০টি কার্যকরী টিপস গুলো মেনে চলি তাহলে চুলের অনেক সমস্যা সমাধান সম্ভব। আশাকরি এই আর্টিকেলটি যারা পড়েছেন তারা সবাই আমার সাথে একমত হবেন।
এই আর্টিকেলে যা বলা হয়েছে তা অনেকটা আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেও লিখেছি। এই নিয়ম অনুযায়ী আমি অনেক উপকার পেয়েছি। সতর্কতা অবলম্বন করে আপনারা যদি এলোভেরা ব্যবহারের নিয়ম অনুসরণ করেন তাহলে আশা করি আপনারাও উপকৃত হবেন। (1219)
ধন্যবাদ-Thanks
আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url